মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতের অর্থনীতি, করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা, বিদেশনীতি, নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং গণতন্ত্র, সবকিছুই বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে, যা বিশ্ব রাজনীতিতে একটি স্থিতিশীল শক্তি হিসাবে দেশটির বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হওয়ার পর প্রথমবারের মতো ভারতীয় অর্থনীতি একটি ঐতিহাসিক পতনের মধ্য দিয়ে চলছে যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর এবং দীর্ঘতম লকডাউন চাপিয়ে দেয়ার পরেও নয়াদিল্লি কাক্সিক্ষত ফলাফল পেতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশটিতে বর্তমানে লাখ লাখ জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এবং খুব শিগগিরই সেখানে বিশ্বের সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমণের রেকর্ড ঘটতে চলেছে।
পাশাপাশি, ভারতের হিমালয় সীমান্তের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অত্যন্ত অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে। লাদাখ অঞ্চল নিয়ে চীনের সাথে ৫ মাসেরও বেশি সময়ের সঙ্ঘাত ভারতের অর্থনীতিতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে। এ জটিলতা মোদি সরকারের কৌশলগত জ্ঞানকেও তীব্রভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশটি প্রতিবেশীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিও খুব একটা সন্তোষজনক নয়। দেশটির সামাজিক ও ধর্মীয় বিভেদ সর্বকালের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে। এর সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি কাশ্মীরকে একঘরে করে দিয়েছে এবং ভারতের সংখ্যালঘু এবং উদারপন্থীরা নিপীড়িত বোধ করছে। সরকার বিরোধী আওয়াজ এবং রাজনৈতিক বিরোধী এবং গণমাধ্যমের ওপর প্রকাশ্য আক্রমণ ভারতের গণতন্ত্রকে অবরুদ্ধ করে দিয়েছে।
আজ ভারত এমন পরিবেশ বিরাজ করছে, যেখানে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বৈচিত্র্যকে প্রকাশ্যে খর্ব করা হয় এবং ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে আপত্তি তোলা হয়। ভারতের এ বহুবিধ সঙ্কট দেশটির টেলিভিশন বিতর্ক এবং গণমাধ্যমের আলোচনাগুলি থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। বরং, গণমাধ্যমের একটি সরব অংশ জনগণকে বিষয়গুলো থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে এবং মোদি সরকারের তথাকথিত ভাবমর্যাদা রক্ষার জন্য দেশটিকে এমন সঙ্কটময় অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে। ভারতের ক্ষমতাসীনদের আদর্শিক ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা মিডিয়ার একটি অংশ বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যা নিয়ে ষড়যন্ত্র করে প্রতিদিন তার মৃত্যু নিয়ে নতুন তত্ত¡ তৈরি করে জনগণের কল্পনাশক্তিতে এক নতুন ভিলেন রোপণ করছে এবং জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করে ভারতের মূল সঙ্কটগুলি থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে রাখছে।
রাজপুতের মৃত্যু বৈচিত্র্যের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রবক্তা বলিউডকে আক্রমণ করার একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির কট্টর হিন্দুবাদী চিন্তাধারার সাথে তাল মিলিয়ে চলচ্চিত্র জগতকেও প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা চলছে। পরিস্থিতির বিশ্লেষণ বলেছে যে, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ ও বহুজাতিক ডিএনএ ভেঙে ফেলার জন্য একটি বিশাল যজ্ঞ চলছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, জনপ্রিয় জুয়েলারী ব্র্যান্ড তানিশ্ককে আন্তঃসাম্প্রদায়িক বিবাহের ওপর চিত্রিত একটি বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়েছে। বিজ্ঞাপনটির বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রতিক্রিয়া এতটাই প্রবল হয়েছিল যে, ব্র্যান্ডটি কেবল ৪৫ সেকেন্ড দীর্ঘ শর্ট ফিল্মটি প্রত্যাহার করেই পার পায়নি, ক্ষমাও চেয়েছে। এসব ঘটনা দেখায় যে, বিজেপির তৈরি করা রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক ব্যবস্থা ভারতের বৈচিত্র্যময়তার ওপর এমন একটি প্রকাশ্য আক্রমণকে একটি সাধারণ ব্যাপারে পরিণত করেছে।
মোদি সরকার স্বতন্ত্র এনজিগুলিরও স্বাধীন মতামত ও সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম পরিচালনার পথ পুরোপুরি রুদ্ধ করে দিয়েছে। অতি সম্প্রতি, বিজেপি সরকার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলি ফ্রিজ করে দিয়ে ভারতে সংস্থাটির কার্যক্রম স্থগিত করতে বাধ্য করে। অধিকন্তু, সমালোচক ও বিজেপি বিরোধীদের গ্রেফতার এবং আটক রাখা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিরোধের সঙ্কোচনে প্রতীয়মান হয় যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকার করোনা মহামারি মোকাবেলায় পুরোপুরি মনোনিবেশ করছে না, বা ভারতের অর্থনৈতিক ভাগ্য পুনরুদ্ধারে আগ্রহী নয়। উল্টো, মোদি তার রাজনৈতিক কর্মসূচি আরও এগিয়ে নেয়ার অজুহাত হিসাবে করোনা মহামারিকে ব্যবহার করে চলেছেন।
বিষয়গুলো এতটাই মারাত্মক আকার ধারণ করেছে যে, বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের সংস্থা অস্ট্রিয়াভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট (আইপিআই) এবং বেলজিয়ামভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ জার্নালিস্ট্স (আইএফজে) প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ভারতে সাংবাদিকদের হুমকি দেয়া এবং চুপ করিয়ে দেয়ার জন্য কঠোর রাষ্ট্রদ্রোহ আইন এবং অন্যান্য আইনি ব্যবস্থার ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্তব্য করে প্রবীণ ভারতীয় সাংবাদিক হরিশ খারে সম্প্রতি লিখেছেন যে, ভারতীয় রাজনীতি ৭০ দশকের মাঝামাঝি সময়ের তৃতীয় বিশ্বের একটি কট্টর স্বৈরাচারে পরিণত হচ্ছে। দেশটির বর্তমান শাসকের এ ভান করা বন্ধ করা উচিত যে, দেশটি একটি উচ্চাভিলাষী বিশ্বনেতা হতে পারে। সূত্র : ডন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।