Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হাজার মানুষ প্রবাসে পাল্টে গেছে গ্রামের চিত্র

করোনার থাবায় আজ প্রবাসীদের মুখে হতাশার ছাপ

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০২০, ৪:১৬ পিএম

এক সময়ের চরম অভাবে দিন যাপন করতো যে গ্রামের মানুষ গুলো আর আজ সেই গ্রামের কিছুতেই শহুরে ছাপ। গড়ে উঠেছে নানা ডিজাইনের বিলাস বহুল আলিশান বাড়ি। পাল্টে গেছে মানুষের রুচির সাথে জীবনযাত্রাও। আর এটা সম্ভব হয়েছে গ্রামটি থেকে এক হাজারের বেশি কর্মক্ষম মানুষ প্রবাসে রয়েছেন। তাদের পাঠানো টাকায় পাল্টিয়েছে গ্রামটির অতীত চিত্র। শুধু নিজেদের গ্রামই নয়। তাদের অর্জিত রেমিট্যান্স দেশের উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে। কিন্ত বিশ্বব্যাপি মহামারী করোনার থাবায় সেই গ্রামটিতে আজ হতাশার ছাপ পড়েছে। কেননা ছুটিতে বাড়ি আসা প্রায় শতাধিক রেমিট্যান্স যোদ্ধা ফ্লাইট বন্ধ থাকায় আর কর্মস্থলে যেতে পারছেন না। এদিকে তাদের মধ্যে পাসপোর্ট ভিসার মেয়াদও অনেকের শেষ হয়ে গেছে। কর্মস্থলের কোম্পানীর নিকট পাওনা বেতনের টাকা না পেলেও বাড়িতে বসে কেউ কেউ মোবাইল ম্যাসেজে চাকরী হারানোর চিঠি পেয়ে যাচ্ছেন। ফলে তাদের মধ্যে হতাশা দানা বাধতে শুরু করেছে। এমন অবস্থা বিরাজ করছে প্রবাসী অধ্যুষিত ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের দামোদরপুর গ্রামে। ছুটিতে আসা প্রবাসীরা তাদের পাওনা বুঝে পেতে রি এন্ট্রি ভিসার (৩ মাসের ভিসা) ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকারী হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।
ওই গ্রামের বয়োবৃদ্ধ আলহাজ্ব আক্কাচ আলী জানান, গ্রামটি থেকে এবং এ উপজেলা থেকে তিনিই প্রথম ১৯৮০ সালে শ্রম বিক্রি করতে লিবিয়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে ২ বছর থাকার পর বেতন কম হওয়ায় ফিরে এসে ৬ মাস পরে ১৯৮২ সালের মাঝামাঝিতে সৌদি আরব যান। এ থেকেই শুরু। পরে গ্রামের মসলেম উদ্দীন, ইসমাইল হোসেনসহ আরও বেশ কয়েকজনকে তিনি নিয়ে যান। তারা এসে আবার স্বজনসহ গ্রামবাসীদের বিদেশে কাজের জন্য নেয়া শুরু করেন। এভাবে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে প্রবাসীদের সংখ্যা। গ্রামের অনেকেই কর্মক্ষম যুবকদের প্রবাসে পাঠাতে কাজ করেছেন। তবে এ কাজে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছেন গ্রামের সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম।
কিন্ত নিরাশার গল্প শোনালেন ওই গ্রামের খোরশেদ আলম,সাড়ে ৪ বছর আগে তিনি কাতারে গিয়েছিলেন। প্রায় ৯ মাস আগে ছুটিতে বাড়িতে এসে আর যেতে পারেননি। কর্মস্থানের কোম্পানীতে তিনি বাংলাদেশী প্রায় ৮ লাখ টাকা পাবেন। এখন মালিকপক্ষ মোবাইল ফোনও রিসিভ করছেন না। পরিশ্রমের মাধ্যমে ওই দেশের কোম্পানীতে জমানো টাকা পাওয়া নিয়ে পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।
মালয়েশিয়া প্রবাসী শামছুল আলম জানান, ১১ বছর মালেয়েশিয়ায় ছিলেন। ছুটিতে বাড়ি এসে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় এখন আর যেতে পারছেন না। কোম্পানীতে বাংলাদেশী সমমানের প্রায় ১২ লাখ টাকা পাবেন। এদিকে ভিসা পাসপোর্টের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। তার মত এমন জটিলতায় পড়েছেন ছুটিতে আসা দেশের অনেক প্রবাসীই। এখন সরকারী হস্তক্ষেপ ছাড়া তাদের এ পাওনা টাকা উদ্ধারের কোন পথ নেই।
সাইদুর রহমান জানান, তিনি দুবাইতে ছিলেন। ছুটিতে বাড়ি এসে আর যেতে পারেননি। আশা ছিল তার করনা পরিস্থিতি একটু সাভাবিক হলে যেতে পারবেন। কিন্ত কোম্পানীর পক্ষ থেকে কয়েকদিন আগে মোবাইল ম্যাসেঞ্জারে ক্যানসেল লেটার পাঠানো হয়েছে। ফলে সব আশা শেষ হয়ে গেছে। তিনি হতাশাজড়িত কণ্ঠে বলেন, কোম্পানীতে আড়াই লাখ টাকা পাবেন। ব্যাংক একাউন্টও ওই দেশে। সরকারী হস্তক্ষেপ ছাড়া ওই টাকাও পাবেন না।
ঝিনাইদহ জেলা কর্মসংস্থান ও শ্রম অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সবিতা রানী মজুমদার জানান, কোন গ্রামের মানুষ শ্রমশক্তি রপ্তানীতে এগিয়ে এমন হিসাব এই মুহুর্তে তিনি বলতে পারছেন না । মহামারীর বিশেষ পরিস্থিতির কারনে প্রবাসীদের পাওনাদীসহ সকল বিষয় নিয়ে তারা ডাটা এন্ট্রির কাজ শুরু করেছেন। ক্ষতিগ্রস্থরা প্রয়োজনে ঋন নিয়ে এদেশেও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কিছু করতে পারবেন। কাজেই হতাশ হওয়ার কিছু নেই।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ