Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অবিবাহিত মফিজ হয়ে যান ‘বিবাহিত’ জালিয়াত চক্রের কবলে আইনজীবী

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০০ এএম

জাল-জালিয়াতির বহু মামলায় বাদী-বিবাদীর পক্ষে লড়েন অ্যাডভোকেট মফিজুল ইসলাম।তার যুক্তি-তর্কের ভিত্তিতে শাস্তি হয়েছে অনেক জালিয়াতের। কিন্তু এবার তিনি নিজেই পড়েছেন এক জালিয়াতচক্রের খপ্পরে। সংঘবদ্ধ চক্রের কারণে তিনি সামাজিকভাবে হেয় হয়েছেন। হাজতবাস করেছেন। তার প্রতি নিপতিত হয়েছে নিজ পরিবারের সন্দেহের চোখ। তবে সকল নাটকীয়তা আর বৈরী পরিস্থিতি মোকাবেলা করে তিনি এখন ক্লান্ত। তাই নিস্তার চাইছেন অচ্ছেদ্য জালিয়াতচক্রের নাগপাশ থেকে। স্বীয় দুর্বিষহ জীবনের বর্ণনা দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলন করেন মফিজুল ইসলাম। সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে ‘ল রিপোর্টার্স ফোরাম’ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় এ সংবাদ সম্মেলন। এ সময় সুপ্রিম কোর্ট বারের অ্যাডভোকেট এমএম আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। মফিজুল ইসলাম জালিয়াতির প্রমাণাদি তুলে ধরে চক্রের স্বরূপ উন্মোচন করেন। হালের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এ এখনও যে ‘সব সম্ভব’র দেশই রয়ে গেছে- সেটি প্রতিভাত হয় তার অভিজ্ঞতায়। সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট মফিজুল ইসলাম ফারাবী জানান, খুলনার কয়রা উপজেলার মসজিদকুড় গ্রামের মনিরুজ্জামান মনু জালিয়াতচক্রের হোতা। এ চক্র ‘অবিবাহিত’ মফিজুল ইসলামকে ‘বিবাহিত’র তকমা দিয়েছে। বিয়ের দিন ‘প্রথম স্ত্রীর মর্যাদা’ দাবি করে বাড়ি পাঠিয়েছে রাবেয়া পারভীন নাম্মী এক নারীকে। মফিজুল ইসলামের নব বিবাহিতা স্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হয়েছে ভুয়া কাবিনামা। এ পরিপ্রেক্ষিতে মানহানি মামলা করেন মফিজুল। পরে মফিজুলের বিরুদ্ধে ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে কারাগারে পাঠানো হয় তাকে। একটি ভুয়া কাবিননামার ভিত্তিতে সৃষ্টি করা হয় ৩টি ভুয়া মামলা। ভুয়া কাবিননামা,ভুয়া মামলা,ভুয়া ওয়ারেন্ট এবং মামলার নথি গায়েব করে দেয়ার নেপথ্যে কাজ করেছে মনুর নেতৃত্বাধীন শক্তিশালী প্রতারক ও জালিয়াতচক্র। একই উপজেলার বাবুরাবাদ গ্রামের মরহুম এন্তাজ গাজীর ছেলে আব্দুর রাজ্জাক গাজী,তার বোন রাবেয়া পারভীন, তাদের সহোদর দুই পুলিশ কর্মকর্তা, একজন ভুয়া নিকাহ রেজিস্ট্রার এবং খুলনা নারী-শিশু আদালতের পিপি, পেশকার মো.দাউদ, তার সহকারি সফররাজ, কয়রা থানার সাবেক ওসি আলী আজম, একই থানার এসআই মো.ছিদ্দিক, ডা.নিজামুল হক সানার ছেলে মো. রেন্টুর এই জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানান মফিজুল ইসলাম। ঘটনার শুরু ২০০৮ সালের ১১ ডিসেম্বর। খুলনা কয়রা উপজেলার মসজিদকুড় গ্রামের মরহুম মোকতার আলী সানার ছেলে অ্যাডভোকেট মফিজুল ইসলাম। তার চাচাতো ভাই মনিরুজ্জামান মনু। জমি-জমা নিয়ে বিরোধ তাদের। ঘটনার দিন বিয়ে সম্পন্ন করে নববধূ নিয়ে মাত্র ঘরে প্রবেশ করেন মফিজ। পরদিন সকালে মনু, তার সহযোগী বাবুরাবাদ গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক গাজী তার বোন রাবেয়া পারভীন ‘স্ত্রী’ দাবি নিয়ে এসে হাজির। নববিবাহিতা স্ত্রীর কাছে নিজেকে ‘অবিবাহিত’ প্রমাণ করতে বহু কাঠ-খড় পোহাতে হয় তাকে। পরদিন ১৩ ডিসেম্বর কয়রা আদালতে মনু গংদের আসামি করে মানহানি মামলা করেন মফিজ। এ প্রেক্ষিতে মনু-রাবেয়া পারভীন গং সেবছর ২৩ ডিসেম্বর খুলনা সিএমএম আদালতে সি.আর. মামলা দায়ের করে। এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় একটি জাল কাবিননামা। জাল কাবিননামার ভিত্তিতেই ২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারি কয়রা থানায় নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ)/৩০ ধারায় দায়ের করে আরেকটি মামলা।

গোপনে দায়েরকৃত এ মামলায় মনু গং নিজের দুই সহোদর পুলিশের সহযোগতায় মফিজের বিরুদ্ধে কাস্টডি ওয়ারেন্ট (সি.ডবিøউ) ইস্যু করে। এ ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে তিনি কয়েকদিন হাজতবাস করেন। জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি ফকিরহাট জুডিশিয়াল কোর্টে পাল্টা মামলা করেন মনু গংয়ের বিরুদ্ধে। মামলায় ব্যবহৃত কাবিনামার সঠিকতা যাচাই করত গিয়ে দেখা যায়, ‘মো.আব্দুল কাইয়ুম মোল্লা,পিতা-মৃত আব্দুর রহিম মোল্লা,৩য় গলি, শেরে বাংলা রোড, খুলনা’র নামীয় কোনো নিকাহ রেজিস্ট্রার নেই। খুলনা জেলা রেজিস্ট্রার জানান,এ নামে কোনো নিকাহ রেজিস্ট্রার ওই এলাকায় নিয়োগ দেয়া হয়নি। কাইয়ুম মোল্লা খুলনা সিটি করপোরেশনের ২৪ নং ওয়ার্ডে নিজেকে কাজী পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করছেন।

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জালিয়াতচক্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ক্লান্ত অ্যাডভোকেট মফিজুল ইসলাম এখন জালিযাত চক্রের কাছ থেকে আইনি প্রতিকার চান সংবাদ সম্মেলনে। এ বিষয়ে তিনি আইন ও বিচার বিভাগ এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।



 

Show all comments

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জালিয়াত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ