Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২১ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১ এএম

বিশ্বের কোনো কোনো দেশ করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখাতে সক্ষম হলেও বেশিরভাগ দেশ ও অঞ্চল এখনো করোনা ঝুঁকিমুক্ত নয়। আগামী বছর নাগাদ একটি সফল ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ মাস্ক পরিধান, সাবান-সেনিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া এবং স্বাস্থ্যসুরক্ষার প্রয়োজনীয় পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করার বিকল্প নেই। সীমিত টেস্ট এবং নজরদারির মধ্যে এখনো সরকারি হিসেবেই দেশে প্রতিদিন প্রায় দেড়-দুইজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং গড়ে ২৫-৩০ জন মারা যাচ্ছে। কিন্তু মানুষের অসচেতনতা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, এখন দেশে বুঝি করোনাভাইরাসের আর কোনো ঝুঁকি নেই। রাস্তায়, বাজারে, গণপরিবহনে বেশিরভাগ মানুষ এখন নিরাপদ দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। সরকার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করলেও তা মানা হচ্ছে না। অথচ করোনার শুরুতে যখন দিনে দু’চারজন করোনায় মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যেত এবং সীমিত আকারে করোনা পরীক্ষায় স্বল্প সংখ্যক রোগী শনাক্ত হতো তখন করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক, সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার এক ধরনের প্রতিযোগতা লক্ষ্য করা গেছে। এ কথা সত্য, করোনা সংক্রমণের হার আগের চেয়ে কিছুটা হলেও কমেছে। তবে এটি যে কোনো সময়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক ও প্রাণঘাতী আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

গত শীতে প্রথম চীন থেকে ইউরোপে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল। শীতের তীব্রতা হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে এর সংক্রমণ হারের তীব্রতাও হ্রাস পেয়েছিল। পশ্চিমা দেশগুলোতে ইতিমধ্যে শীত আসতে শুরু করায় দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ বা সেকেন্ড ওয়েব শুরুর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কোথাও কোথাও সেকেন্ড ওয়েভের প্রাদুর্ভাব পেরিয়ে কিছুটা স্তিমিত হওয়ার পর এখন থার্ড ওয়েব বা তৃতীয় দফা সংক্রমণ ঠেকানোর প্রস্তুতির কথাও বলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারের শীর্ষ মহল থেকে আগামী শীতকালে বাংলাদেশে সেকেন্ড ওয়েব করোনা সংক্রমণের আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এবং স্বাস্থ্যবিধি ও সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার উপর বাড়তি জোর দেয়া হচ্ছে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক-সামাজিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আগাম সতর্কতা, প্রতিরক্ষা ও বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলার উপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের শিল্পোৎপাদন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান তথা অর্থনৈতিক কর্মকাÐ সচল রাখা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। শিল্পখাতের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল এবং শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এখনি কার্যকর উদ্যোগ নেয়া অপরিহার্য। এদিকে করোনার শুরু থেকেই দেখা যাচ্ছে, করোনা সুরক্ষায় ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ সুরক্ষা সামগ্রী যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শুধু রাজধানীতেই প্রতিদিন ২০৬ মেট্রিক টন করোনাবর্জ্য উৎপাদিত হয়। এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্য যথাযথভাবে অপসারণের উদ্যোগ না থাকায় তা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। জরুরি ভিত্তিতে নিয়মিত এসব বর্জ্য অপসারণ না করলে করোনা সংক্রমণের গতিকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

সরকারি হিসেবে দেশে শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীর সংখ্যা প্রায় চার লাখ। প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার মানুষ নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। এটি এখনো উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে। এহেন বাস্তবতা সামনে রেখে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সাধারণ মানুষের ঢিলেঢালা গা ছাড়া ভাব থাকা কোনোভাবেই সমীচিন নয়। করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে সবকিছু বন্ধ করে আবারো লকডাউনে ফিরে যাওয়া আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে করোনা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জোরদার করা ছাড়া গতি নাই। অথচ সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি ও সুরক্ষা ব্যবস্থা উপেক্ষা করার যে প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামলানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন উন্নয়নমূলক কর্মকাÐে পড়বে। এমতাবস্থায় শীতে দ্বিতীয় ধাপের করোনা সংক্রমণের যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা শুরু হলে দেশের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এমতাবস্থায় আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে সরকারকে যেমন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, তেমনি ব্যাপকহারে জনসচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে ও গণপরিবহনে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার পাশাপাশি মাস্ক পরিধানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো ধরনের শৈথিল্য প্রদর্শন করা যাবে না।

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্ব

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন