Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভাঙনে বিলীন ১৩ প্রাইমারি স্কুল

কুড়িগ্রামে পাঁচ দফা বন্যা আড়াই হাজার শিশুর লেখাপড়া অনিশ্চিত

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে | প্রকাশের সময় : ২১ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১ এএম

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বিদ্যালয় বন্ধ, তার ওপর পাঁচ দফা বন্যা। বন্যায় নদ-নদীর ভাঙনে এ বছর কুড়িগ্রামে পাঁচ উপজেলার ১৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ফলে নদী তীরবর্তী আড়াই হাজার শিশুর লেখাপড়া প্রায় লাটে ওঠার উপক্রম।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৫ দফা বন্যায় সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে ফুলবাড়ী উপজেলার মেখলিরচর খন্দকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নদীগর্ভে চলে যায়। মাঝ নদীতে ডুবে আছে স্কুল ভবন। এখনও ভাঙনের তীব্রতা কমেনি। ঘরবাড়ি সরিয়ে অনেকে রাস্তার ওপর আশ্রয় নিয়েছে। আশপাশে কোনো বিদ্যালয় না থাকায় ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন অভিভাবকরা।
অভিভাবক ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘যত দিন পর্যন্ত নতুন স্কুল না হয়। সে পর্যন্ত শিশুদের লেখাপড়া বন্ধ থাকরে।’ স্থানীয় অভিভাবক ভোলা মিয়া ও আশরাফ হোসেন জানান, করোনার কারণে ছেলে-মেয়েরা অনেক দিন ধরে লেখাপড়া করছে না। তার ওপর চরের এই বিদ্যালয় ভেঙে যাওয়ায় ভবিষ্যতে কীভাবে লেখাপড়া করবে, এ নিয়ে দুশ্চিন্তাায় আছেন তিনি। কেউ জমি না দেয়ায় কোথায় নতুন করে বিদ্যালয় নির্মাণ করা হবে তা ঠিক হয়নি। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩য় শ্রেণির ছাত্র আরিফুল ইসলাম ও ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী আদুরী আক্তার জানায়, স্কুলটি ভেঙে যাওয়ায় তারা অনেক কষ্ট পেয়েছে। এখন কোথায় কীভাবে লেখাপড়া করবে তা তারা জানে না।
মেখলিরচর খন্দকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর সবুর জানান, শিক্ষা অফিসে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করছেন। বরাদ্দ পেলে নতুন করে অস্থায়ী ভিত্তিতে স্কুল পুনর্নির্মাণ করা হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাঁচবার বন্যা হয়েছে। ভাঙনে বিলীন হয়েছে উলিপুর উপজেলার জুয়ান সতরা, নয়াদাড়া, খারিজা লাটশালা, চর বজরা, চিলমারী উপজেলার উত্তর চর খাওরিয়া, মন্তোলা এবং দীঘলকান্দি সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া সদর উপজেলার নন্দদুলালের ভিটা, চর কৃষ্ণপুর, রৌমারী উপজেলার ফুলুয়ার চর, বলদমারা, ফুলবাড়ী উপজেলার মেখলিরচর খন্দকারপাড়া এবং রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকিতে আছে সদরের সারডোব, ছাটকালুয়া ও রৌমারীর ঘুঘুমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এবার বর্ষা ও বন্যায় সর্বোচ্চ সংখ্যক বিদ্যালয় ভাঙনের কবলে পড়েছে। অনেক বিদ্যালয়ের মালামাল ও ভবন নদীতে চলে গেছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে গড়ে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। সেই হিসাবে প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থীর লেখাপড়া অনেকটা অনিশ্চিত।
অবশ্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া অব্যাহত রাখতে অস্থায়ী ভিত্তিতে বিদ্যালয় নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ছয়টি বিদ্যালয় পুর্ননির্মাণের জন্য অ্যাডুকেশন ইন ইমার্জেন্সি (জরুরি) খাত থেকে তিন লাখ করে টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বাকিগুলোর জন্যও বরাদ্দ পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ক্যাচমেন্ট এলাকায় স্থানীয়দের সহায়তায় জমি নিয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে এসব স্কুল পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ