Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

বিশ্বব্যাংককে প্রবাসী বাংলাদেশীদের অবদানের স্বীকৃতি দিতে অর্থমন্ত্রীর আহ্বান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ অক্টোবর, ২০২০, ৮:৩১ পিএম | আপডেট : ৮:৩১ পিএম, ২১ অক্টোবর, ২০২০

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, দেশের এবং বিশ্বের অগ্রগতির প্রবাহ ধরে রাখতে আমাদের কর্মীদের কষ্ট মন্ত্রে আমি মুগ্ধ। তাই আমি অত্যন্ত খুশি হব, যদি বিশ্ব ও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের এ অর্জন বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে স্বীকৃতি পায়। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্য প্রাচ্য এবং পূর্ব এশিয়াসহ বিশ্বের প্রতিটি বড় বড় শহরে কর্মরত এ সকল কর্মীদের বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার প্রশংসা কেবলমাত্র আমাদের মানুষকে নয় বিশ্বব্যাপী সমস্ত প্রবাসী কর্মীদের উৎসাহিত করবে।

বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভার অংশ হিসেবে অর্থমন্ত্রী বুধবার (২১ অক্টোবর) আইএমফের দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্ট উয়িং শেফার; আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী আবদুল হাদী আরগান্ধিওয়াল, ভুটানের অর্থমন্ত্রী লায়নপো নামগে শেরিং, ভারতের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, মালদ্বীপের অর্থমন্ত্রী ইব্রাহিম আমির, নেপালের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. যুবরাজ খাতিওয়াদা, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহাকারী এবং দারিদ্র্য দমন ও সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ড. সানিয়া নিশতার এবং শ্রীলংকার শিক্ষামন্ত্রী প্রফেসর জি.এল.পিরিস এর সাথে এক ভার্চুয়াল গোলটেবিল সভায় অংশগ্রহন করে এ আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ সরকার পরিবার এবং শ্রমিকদের রক্ষা করতে কি কি ধরনের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে যাতে করে তাদের নেতিবাচক মোকাবেলা প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে না হয় এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, করোনার অপ্রত্যাশিত অভিঘাত থেকে উদ্ভুত প্রাসঙ্গিক বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ জানাই। আপনারা সকলেই অবশ্যই অবগত যে বাংলাদেশ বিভিন্ন দিক থেকে আলাদা বৈশিষ্ট মন্ডিত। বাংলাদেশের রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাস্তববাদী নেতৃত্ব এবং দেশে বিদেশে কঠোর পরিশ্রম করা নাগরিক। বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্যরা অনুমান করেছিল যে করোনার কারনে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী রেমিট্যান্সের পরিমাণ হ্রাস পাবে। যা বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি, বিশেষত গ্রামীণ অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে গার্হস্থ্য চাহিদা এবং প্রণোদিত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমি আনন্দের সাথে সকলকে অবগত করতে চাই যে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্সের সবসময়ে উর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখিয়েছে এবং সম্প্রতি এটি ত্বরান্বিত হয়েছে। আমরা ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমানে পরিমাণে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পেয়েছি। চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৬ দশমিক ৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স রেকর্ড হয়েছে, যা পুর্বের বছরের একই প্রান্তিকের চেয়ে ৪৯ শতাংশ বেশি। আমাদের সরকার ঘোষিত ২ শতাংশ সরাসরি নগদ প্রণোদনা নীতি এক্ষেত্রে প্রশাংসার দাবীদার। তাই এটি স্পষ্টই প্রতিয়মান হয় যে আমাদের রেমিট্যান্স মোটেও কমেনি বরং প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী আমাদের প্রায় ১১ দশমিক ৬ মিলিয়ন বাংলাদেশী নাগরিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে। মালয়েশিয়ার করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে মালয়েশিয়ায় যে সমস্ত ব্যবস্থাপক পর্যায়ে বিদেশী রয়েছেন যার ৩৭ শতাংশ শতাংশই বাংলাদেশী নাগরিক।

অর্থমন্ত্রী বলেন, তবুও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বন্ধের কারণে গৃহবন্দী অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে উদ্বেগ উপেক্ষা করা যায়না। আমাদের গত ১ এপ্রিল থেকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬৯৮ জন শ্রমিক ফিরে এসেছেন এবং এপ্রিল থেকে জুন সময়কালে কোনও নতুন শ্রমিক বিদেশে যেতে পারেনি। যদিও বিশ্বব্যাপী মোট প্রবাসী বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের তুলনায় এটি বড় সংখ্যা নয়। তারপরেও চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশী কর্মসংস্থানের মোট সংখ্যা ২ লাখ ৮৪ হাজার যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি। সাধারণত দেখা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে প্রতি মাসে প্রায় ৬০ হাজার কর্মী বিদেশে নিযুক্ত হন। আমাদের সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে কর্মীদেরকে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে চাকরি নিয়ে বিদেশে ফেরত পাঠাতে সহায়তা করে আসছে। আমরা নিশ্চিত বলতে পারি যে ইতোমধ্যে আমাদের প্রবাসী কর্মীরা বিদেশে ফিরে কাজ শুরু করছেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সরকার সামাজিক বিশেষভাবে সুরক্ষা কর্মসূচির ব্যবস্থা করেছিল। এপ্রিল এবং মে মাসে করোনার ছুটির সময়ে প্রত্যাবাসনের জন্য বিদেশে গমণকারীদের জন্য ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করা হয়। বিদেশে চাকরি হারানো প্রত্যাবাসীরা ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেটের পুনর্বাসন কর্মসূচির জন্য তালিকাভুক্ত হন এবং তাদেরকে অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা পরিকল্পনারও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। চলতি অর্থবছরে আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয় ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। ভবিষ্যতের সম্ভাব্য প্রবাস শ্রমিকদের লক্ষ্য করে একটি নির্দিষ্ট সামাজিক সুরক্ষার জন্য প্রায় ২৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ‘কর্মসংস্থান সৃষ্টি কর্মসূচি’ শীর্ষক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠার জন্য সম্ভাব্য কর্মীদের বিদেশের চাকরীটি সহজ ও দ্রুততর উপায় পেতে সহজতর করা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ