Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খাদ্য নিরাপত্তা বাড়াতে উদ্যোগ

আমনে সাড়ে ৮ লাখ টন ধান-চাল কেনার সিদ্ধান্ত

রফিক মুহাম্মদ : | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০০ এএম

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে গেল বোরো মৌসুমে ২০ লাখ টন ধান চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার। তবে সময় বাড়িয়েও শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও সংগ্রহ করতে পারেনি। এ অবস্থায় সরকার খাদ্য মজুদ নিশ্চিত ও নিরাপদ করতে চলতি আমন মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সাড়ে ৮ লাখ টন ধান-চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আগামী ৭ নভেম্বর থেকে ধান ও ১৫ নভেম্বর থেকে চাল সংগ্রহ শুরু হবে। আগামী বছরের ২৮ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে। ২৬ টাকা কেজি দরে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ২ লাখ মেট্রিক টন ধান কেনা হবে। এছাড়া ৩৭ টাকা কেজি দরে ৬ লাখ টন সিদ্ধ চাল এবং ৩৬ টাকা কেজি দরে ৫০ হাজার টন আতপ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এবারের দীর্ঘ বন্যায় রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্যায় আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৬ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমির। এতে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৯৮৬ জন কৃষকের মোট ক্ষতির পরিমাণ ১২৬ কোটি টাকা। দীর্ঘ বন্যার কারণে আমন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম হবে। এ অবস্থায় সরকারের ধান চাল সংগহে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন হবে বলে অনেকে মনে করেন।

এর আগে বোরো মৌসুমে সরকার ২০ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। এর মধ্যে ৮ লাখ টন বোরো ধান, ১০ লাখ টন বোরো সিদ্ধ চাল ও দেড় লাখ টন বোরো আতপ চাল। প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে বোরো ধান, আর ৩৬ টাকা দরে বোরো সিদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা দরে বোরো আতপ চাল কেনার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ২০ লাখ মেট্রিক টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে সরকার মাত্র ৮ লাখ ৯১ হাজার ৩৭ মেট্রিক টন সংগ্রহ করতে পেরেছে। বর্তমানে ১০ লাখ ৮১ হাজার টন খাদ্যশস্য সরকারি গুদামে মজুত আছে বলেও মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারিকালে এই মজুদ যথেষ্ট নয় বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। এ জন্য খাদা নিরাপত্তা নিশ্চিত ও নিরাপদ করতে আরও ধান-চাল সংগ্রহ করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

ধান চাল সংগ্রহে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করছেন। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও সংগ্রহ কাক্সিক্ষত মাত্রায় না হওয়াটা অশনিসঙ্কেত বলে অনেকে মনে করেন। অতি মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে ধান কিনে ব্যাপক হারে মজুদ করেছেন। এতে করে একটা সময় বাজারে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ ধান-চাল রয়েছে। তবে এগুলো আড়তদার ও চালকল মালিকদের কাছে মজুদ রয়েছে। সরকারের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ ধান-চাল মজুদ না থাকলে ব্যবসায়ীরা যে কোন সময় বাজার অস্থির করতে পারে। যার প্রভাব ইতোমধ্যে বাজারে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কৃষিমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, আড়তদার ও চালকল মালিকরা ষড়যন্ত্র করে চালের দাম বাড়াচ্ছে। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সরকারের পর্যাপ্ত মজুদ থাকতে হবে। খাদ্য মজুদ বাড়াতে সরকার চলতি আমন মৌসুমে সাড়ে ৮ লাখ টন ধান-চাল কিনবে। গতকাল খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকটি অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। বৈঠক শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানান, আগামী ৭ নভেম্বর থেকে ধান ও ১৫ নভেম্বর থেকে চাল সংগ্রহ শুরু হবে। আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, প্রান্তিক চাষিদের ধানের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে সরকার প্রতিবছর বোরো মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহ করলেও আমন মৌসুমে শুধু চাল সংগ্রহ করতো। গত বছর থেকে আমন মৌসুমে চালের পাশাপাশি ধানও সংগ্রহ করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খাদ্য-নিরাপত্তা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ