Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

‘আমার ছেলে কবরে, খুনি কেন বাইরে’

রায়হানের মায়ের আমরণ অনশন ভাঙালেন মেয়র আরিফ : ছিনতাইয়ের অভিযোগীকারী গ্রেফতার আরারও ৩ দিনের রিমান্ডে কনস্টেবল টিটু

ফয়সাল আমীন | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১ এএম

মাথায় বাঁধা সাদা কাপড় হাতে তসবিহ, আর সেই সাথে পুত্র হারোনার শোকে কাতর রায়হানের মা। তিনি আমরণ অনশনে বসেছিলেন সেই বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে। হাতে রেখেছিলেন, ‘আমার ছেলে কবরে, খুনি কেন বাইরে’ লেখা ফেস্টুন। পুত্র হারানো ক্ষুব্ধ মা ঘটনার ১৫ দিনেও প্রধান অভিযুক্ত এস আই আকবর গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই ফাঁড়িতে প্রাণ গেছে আমার সন্তানের, এ ফাঁড়িতে অনশনে বসেছে আমি। আমাকেও নির্যাতন করে মেরে ফেলা হোক।

এছাড়া তিনি বলেন, গত প্রায় ১৫ দিন ধরে আশ্বাস শুনছি। এখন উদ্যোগ দেখতে চাই। আমার ছেলে হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার চাই। আমাকে আশ্বাস না দিয়ে তাদের গ্রেফতার করুন। পুত্র হারানো এ মায়ের সঙ্গে অনশনে ছিলেন, রায়হানের চাচা, চাচি, মামা, খালা ও আত্মীয়স্বজনসহ আখালিয়া এলাকাবাসী। সকাল ১১ টা থেকে চলা এই অনশন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হঠাৎ রূপ নেয় তীব্র আন্দোলনে। রায়হানের পরিবারের সদস্যরা এবং আখালিয়া এলাকার বাসিন্দারা বন্দরবাজার রাস্তা অবরোধ করে শুরু করেন বিক্ষোভ।

এদিকে, গ্রেফতার করা হয়েছে রায়হানের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগকারী শেখ সাইদুর রহমানকে। তাকে গ্রেফতার করেছে রায়হান হত্যা মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গতকাল রোববার বিকালে আদালতে মাধ্যমে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া, রায়হান মৃত্যুর ঘটনায় সাময়িক বরখাস্তকৃত কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে আবারও ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

সেই বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে আমরণ অনশনে রায়হানের মা : ‘আমার ছেলে কবরে, খুনি কেন বাইরে’ স্লোগান লেখা ফেস্টুন হাতে আমরণ অনশনে বসেছিলেন রায়হানের মা সালমা বেগম। অন্যদের হাতে থাকা ফেস্টুনে লেখা- ‘বোন বলে ডাকবে কে? আমার ভাইকে ফিরিয়ে দে’ ও ‘ফাঁসি দিয়ে প্রমাণ করো, পুলিশ নয়- জনগণ বড়’ ইত্যাদি স্লোগান। পুত্র হারানোর ১৫তম দিনে সালমা বেগমের চাওয়া- ‘আমার ছেলেকে এই ফাঁড়িতে নির্মমভাবে নির্যাতন করে মারা হয়েছে। এ ফাঁড়িতেই আমার ছেলের প্রাণ গেছে। আমিও আজ এ ফাঁড়িতে এসেছি। আমাকেও এখানে নির্যাতনে করে মেরে ফেলা হোক।’

অনশনরত রায়হানের পরিবারের সদস্যরা মাথায় কাফনের কাপড় (সাদা কাপড়) বেঁধে রাখেন। রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম বলেন, আমি যেখানে আমার আদরের ধনকে হারিয়েছি, সেখানেই আমরণ অনশন শুরু করেছি। আকবর গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অনশন চলবে।

সালমা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রশ্ন তুলেন, রায়হান নিহতের ঘটনায় বরখাস্তকৃত ৮ পুলিশ সদস্যই তো পুলিশের জিম্মায় আছেন। তাদের কেন এক সঙ্গে গ্রেফতার করা হচ্ছে না? দুজন দুজন করে আটক করে করে কি বছরের পর বছর চলে যাবে? এ জীবনে কি আমার ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারবো না? তাছাড়া ঘটনার ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও কেন ঘটনার মূল হোতা এস আই আকবরকে গ্রেফতার করছে না পুলিশ। অনশনকালে রায়হানের মা ও স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছিলো ফাঁড়িস্থল। এক পর্যায়ে অনশনরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন নিহত রায়হানের মা।

শরবত পান করিয়ে অনশন ভাঙালেন মেয়র আরিফ : পুত্র হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে রায়হানের মায়ের আমরণ অনশন ভাঙালেন সিলেট সিটি করপোরেশন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। প্রতিবাদী মানুষের উপস্থিতিতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে নগরীর ব্যস্ততম বন্দর বাজার সড়ক। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন সিলেট সিটি করপোরেশেনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে রায়হানের মাকে সান্তনা দিয়ে শরবত পান করিয়ে অনশন ভাঙান তিনি। পরে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করে অবরোধ তুলতে সমর্থ হন মেয়র আরিফ।

এ সময় মেয়র বলেন, অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগসহ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। মেয়রের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে রায়হানের মা সালমা বেগম বলেন, আমি আর আশ্বাস শুনতে চাই না। গত প্রায় ১৫ দিন ধরে আশ্বাস শুনছি। এখন উদ্যোগ দেখতে চাই। আমার ছেলে হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার চাই। আমাকে আশ্বাস না দিয়ে তাদের গ্রেফতার করুন। সারা সিলেটের মানুষ রাস্তায় নেমে আকবরকে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছে। তবু তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।

ছিনতাইয়ের অভিযোগীকারী গ্রেফতার : অবশেষে রায়হানের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতারকৃত শেখ সাইদুর রহমানের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১০ অক্টোবর রায়হানকে ধরে এনেছিলো পুলিশ। এরপর বন্দর বাজার ফাঁড়িতে অবর্নণীয় নির্যাতন, পরবর্তীতে ওসমানী হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছিল রায়হান আহমদের (২৮)।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক মহিদুল ইসলাম বলেন, গতকাল সকালে রায়হানের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগ আনা সাইদুর রহমান পিবিআই অফিসে নিয়ে আসা হয়। এরপর বিকেলে তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতারের দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

কনস্টেবল টিটু আবারও ৩ দিনের রিমান্ডে : রায়হান হত্যার ঘটনায় বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে ৫ দিনের রিমান্ড শেষে আবারও ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পিবিআই। গতকাল রোববার বেলা ৩টার দিকে টিটু চন্দ্র দাসকে সিলেট অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করেন পিবিআই তদন্ত কর্মকর্তা মুহিদুল ইসলাম। এরপর আদালতে রিমান্ড আবেদন করেন ৩দিনের। শুনানী শেষে আদালতের বিচারক জিয়াদুর রহমান রিমান্ডই মঞ্জুর করেন ৩ দিনের।

তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, টিটু চন্দ্র জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে আদালতে হাজির করে আরও ৩ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। পরে আদালতের বিচারক এই তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ২০ অক্টোবর পুলিশ লাইন্স থেকে টিটুকে গ্রেফতার করে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই। ২৪ অক্টোবর এ মামলায় গ্রেফতার হওয়া আরেক কনস্টেবল হারুনুর রশিদ রিমান্ডে রয়েছেন ৫দিনের। একটি সূত্র জানায়, তাদের দুজনের দেয়া বক্তব্যে অমিল থাকায় আবারো রিমান্ড চায় পিবিআই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রায়হান হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ