Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সিরিয়ার শরণার্থীদের ত্রাণ সহায়তায় কয়েকশ’ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি

প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ার শরণার্থীদের জরুরি সাহায্যের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে লন্ডনে ভিন্ন ধরনের এক সম্মেলনে শ’ শ’ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দাতারা। গত বৃহস্পতিবার সম্মেলন উদ্বোধন করে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, জীবন রক্ষাকারী সাহায্যের ভয়াবহ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। শরণার্থীদের সাহায্যার্থে জার্মানি ও যুক্তরাজ্য যথাক্রমে দুইশ’ ৬০ কোটি ডলার এবং একশ’ ৭০ কোটি মার্কিন ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে ৯০ কোটি ৫০ লাখ ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি। এ দাতা সম্মেলনের লক্ষ্য শরণার্থীদের জন্য নয়শ’ কোটি মার্কিন ডলার সাহায্য উত্তোলন করা। সম্মেলনে ক্যামেরন এবং জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন উভয়ই সিরিয়ার শিশুদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেইসঙ্গে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই সিরিয়ার প্রতিটি শিশুকে শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। পূর্ববর্তী খবরে বলা হয়, সিরিয়ায় পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধে শরণার্থী হওয়া লাখ লাখ মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাতে আবারো সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। গত বৃহস্পতিবার লন্ডনে শুরু হওয়া এই সিরীয় সহযোগিতা সম্মেলনে ৬০টি দেশের প্রতিনিধি এবং ৩০ বিশ্বনেতা অংশ নিয়েছেন। সম্মেলনের সূচনায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ত্রাণের জন্য অর্থের অপ্রতুলতার কথা তুলে ধরে সাহায্যের আবেদন জানান। এদিকে, এই সম্মেলন শুরুর আগের দিন বুধবার জেনেভায় সিরীয় শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর পাল্টাপাল্টি দোষারোপ চলছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স অভিযোগ করেছে, আসাদ সরকারই আলোচনা ভ-ুল হয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী। অন্যদিকে, দামেস্ক এই শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার দায় চাপিয়েছে সউদি আরব, তুরস্ক এবং কাতারের ওপর। লন্ডনে এই সিরীয় সহযোগিতা সম্মেলনে ৯ বিলিয়ন ডলার সাহায্য পাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আয়োজকরা। সিরিয়ায় আটকেপড়া মানুষ এবং বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হওয়া সিরিয়ানদের জন্য এই অর্থ ব্যয় করা হবে। অনেক বিশ্বনেতাই অংশ নিচ্ছেন এবং ধারণা করা হচ্ছে, তারা প্রত্যেকেই নিজ দেশের হয়ে সিরীয় শরণার্থীদের জন্য বড় অঙ্কের সহায়তার কথা ঘোষণা করবেন। সম্মেলনের সূচনায় এদিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, সিরীয় শরণার্থীদের জীবন বাঁচাতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে অর্থ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক অপ্রতুল। ধারণা করা হচ্ছে, সম্মেলনের শেষে তিনি ব্রিটেনের পক্ষে ২০২০ সাল পর্যন্ত নতুন করে আরো ১.২ বিলিয়ন পাউন্ড অর্থ সাহায্যের ঘোষণা করতে পারেন। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনও গত বৃহস্পতিবার লন্ডনের ওই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। তিনি তার বক্তৃতায় সিরিয়ার শরণার্থী শিশুদের জন্য আগামী একমাসের মধ্যেই শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন। প্রতিবেশী দেশগুলোয় অবস্থানরত সিরীয় শরণার্থীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে এই ধরনের সহায়তা সম্মেলন এই নিয়ে চতুর্থবারের মতো আয়োজিত হচ্ছে। এখানে প্রতিশ্রুত সাহায্যের অর্থ জাতিসংঘ এবং শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া দেশগুলোর মধ্যে বণ্টন করা হবে। একটি সূত্রে জানা গেছে, এই সম্মেলনে ইইউ সিরীয় শরণার্থীদের জন্য নতুন করে আরো ২.২ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিতে পারে। এর আগে ২০১৫ সালে তারা ১.১ বিলিয়ন ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, বরং সময়মতো প্রতিশ্রুত অর্থ সাহায্য ছাড় করার ব্যাপারে এবার গুরুত্বারোপ করেছে জাতিসংঘ। এদিকে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরা ফ্যাবিয়াস আলেপ্পো ঘিরে হামলা চালিয়ে আলোচনা বানচাল করার জন্য দামেস্ক ও রাশিয়াকে দায়ী করে বলেছেন, দাতাগোষ্ঠীর সম্মেলনে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো তাদের পদক্ষেপের বিষয়ে গভীর আলোচনা করবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, অর্থপূর্ণ আলোচনা চলাকালে সিরীয় সরকারের আগ্রাসী আচরণই বলে দেয়, তারা আলোচনায় আন্তরিক নয়। রুশ বিমান হামলার সহায়তায় সিরিয়া তুরস্ক সীমান্ত থেকে তাদের দ্বিতীয় শহরে গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ লাইন বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর জাতিসংঘ গত বুধবার শান্তি আলোচনা স্থগিত করে। আলোচনায় অংশ নেয়া প্রধান বিরোধী গ্রুপগুলো বলছে, সরকারি বাহিনীর বোমা হামলা বন্ধ এবং পুনর্দখলকৃত শহরগুলোতে ত্রাণ সরবরাহের সুযোগ না দেয়া পর্যন্ত তারা জেনেভা আলোচনায় ফিরবে না। জাতিসংঘ বিশেষ দূত স্টেফান ডি মিস্টুরা বলেন, আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি আলোচনা পুনরায় শুরু হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আলোচনা ব্যর্থ কিংবা শেষ হয়ে যায়নি। তিনি এ আলোচনা সফল করতে সবপক্ষকে কঠোরভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। কিন্তু সিরীয় সরকারের পক্ষের প্রধান আলোচক বাশার আজ জাফরি শান্তি আলোচনা স্থগিতের জন্য বিরোধীদের পূর্বশর্তকে দায়ী করেছেন। জেনেভায় সিরিয়া বিষয়ক শান্তি আলোচনা সাময়িকভাবে স্থগিত হওয়ার জন্য সৌদি আরব, তুরস্ক এবং কাতারকে দায়ী করেছে দামেস্ক। জাতিসংঘে নিযুক্ত সিরিয়ার রাষ্ট্রদূত বাশার আজ-জাফরি বলেছেন, আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার দায়িত্ব সউদি আরব, তুরস্ক এবং কাতারকে নিতে হবে। কারণ, সিরিয়ার বিরোধী গোষ্ঠীকে সত্যিকার অর্থেই এসব দেশ পরিচালনা করছে। সিরিয়ার প্রধান বিরোধী গোষ্ঠী এইচএনসি তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আলোচনায় ফিরবে না, এমন ঘোষণা দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সিরিয়ার রাষ্ট্রদূত জাফরি বলেছেন, বিরোধী দল আলোচনার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়। তিনি অভিযোগ করেন, সুইজারল্যান্ডে আসার পর থেকেই জাতিসংঘের বিশেষ দূতের সঙ্গে আন্তরিকতা নিয়ে আলোচনায় বসতে অস্বীকার করেছে এইচএনসি। আল-জাজিরা, প্রেসটিভি, রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিরিয়ার শরণার্থীদের ত্রাণ সহায়তায় কয়েকশ’ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ