Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গল্প জঙ্গলবাড়ির রহস্যময় চোখ

প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আ বু তা হে র
ইদানীং জঙ্গলবাড়ির নাম সবার মুখে মুখে। হাবিবেরও কানে গিয়েছে ব্যাপারটা। মা সোজা বলে দিয়েছে, ভুলেও ওখানে যাবে না। হাবিব চুপ করে শুধু শুনে গেছে। তারও বিশেষ আগ্রহ নেই বাড়িটা নিয়ে। ভয়ও লাগে। কি দরকার অযথা বাড়িটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার। হাবিবের বন্ধুদের মধ্যে কয়েকজন অবশ্য বাহাদুরি দেখাতে গিয়ে শেষমেষ আর এগুতে পারেনি বাড়িটির দিকে।
সরকারি কলোনির ভিতর বাড়িটা। সারি সারি হলুদ রংয়ের কলোনি। ছকে আঁকা পাকা রাস্তা। বিভিন্ন রকমের গাছে ভরপুর কলোনিটি। ভিতরে বিরাট খেলার মাঠও রয়েছে। ফুটবলের মাঠ। ক্রিকেটও খেলা যায়। জঙ্গলবাড়িটা কলোনির শেষের দিকে। ওদিকের জঙ্গল যেন আরো ভারি হয়ে উঠেছে। কাটা হয় না যেন অনেকদিন। ঘাসগুলো হাত-পা ছড়িয়ে দিয়ে পাকা রাস্তাগুলোকে গ্রাস করে ফেলেছে। কেউ ওদিকটা মাড়ায় না বলে কেমন যেন গা ছমছম ভাব। জঙ্গলবাড়ির রাস্তা ধরে সোজা চলে গেলে ডান দিকের একটি কলোনির পরের কলোনিতে দুটো পরিবার থাকে। তারা আবার ডান দিকের রাস্তা ধরে অনেকখানি ঘুরে চলাফেরা করে। এদিকে আবার সাপের ভয় রয়েছে।
জঙ্গলবাড়িটা আসলে জঙ্গলবাড়ি ছিল না। ওটাও একটা কলোনি। কিন্তু ওতে কেউ থাকে না। আর থাকবে বা কীভাবে? কলোনিটায় ঢোকার কোনো দরজা নেই। মস্ত বড় এই কলোনির সামনে দাঁড়ালে গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়। কোনো দরজা নেই। ঢোকার রাস্তা ইট ঢালাই দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কলোনিটাতে অনেকদিন যাবত কেউ থাকে না। একবার চুরি হলো। হৈ চৈ পড়ে গেল। কলোনিতে চুরি! সবাই নড়েচড়ে উঠল। চোরকে ধরা চাই। কিন্তু কীভাবে? পোস্ট অফিস থেকে একটা সিন্দুক চুরি হলো। সিন্দুক নিয়ে গেট দিয়ে বের হওয়া যাবে না। তাহলে সিন্দুক কোথায়? সবার বাসায় গিয়ে গিয়ে তো খোঁজ করা সম্ভব নয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে অবশেষে তা পাওয়া গেল এই কলোনিতে। খোলা অবস্থায়। ভিতরের টাকা-পয়সা অন্যান্য জিনিস নেই। শুধু খালি সিন্দুকটা পড়ে আছে।
কিছু করার নেই। অগত্যা কলোনির মুখ বন্ধ করে দেয়া হলো। কেউ যাতে ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য এ ব্যবস্থা। কিন্তু মুখ বন্ধ কলোনিতে কিসের আনাগোনা! কেউ এদিকটায় না আসায় জঙ্গলে ভরে গেল কলোনিতে যাওয়ার রাস্তাটা। তারপর শুরু হলো নানান গল্প। একবার মধ্যরাতে কেউ যেন হাঁটছিল কলোনির নিচ তলায়। ক্যাচ ক্যাচ শব্দে দরজা খুলে গেল। তারপর হাঁটাচলার আওয়াজ। নাইট গার্ডেরা ছিল। তারা আওয়াজ শুনেছে। কিন্তু কাউকে দেখেনি। প্রায়ই শোনা যায়। নিচতলায়, দোতলায় কিংবা তার উপরের তলায়। একবারতো তৃতীয় তলায় কয়েক জোড়া চোখ জলে উঠল। নিকষ অন্ধকারে জলজল করছিল চোখগুলো। ভয়ে আত্মা শুকিয়ে যাওয়ার অবস্থা।
মুখে মুখে ফিরছিল গল্পগুলো। ভয়ও বাড়তে থাকল। কেউ আর যায় না ওদিকটায়। কিন্তু নাইট গার্ডেরা কেন জানি মহা আনন্দ নিয়ে ওদিকে গার্ড দিতে যায়। যাওয়ার জন্য রীতিমতো তারা প্রতিযোগিতা শুরু করে। বিষয়টি কেমন যেন গোলমেলে লাগল। এমন ভুতুড়ে জায়গায় দিনেও কেউ যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না, সেখানে নাইট গার্ডদের উৎসাহ সবার চোখে পড়ল। তারপর শুরু হলো অভিযান। নাইট গার্ডদের অনেকেই নজরে রাখতে শুরু করল। কেউ কেউ রাতের বেলায় দূর থেকে তাদের উপর নজরদারি শুরু করল। বেশ কয়েকদিন এভাবেই গেল। তারপর ফলাফল বের হলো। ওদিকটায় কলোনির সংখ্যা কম হওয়াতে গাছপালার সংখ্যাই বেশি ছিল। তারপর মানুষের আনাগোনা কম হওয়াতে বাগানগুলো রীতিমতো বনে পরিণত হলো। বেশিরভাগই ফলের গাছ। নারকেল গাছ আছে অনেকগুলো। এছাড়াও আম, কাঁঠাল, লেবুসহ অনেক গাছ। কোনো না কোনো গাছে সারা বছরই ফল থাকে। আর এই ফলের লোভ সামলাতে পারছিল না গার্ডগুলো। রাতের বেলা চলে ফল চুরির ধুম। জঙ্গলবাড়ির ভয়ানক এই বিষয়গুলো যেন তাদের স্পর্শই করত না।
একদিন বিকালে হাবিব তার বন্ধুদের সাথে খেলার মাঠের কাছেই বসেছিল। হাবিব তুই শুনেছিস ইদানীং নাকি জঙ্গলবাড়ির উপরের তলাতেও আনাগোনা বেড়েছে। কোনো বাতাস নেই তারপরও হঠাৎ করে দরজা বন্ধ হয়ে যায়। (অসমাপ্ত)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গল্প জঙ্গলবাড়ির রহস্যময় চোখ
আরও পড়ুন