Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সাকিব এখন মুক্ত

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০০ এএম

অপেক্ষা শেষ। গতকালই শেষ হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। ক্রিকেট খেলতে না পারা, ক্রিকেট মাঠে যেতে না পারার দুঃসহ সময় পেরিয়ে আজ থেকে মুক্ত সাকিব আল হাসান। এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আজ থেকে আবার আনুষ্ঠানিকভাবে সব ধরনের ক্রিকেট কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন বাংলাদেশের সেরা এই অলরাউন্ডার। অনৈতিক প্রস্তাব পেয়েও সংশ্লিষ্ট কোনো কতৃপক্ষকে না জানানোয় গত বছরের ২৯ অক্টোবর সাকিবকে নিষিদ্ধ করে আইসিসি। মূল শাস্তি ছিল দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা, তবে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা ছিল স্থগিত। নিষিদ্ধ হওয়ার সময় সাকিব ছিলেন বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। শাস্তি পাওয়ার মাত্র ১ সপ্তাহ আগে ক্রিকেটারদের ধর্মঘটে তিনি ছিলেন নেতৃত্ব দেওয়া ক্রিকেটারদের একজন। সাকিব নিষিদ্ধ হওয়ার পর গত মার্চের জিম্বাবুয়ে সিরিজ ছাড়া বাকি সব সিরিজে মাঠের পারফরম্যান্সে ধুঁকেছে বাংলাদেশ দল।
গত বছরের অক্টোবরে ক্রিকেটারদের তিন দিনের ধর্মঘটের ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নাড়িয়ে দিয়েছিল সাকিবের নিষেধাজ্ঞার খবর। আইসিসি সেসময় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল, এই চার মাসের মধ্যে তিনবার প্রস্তাব আসে সাকিবের কাছে। একবারও তিনি কোনো কতৃপক্ষকে জানাননি।
আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী ধারা অনুযায়ী, কারও কাছ থেকে সন্দেহজনক কোনো বার্তা পেলেই আইসিসি বা সংশ্লিষ্ট বোর্ড কিংবা দায়িত্বশীল কাউকে জানাতে হয়। এটা গোপন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রতিটি সিরিজ, টুর্নামেন্ট, ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরের আগে ক্রিকেটারদের এই নিয়ম মনে করিয়ে দেওয়া হয় বারবার। এসব নিয়ে ক্লাসও করানো হয়। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী ৬ মাস থেকে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা পর্যন্ত হতে পারে শাস্তি।
আইসিসির মহাব্যবস্থাপক (ইন্টেগ্রিটি) অ্যালেক্স মার্শাল তখন বলেছিলেন, ‘সাকিব খুবই অভিজ্ঞ একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। সে আইসিসির অনেক শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে এবং ধারা অনুযায়ী বাধ্যবাধকতার ব্যাপারে অবগত আছে। ফিক্সিংয়ের প্রতিটি প্রস্তাবই তার জানানো উচিত ছিল। সে তার ভুল স্বীকার করেছে এবং তদন্তে পুরোপুরি সহায়তা করেছে। ইন্টেগ্রিটি ইউনিটকে ভবিষ্যত শিক্ষা কার্যক্রমে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছে সে, যাতে করে তরুণ ক্রিকেটাররা তার ভুল থেকে শিক্ষা নেয়।’
নিষেধাজ্ঞার পর প্রথম কয়েক মাস দেশেই ছিলেন সাকিব। পরে করোনাভাইরাসের দুর্যোগ শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রে যান স্ত্রী-সন্তানের কাছে। তার দ্বিতীয় সন্তান পৃথিবীর আলোয় আসে গত এপ্রিলে। তাদের সঙ্গে সাড়ে ৫ মাস কাটিয়ে তিনি দেশে ফেরেন গত ২ সেপ্টেম্বর। শুরু হয় মাঠে ফেরার প্রস্তুতি পর্ব। বিসিবির কোনো সুযোগ-সুবিধা ব্যবহারের নিয়ম নেই বলে সাকিব অনুশীলনের জন্য বেছে নেন তার বেড়ে ওঠার প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিকে। সেখানে তার ঘনিষ্ঠ দুই কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম ও মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের তত্ত¡াবধানে চলে তার অনুশীলন। পাশাপাশি বিকেএসপির বিভিন্ন অনুশীলন সুবিধা কাজে লাগান তিনি। বিকেএসপির অ্যাথলেটিকস কোচ, বক্সিং কোচরাও সহায়তা করেন তাকে।
বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফরে দ্বিতীয় টেস্ট দিয়ে সাকিবের অফিসিয়াল ক্রিকেটে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সফরটি স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর গত ১ অক্টোবর তিনি আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। সেখানে অবশ্য অনুশীলন চালিয়ে গেছেন। আগামী মাসে বিসিবির টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট দিয়ে সাকিব ক্রিকেটে ফিরবেন বলে কদিন আগে নিশ্চিত করেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সাকিবের দেশে ফেরার কথা। বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো কদিন আগে বলেছেন, সাকিবের ফেরা নিয়ে তিনি ও সতীর্থরা বেশ রোমাঞ্চিত। গত জুনে হার্শা ভোগলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সাকিব বলেছিলেন, এই নিষেধাজ্ঞা অবসর নিয়ে তার ভাবনাও বদলে দিয়েছে। আর বছর দুয়েক খেলেই অবসর নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার পর এখন তিনি আরও তিন থেকে পাঁচ বছর খেলতে চান।
সাকিবের নিষেধাজ্ঞার এই সময়টায় এক পঞ্জিকাবর্ষে নিজেদের সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলার কথা ছিল বাংলাদেশের। এশিয়া কাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্ট ছিল সূচিতে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চের পর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। পিছিয়ে গেছে এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপও। এই এক বছরে কেবল ৪টি টেস্ট, ৩টি ওয়ানডে ও ৭টি টি-টোয়েন্টি মিস করেছেন সাকিব।

সাকিবের হারানো-না হারানো
শাস্তির এই এক বছর কতটা মাঠের ক্রিকেট মিস করেছেন বাংলাদেশের সেরা তারকা? করোনাভাইরাস পরিস্থিতি না থাকলে আরও কতটা মিস হতো?

যা মিস করেছেন

ভারত সফর
২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর সাকিব নিষিদ্ধ হওয়ার পর পরই প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে ভারতে যায় বাংলাদেশ দল। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিবের এমন খবরে লাগে বিশাল ধাক্কা। মুমিনুল হককে টেস্ট ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দেওয়া হয় টি-টোয়েন্টি দলের দায়িত্ব। নভেম্বরে ভারতের মাঠে টি-টোয়েন্টি জিতে সিরিজ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। সিরিজ হারলেও করতে পেরেছিল লড়াই। কিন্তু সাকিববিহীন দুই টেস্টের ফল হয়েছে যাচ্ছেতাই।

পাকিস্তান সফর
নিরাপত্তাজনিত কারণে পাকিস্তান সফরে যাওয়া নিয়ে ছিল সংশয়। তবে বিশেষ ব্যবস্থায় সেখানে দুই দফায় যায় বাংলাদেশ। জানুয়ারিতে প্রথমে খেলে আসে দুই টি-টোয়েন্টি। ফেব্রুয়ারিতে গিয়ে খেলে এক টেস্ট। সাকিবকে ছাড়া একদমই ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ।

জিম্বাবুয়ে সিরিজ
পাকিস্তান থেকে ফিরে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট দিয়ে শুরু হয় সিরিজ। তাতে দাপটেই জিতে মুমিনুল হকরা। মার্চে তিন ওয়ানডের সিরিজেও ছিল বাংলাদেশের দাপট। এই সিরিজ দিয়েই বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। পরে দুই টি-টোয়েন্টিতেও সাকিবকে ছাড়া বাংলাদেশ জিম্বাবুয়েকে পাত্তা দেয়নি।
এরপরই শুরু করোনা বিরতি। বন্ধ থাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের কিছু ম্যাচের পর হয়নি ঘরোয়া কোনো খেলাও। তবে সাকিব খেলতে পারেননি সর্বশেষ বিপিএল। এছাড়া চলমান আইপিএলও তার মিসের তালিকায় ফেলা যায়।

আরও যা মিস করতেন
করোনাভাইরাস মহামারি পৃথিবীতে না এলে অনেকগুলো খেলা মিস হয়ে যেত সাকিবের। কারণ, চলতি বছরে দেশে ও দেশের বাইরে ছিল ব্যস্ত সূচি।

পাকিস্তান সফরের বাকি অংশ
পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন দফার একটি সিরিজের সূচি ঠিক করা হয়েছিল। প্রথম দুই দফার পর এপ্রিল মাসে দ্বিতীয় টেস্ট ও একটি ওয়ানডে খেলা চূড়ান্ত হয়েছিল। করোনায় যা ভেস্তে গেছে।

আয়ারল্যান্ড সফর
মে মাসে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে যুক্তরাজ্য সফর করার কথা ছিল বাংলাদেশের। সফরটি অনির্দিষ্ট সময়ের জন্যই পিছিয়ে যায়।

অস্ট্রেলিয়া সিরিজ
জুন মাসে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে আসার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়ার। করোনার প্রকোপ তখন ছিল অনেক বেশি। অনুমিতভাবেই সিরিজটি স্থগিত করা হয়।

শ্রীলঙ্কা সফর
জুলাই মাসেই শ্রীলঙ্কায় গিয়ে তিন টেস্ট খেলবার কথা ছিল বাংলাদেশের। সফরটিও সঙ্গত কারণে স্থগিতের খাতায় চলে যায়। তবে এই সফর চলতি অক্টোবরের শেষ দিকে করার পরিকল্পনা অনেক দ‚র এগিয়ে গিয়েছিল। যার বড় একটি অংশে খেলতেন সাকিবও। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে কোভিড-১৯ প্রোটোকল নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় তা আর হয়নি।

নিউজিল্যান্ড সফর
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলতে নিউজিল্যান্ড সফরে যাওয়ার সূচি ছিল বাংলাদেশের। পিছিয়ে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে তা অনুষ্ঠিত হতো। তবে গেল অগাস্টে সিরিজ স্থগিত করে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। ইতোমধ্যে নতুন সূচি চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী মার্চে দ্বীপদেশটিতে যাবে বাংলাদেশ।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
করোনার কারণে পিছিয়ে যায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। অক্টোবরে শুরুর দিকে সূচি থাকা এই বিশ্ব আসরের সাকিবের খেলার সম্ভাবনা ছিল ক্ষীণ। বাংলাদেশের খেলা ছিল অক্টোবরের মাঝামাঝি। তখন সাকিব নিষিদ্ধই থাকতেন। বাংলাদেশ পরের রাউন্ডে গেলে তিনি খেলতে পারতেন। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল আগেভাগে দিতে হওয়ায় সেটাও কীভাবে হতো তা ছিল বড় প্রশ্নের।
অর্থাৎ গেল এক বছরে সাকিবের যতটা খেলা মিস হয়েছে, তার চেয়ে বেশি মিস হতে পারত। সেদিক থেকে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতেই পারেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাকিব-এখন-মুক্ত

২৯ অক্টোবর, ২০২০
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ