Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মরা পদ্মায় চলবে পণ্যবাহী জাহাজ

রাজশাহী ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২১ অক্টোবর, ২০২০, ২:৪৫ পিএম | আপডেট : ৩:২৭ পিএম, ২১ অক্টোবর, ২০২০

মরা পদ্মায় জাহাজ চলবে। পণ্য আনা নেয়া হবে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে। পণ্য পরিবহনে হবে সাশ্রয়ী। আর খানিকটা হলেও ফিরে পাবে পদ্মা তার হারানো রূপ। এমনি উদ্যোগ নিয়েছে বিআইডাব্লিটিএ কর্তৃপক্ষ। গত ১২ অক্টোবর এর সাম্ভব্যতা যাচাইয়ে রাজশাহী এসেছিলেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক। সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন বিআইডাব্লিটিএ ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি দল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এনিয়ে মন্ত্রনালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে বাংলাদেশের রাজশাহী আর ভারতের ধুলিয়ান নৌরুট চালুর। রাজশাহী থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধুলয়ান পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার একটি নৌপথের অনুমোদন থাকলেও তা কার্যকর নেই। তাই রুটটি সংক্ষিপ্ত করে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ থেকে ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া নৌবন্দর পর্যন্ত আড়াআড়ি ভাবে কুড়ি কিলোমিটার পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে পন্য আনা নেয়া করবে। শুরুতে পাথর বালি খাদ্য সামগ্রী আনা হবে। অন্যদিকে এখান থেকে যাবে পাট ও কৃষিজাত পন্য। মূলত পাথর বেশী আসবে। ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশে উন্নয়ন কাজের জন্য যত পাথর ব্যবহার হয় তার বেশীর ভাগ আসে ভারত থেকে। বর্তমানে রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের মত বড় বড় প্রকল্পে ব্যবহার হচ্ছে মুর্শিদাবাদের পাকুর পাথর। যা সড়ক ও রেলপথের মাধ্যমে আসছে। সড়ক পথে আমদানী খরচে বেশী পড়ে। নৌপথে আনা গেলে খরচ কম পড়বে। 

এক সময় রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে নৌবন্দর ছিল। পদ্মা নদীর ঘাট পর্যন্ত ছিল রেল যোগায্গো ব্যবস্থা। এ নৌবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে পন্য আনা নেয়া হতো। বন্দরটি ছিল ব্যাস্ততম। দেশ ভাগের পর নৌবন্দরর বন্ধ হয়ে যায়। রেলপথও গুটিয়ে নেয়া হয়। মানুষও ভ’লে যায় এখানকার নৌবন্দরের কথা।

রাজশাহী নগরীর আলুপট্টিঘাট, ফুদকিপাড়াঘাট, কাজলার জাহাজঘাট। এমন ঘাটগুলো এখনও নাম নিয়ে বেঁচে আছে। প্রবীনরা এখনও প্রমত্ত পদ্মার ভর যৌবনের কথা স্মৃতিচারন করে বলেন এক সময় পদ্মাদিয়ে কত জাহাজ চলত। বড় নৌকা আসা যাওয়া করত। এখন সবি অতীত। সেই পদ্মা এখন মরনবাঁধ ফারাক্কার অভিশাপে বালিচরের নীচে চাপা পড়ে আর্তনাদ করছে।

১৯৭৪ সালে ফারাক্কা বাঁধ চালুর মাধ্যমে পদ্মার দফারফা করা হয়েছে। পদ্মায় পানির বদলে বালির উত্তাপ থাকে বছরের আটমাস ধরে। বালি জমতে জমতে পয়তাল্লিশ বছরে নদীর তলদেশ ভরতে ভরতে আঠারো ফুট উপরে উঠে এসেছে। নদীর বুকে মাইলের পর মাইলজুড়ে জমেছে বিশাল ধু ধু বালিচর। নদীর মূলধারা বিভক্ত হয়ে পড়েছে অসংখ্য সরু ও ক্ষীন শ্রোতধারায়। ফারাক্কা পরবর্তী সময়ে গঙ্গা অববাহিকার নদী গুলোতে নাব্য সংকটে নৌপরিবহন ব্যবস্থা ভয়ানক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাড়ে তিনশো কিলোমিটারের বেশী প্রধান ও মধ্যম নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। বছরের আটমাস পানি আটকে রাখলেও বর্ষার সময় ওপারের বন্যার চাপ সামলাতে ফারাক্কার গেটগুলো খুলে দিয়ে এপারে ডোবায়। শুকনো মওসুমে শুকিয়ে মারা আর বন্যার সময় ডুবিয়ে মারার খেলা চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন নৌরুট চালু করা ভাল খবর। তবে এজন্য ব্যাপক ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা ধরে রাখতে হবে। আর ফারাক্কার গেটও উম্মুক্ত রাখতে হবে। যাতে প্রয়োজনীয় পানির প্রবাহ থাকে।
সম্প্রতি নৌরুটের অবস্থা দেখার জন্য রাজশাহী এসেছিলেন বিআইডাব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক। নগর ভবনে সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের সাথে মত বিনিময় করেন। এসময় মেয়র ভারতের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান থেকে রাজশাহী হয়ে পাবনার ঈশ্বরদি পর্যন্ত পদ্মা নদীতে ড্রেজিং করার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীতে নাব্যতা আনা গেলে রাজশাহীতে আর্ন্তজাতিক নৌবন্দর প্রতিষ্ঠা করা যাবে। যার মাধ্যমে রাজশাহীতে ব্যবসা বানিজ্যের প্রসার ঘটবে। অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। নৌকর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, নদীতে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে রুটটি আরিচা পর্যন্ত নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে রুটটিতে পরীক্ষামূলক ভাবে পন্য পরিবহন শুরু করার পরিকল্পনার কথা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ