Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাংলাদেশী ইমামের হত্যাকারীকে শনাক্তের দাবি মার্কিন পুলিশের

প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের কুইন্সে বাংলাদেশী ইমামের হত্যাকারীকে সিসিটিভি ফুটেজে শনাক্ত করার দাবি করেছে মার্কিন পুলিশ। সেই হত্যাকারীকে ধরতে অভিযান পরিচালনার কথাও জানিয়েছে তারা। তবে হত্যাকা-ের নেপথ্য কারণ এখনও জানতে পারেননি বলে দাবি করছেন তারা। তবে কুইন্সের মুসলিম সম্প্রদায় একে মুসলমানবিদ্বেষের ফলাফল হিসেবেই দেখছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইউএসনিউজ.কম-এর এক প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে।
শনিবার মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বাসায় ফেরার পথে কুইন্সের ওজোন পার্ক এলাকার একটি রাস্তায় হত্যার শিকার হন যুক্তরাষ্ট্রের আল ফুরকান জামে মসজিদের ইমাম ও তার সহকারী। নিহত ইমাম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আলালা উদ্দিন আকুঞ্জি (৫৫)। তার সহকারীর নাম থারা উদ্দিন (৬৫)।
পুলিশের দাবি, ‘নজরদারি ক্যামেরা’য় বাংলাদেশী ইমামের হত্যাকারীকে শনাক্ত করতে সমর্থ হয়েছেন তারা। নিউইয়র্ক পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর হেনরি শাটনার বলেন, ‘নজরদারি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ বলছে, হত্যাকারী পেছন থেকে এসে ইমাম আর তার সহযোগীকে গুলি করে পালিয়ে যায়।’ শাটনার জানান, তার পরনে একটি ধূসর রঙের পলো শার্ট ছিল। পালানোর সময় তিনি বন্দুক হাতে নিয়েই পালিয়ে গেছেন।
শাটনারের দাবি, ‘ওই ইমাম ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে আক্রান্ত হয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে এমন কোনও ইঙ্গিত মেলেনি।’ তবে নিউ ইয়র্কের কুইন্সে বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতারা আশঙ্কা জানিয়েছেন, ইসলামবিরোধী বিদ্বেষ থেকেই ওই দুই ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। সমাবেশে তারা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বলে সেøাগান দিতে থাকেন।
যেখানে হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে, তার কাছাকাছি সংবাদ সম্মেলন করেছেন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স। ওই সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় আরেক মসজিদের নেতা কবির চৌধুরীও এ হত্যাকা-কে মুসলিমবিরোধী বিদ্বেষ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘ইম যা বলছি শুনুন: এটি ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ’। নিউ ইয়র্কের মেয়র বিল দি ব্লাসিওর সঙ্গে কাজ করেন সারাহ সাইদ। তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে মার্কিন সমাজের বন্ধন দৃঢ় করতে কাজ করেন। সারাহ বলেন, ‘আমি নিজেও একজন মুসলমান এবং মুসলমান হিসেবে আমি ভয়ের কারণটা বুঝতে পারছি। তবে এখন জরুরি হলো তদন্ত’।
ইউএস.কম এর খবরে বলা হয়েছে, সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায় এই হত্যাকা-ের নেপথ্যে অসহিষ্ণুতাকে কারণ মনে করছে। তারা মনে করছে, ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী একজন মুসলমান হওয়ার কারণে হত্যাকা-ের স্বীকার হয়েছেন ওই ইমাম। ইউএসনিউজ.কম-এর খবরে বলা হয়েছে, তাদের প্রতিবেদক কাউকে কাউকে বলতে শুনেছেন যে ধর্মীয় পোশাক পড়ে চলাফেরার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এদিকে এ ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে সন্দেহভাজন হত্যাকারীর খোঁজে অভিযান চলছে বলে দাবি করেছে তারা। সূত্র: ডেইলি মেইল, ইউএসনিউজ.কম। এ সংক্রান্ত আরো খবর পৃষ্টা ৬-এ
বার্নিকাটের শোক : দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার আশ্বাস
কূটনৈতিক সংবাদদাতা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ইমাম ও তাঁর সহকারীকে হত্যার ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। গতকাল রোববার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টুইটারে এ বিষয়ে খুদেবার্তার মাধ্যমে এ শোক প্রকাশ করেন বার্নিকাট। তিনি লেখেন, ইমাম আকুঞ্জি ও তারাউদ্দিনের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। সহিংসতায় কখনোই সমস্যার সমাধান হতে পারে না।
অন্যদিকে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে মার্শা বার্নিকাট সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মসজিদের ইমামসহ দুই বাংলাদেশী নিহতের ঘটনা দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এছাড়া এই দুই বাংলাদেশী নিহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি আরো বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মসজিদের ইমামসহ দুই নাগরিকের নিহত ঘটনাটি হৃদয়বিদারক। এই ঘটনায় সকল বাংলাদেশী নাগরিকদের প্রতি আমি সমবেদনা ও গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি বলেন, ইমাম আকুঞ্জী নিঃসন্দেহে শান্তিবাদী মানুষ ছিলেন। তবে এই ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ সিসি টিভি পর্যবেক্ষণ করছে। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত জোগাড় করছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত তদন্ত তরে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
নিউইয়র্কে দুই বাংলাদেশীর ওপর কারা হামলা করতে পারে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মার্শা বার্নিকাট বলেন, কে বা কারা কোন উদ্দেশ্যে এই দুই বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে সেটা বলা সম্ভব নয় বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা সহযোগিতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কোনো উদ্যোগ রয়েছে কি-না জানতে চাইলে মার্শা বার্নিকাট বলেন, মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা জুলহাস মান্নান ও লেখক অভিজিৎ রায় হত্যার পরে দুই দেশের তদন্ত কর্মকর্তারা একযোগে কাজ করেছে। একইভাবে পহেলা জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান হামলা তদন্তে দুই দেশ একযোগে কাজ করতে পারে।
পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে কি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে মার্শা বার্নিকাট বলেন, আগামী অক্টোবর মাসে ঢাকা-ওয়াশিংটন নিরাপত্তা সংলাপের প্রস্তুতি চলছে। আমরা এই সংলাপ সফল ও তারিখ চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা করেছি। এছাড়া নিরাপত্তা সংলাপে দুই দেশের সামরিক ও বেসামরিক নিরাপত্তা ও সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে সহযোগিতাকে প্রাধান্য দিচ্ছি।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্কের কুইন্সের ওজনপার্কে আল-ফুরকান জামে মসজিদ থেকে জোহরের নামাজ শেষে ফেরার পথে ইমাম মাওলানা আলাউদ্দিন আকুঞ্জি (৫৫) ও তাঁর সহকারী তারা মিয়া (৬৪) দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন। স্থানীয় সময় শনিবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে দুজনকে পেছন দিক থেকে গুলি করা হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় মুসলমানরা ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। একই সঙ্গে নিউইয়র্কে বসবাসকারী বাঙালিরাও এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশী ইমামের হত্যাকারীকে শনাক্তের দাবি মার্কিন পুলিশের
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ