Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিপর্যয়েও রাখে সুরক্ষিত

উপকূলীয় বনভূমি মুজিববর্ষে ১০ জেলায় দশ লাখ চারা বিতরণ

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০০ এএম

বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে সারাদেশে ১ কোটি বৃক্ষরোপন কর্মসূচির আওতায় উপকূলীয় ১০টি জেলার ৪৩টি উপজেলায় প্রায় দশ লাখ গাছের চাড়া বিতরণ সম্পন্ন করেছে উপক‚লীয় বন সাকের্লের আওতাধীন ৪টি বন বিভাগ। বরিশাল সামাজিক বন বিভাগ ছাড়াও পটুয়াখালী, ভোলা ও নোয়াখালী উপকূলীয় বনোৎপাদন বিভাগের আওতায় ইতোমধ্যে এসব গাছের চারা রোপনও সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে বন অধিদফতরের কোস্টাল সার্কেলের বন সংরক্ষক। এসব চারা রোপনের ফলে উপকূলীয় এলাকা ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছাসসহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে সুরক্ষা আরো নিশ্চিত হবে। ২০০৪-০৬ অর্থবছরে ১ কোটি নারিকেল চারা উত্তোলন ও রোপন কর্মসূচির আওতায়ও উপকূলীয় এলাকায় বিপুল সংখ্যক চারা রোপন করা হয়েছিল।
বঙ্গোসাগরের কোল ঘেঁসে ৭১০ কিলোমিটার উপকূলীয় তটরেখার ১৯টি জেলার ৪৮টি উপজেলাকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষায় উপকূলীয় বনভূমি ‘ঢাল’ হিসেবে কাজ করছে। পাশাপাশি এসব বনভূমি দেশের ‘প্রাকৃতিক ভারসাম্যের রক্ষা কবজ’ হিসেবেও বিবেচিত পরিবেশবিদদের কাছে। উপক‚লীয় এলাকায় তাল গাছের চারা উত্তোলন ও রোপনের একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট। তালগাছ প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে যেমনি টেকসই, তেমনি তা বজ্রপাতের হাত থেকে জানমাল রক্ষায়ও যথেষ্ট কার্যকরী বলে ইনস্টিটিউটের বরিশাল গবেষণা কেন্দ্রের বিভাগীয় কর্র্মকর্তা জানিয়েছেন।
সরকার ইতোমধ্যে উপক‚লের ৭১০ কিলোমিটার তটরেখার ১৯টি জেলার ৪৮টি উপজেলার ৪৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারকে ‘উপকূলীয় এলাকা’ হিসেবে চিহিৃত করেছে। যা দেশের মোট আয়তনের ৩০%। মোট জনসংখ্যার ২৮ ভাগ এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করে। বিশাল এ জনগোষ্ঠী ও সম্পদ রক্ষায় উপকূলীয় এলাকায় বনায়ন অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বব্যাংক উপক‚লীয় বনায়নে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় উপক‚লভাগে এ পর্যন্ত প্রায় সোয়া দুই লাখ হেক্টর জমিতে ‘লবনাম্বুজ বন বা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট’সহ বিভিন্ন ধরনের বন সৃজন করা হয়েছে।
সম্প্রতি ১০৪ কোটি টাকায় ‘বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা চরাঞ্চলে বনায়ন’ নামে একটি প্রকল্পের আওতায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে নতুন বনায়ন ও এক হাজার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও সড়কে বৃক্ষ রোপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। বরিশাল বিভাগের ৪টিসহ উপক‚লের ১০টি জেলায় ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ বনায়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হবে। প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, পিরোজপুর, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ৪০ হাজার বসতবাড়ি বনায়ন করা হবে। তবে প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধিসহ ডিপিপি সংশোধনের সম্ভবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে সৃজিত বনভূমির কারণে দেশের বিশাল উপকূলীয় এলাকায় অনেক ভূমি উদ্ধারও সম্ভব হয়েছে। অনেক চরাঞ্চল মূল ভূ-খন্ডের সাথেও যুক্ত হয়েছে ইতোমধ্যে।
এ পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় যে বনায়ন হয়েছে, তার প্রায় ৯৫ ভাগই ছিল কেওড়া গাছ। কিন্তু এসব গাছ দ্রুত বর্ধনশীল হলেও দশ বছর বয়স থেকে কান্ড ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণে মরে যায়। পাশাপাশি উপকূলীয় বাগানে ক্রমাগত পলি পড়ে ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধি ও অবাধে গবাদিপশুর বিচরণে বনভূমির মাটি শক্ত হয়ে বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণে উপক‚লীয় এলাকায় কেওড়ার বিকল্প হিসেবে ছইলা, বাইন, সাদা বাইন, মরিচা বাইন, গেওয়া, সুন্দরী, পশুর, ধুন্দল, সিংড়া, খলসী, কিরপা, গোলপাতা, হেতাল, কাকড়া, গড়ান ও গর্জন গাছের চারা আবাদ কৌশল উদ্ভাবন করেছে বন গবেষণা ইনস্টিটিউট। তবে সাম্প্রতিককালে কেওড়া গাছের কান্ড ছিদ্রকারী স্টেম বোরার পোকার আক্রমণ প্রাকৃতিকভাবেই অনেকটা কমে গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বঙ্গবন্ধুর


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ