Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভীষণ ব্যস্ত পুঠিয়ার গাছিরা আগাম খেজুরের রস সংগ্রহে পরিচর্যা শুরু

শেখ রেজাউল ইসলাম লিটন, পুঠিয়া (রাজশাহী) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৩ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১ এএম

শীত পঞ্জিকার হিসাবে এখনো অনেক দূর। প্রথম উত্তরাঞ্চল দিয়ে দেশে শীতের আগমন ঘটে। আর বিদায় নেয় ওই উত্তরাঞ্চল দিয়েই। হেমন্ত ঋতুর শুরুতেই রাতে উত্তরাঞ্চলে হালকা শীত অনুভূত হয়। আজ শেষ হচ্ছে হেমন্ত ঋতুর প্রথম সপ্তাহ। তবে গত দু’সপ্তাহ থেকেই রাতে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় মৃদু শীত অনুভূত হচ্ছে। এর ফলে খেজুর গাছের চেহারা বদলাতে শুরু করেছে।
গ্রামে খেজুরের সুমিষ্ট রস ও সুস্বাদু গুড়ের আশায় খেজুর গাছ পরিচর্যায় নেমেছেন এলাকার গাছিরা। ভালো দামের আশায় পুঠিয়ার গাছিরা আগাম খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি করতে অন্যান্য বছরের ন্যায় চলতি বছরেও মধ্য আশ্বিনের পর থেকেই ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁচি হাতে গাছিরা খেজুর গাছের আগা পরিস্কার করে রস নামানোর কাজ করছেন। সংসারে স্বচ্ছলতার আশায় দিনরাত তাদের এ নিরন্তন প্রচেষ্টা চলবে খেজুরের রস থাকাকালীন সময়। এ সময় রাজশাহী জেলার অধিকাংশ মানুষ সুস্বাদু খেজুরের গুড় উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। কারণ এই সুস্বাদু গুড় গাছিদের শীতকালীন মৌসুমি ব্যবসা। এ ব্যবসা চলে পুরো শীতকাল।

পুঠিয়া কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ২৯০ হেক্টর জমিতে খেজুর গাছ রয়েছে ২১ হাজার ৭৫০টি। এতে খেজুর গুড় উৎপাদন হয় তিন হাজার ২৪১ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। চলতি বছরও খেজুর গাছের আগাম পরিচর্যা শুরু করেছেন এ অঞ্চলের গাছিরা।
খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় গাছের উপরের দিক কেটে ফেলতে হয়। কাটা অংশের নিচে বাঁশ বা গাছের খিল লাগানো হয়। এর মাধ্যমে ফোঁটা ফোঁটা রস গাছে বাঁধা হাড়িতে পড়ে। সারারাতে হাঁড়ি রসে ভর্তি হয়।

গাছিরা ভোরে গাছ থেকে হাঁড়ি নামান। এভাবেই রস আহরণের কাজ করেন গাছিরা। আহোরিত খেজুরের রস দিয়ে পাটালি বা খুরি ও লালি দুই ধরনের গুড় তৈরি করা হয়। পাটালি বা খুরি বাজারজাত করার জন্য তৈরি করা হয়। আগাম খেজুরের গুড় তৈরি করতে পারলে বেশি লাভবান হওয়া যাবে বলে তাদের এ প্রচেষ্টা।
দড়ি, কাঁচি হাতে খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত বানেশ্বর মাড়িয়া গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক বলেন, গত সপ্তাহ থেকে খেজুরের রস অল্প অল্প নামা শুরু করেছে। প্রথম পর্যায়ে বাজারে গুড়ের আমদানি কম থাকে। তাই দামও বেশ ভালো পাওয়া যায়। এছাড়াও একাধিক কৃষক জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর খেজুুরের গুড় তৈরি করে অধিক লাভবান হওয়া যাবে।

উপজেলার বানেশ্বর, নওদাপাড়া, ভুবননগর, শাহবাজপুর, ফতেপুর, মাইপাড়া, বিড়ালদহ, শিবপুর, নয়াপাড়া, গাঁওপাড়া, বাসপুকুরিয়া, নামাজগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় খেজুরের গাছ পরিচর্যা শুরু হয়েছে। এসব এলাকার গাছিরা তাদের তৈরি গুড় পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরহাট ঝলমালিয়াহাট ছাড়াও আশেপাশের হাটগুলোতে বিক্রি করা হয়।

পুঠিয়ার উৎপাদিত সুস্বাদু গুড় এলাকার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। শীতকালে খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে পায়েস, বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন পিঠা তৈরি করা হয়।
পুঠিয়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শামসুন নাহার ভুইয়া ইনকিলাবকে বলেন, খেজুর গাছ চাষ করতে বাড়তি কোন জমির প্রয়োজন হয় না। জমির আইলে অথবা বাড়ির অঙ্গিনায় এই গাছগুলো হয়ে থাকে। উপজেলার সব এলাকাজুড়ে খেজুরের গুড় তৈরি করা হয়। গুড় তৈরিতে শত শত মানুষ কাজ করে থাকে। এর ফলে পুঠিয়ার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খেজুর

১৬ এপ্রিল, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ