Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

টোলের নামে চাঁদাবাজি

ফুলবাড়িয়া টার্মিনালের আশপাশের ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

রাজধানীর ফুলবাড়িয়ায় টার্মিনালে টোলের নামে আশপাশের দোকান ও মার্কেট থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষুদ্ধ ব্যবসায়ীরা কয়েক দফা বিক্ষোভ প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ইজারাদার টার্মিনাল ইজারা নিলেও তারা দোকানপাটের মালামাল থেকেও টোল আদায় করছে। তবে ইজারাদারের দাবি, যারা এই অভিযোগ করেছেন তারা আগেও টোল দিতেন। তবে আগের টোল আদায় ছিল অবৈধ।

জানা গেছে, গত ১৪ অক্টোবর হতে এক বছরের জন্য দুই কোটি ২৫ লাখ টাকায় ডিএসসিসির মালিকানাধীন ফুলবাড়িয়া স্টপ ওভার টার্মিনালটি ইজারা নেয় মিনহাজ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ইজারার শর্ত অনুযায়ী ইজারাদার টার্মিনালের আওতাভুক্ত গুলিস্তান-মিরপুর ১, ৯, ১০, ১১ ও ১২, চিড়িয়াখানা, এয়ারপোর্ট, আব্দুল্লাহপুর, ধামরাই, মানিকগঞ্জ, রামপুরা, গাবতলী, কালিয়াকৈর, কালীগঞ্জ, কলাকুপাবান্দুরা, সাভার, নবীনগর, আরিচা (বিআরটিএ’র লিজ প্রদত্ত) কাপাসিয়া, গাজীপুর, টঙ্গী, শ্রীপুর, সখীপুর, শ্রীনগর, দোহার ও বাড়ৈখালী রুটে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাস প্রতি প্রতিদিন ৪০ টাকা হারে টার্মিনাল ফি ও নির্ধারিত কুলি মজুরি আদায় করবে। নির্ধারিত স্থান ও রুট ছাড়া অন্য কোনও স্থান বা রুটে টোল আদায় করা যাবে না। সিএনজি অটোরিকশা হতে প্রতি ট্রিপে ১০ টাকা ও টেম্পো হতে ৩০ টাকা হারে টোল আদায় করা যাবে। টোল আদায়ের কার্যাদেশে পরিবহনের নামও উল্লেখ করে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। তবে এই শর্ত ভেঙ্গে পরিবহন থেকে আদায়কৃত টোলের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে।

ইজারার শর্ত অনুযায়ী কোনও যাত্রী সামান্য মালামাল উঠানো বা নামানোর জন্য কুলিদের সাহায্য না চাইলে কোনও কুলি উক্ত মালামাল স্পর্শ করা বা মজুরি দাবি করতে পারবে না। যাত্রীসাধারণের সঙ্গে কোনও কুলি বা আদায়কারী কোনও প্রকার দুর্ব্যবহার, অশালীন উক্তি, জোরপূর্বক অর্থ আদায় করা যাবে না। কিন্তু টার্মিনালের আশপাশের মার্কেটের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ইজারাদার টার্মিনাল বুঝে নেওয়ার পর থেকেই তারা দোকানপাটের সামনে থেকে টোল আদায় করছে। ব্যবসায়ীরা জানান, কোনও ব্যবসায়ী তাদের গোডাউন থেকে মালামাল নিয়ে দোকানে নেয়ার সময়ও সেখান থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে। এ অভিযোগে গত ২০ অক্টোবর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা।

সোহরাব হোসেন নামে একজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, আমার কাছে ১০টি কার্টনের বিপরীতে ৫০ টাকা করে ৫০০ টাকা চাঁদা চেয়েছে। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে হুমকী ধমকী দিয়েছে। আরেক ব্যবসায়ী চাঁদার রশিদ দেখিয়ে বলেন, এখানে স্পষ্ট লেখা আছে তারা যানবাহনের টোল নেবেন। কিন্তু তারা আমাদের প্রতিটি বস্তা ও কার্টন থেকে মার্কেটে ঢুকতেও ৫০ টাকা ও বের হতেও ৫০ টাকা করে নিচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, কোনও ক্রেতা মার্কেট থেকে কোনও কিছু কিনে নিলেও তাদের চাঁদা দিতে হচ্ছে। মার্কেটে একটা মালের বান্ডেল নিয়ে যেতে হলে তাদেরকে টাকা দিতে হয়। বের করলেও টাকা দিতে হয়। গোডাউন থেকে আনলেও টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে ব্যবসায়ীদের গালমন্দ করে, মারতে যায়, হুমকি দেয়। যে গ্রাহকের কোনও কুলির প্রয়োজন নেই সে কেন কুলি মজুরি বাবদ টাকা দেবে? ইজারার শর্তেও এটা বলা আছে যদি যাত্রীর কুলির প্রয়োজন না হয় তার কাছ থেকে জোর করে চাঁদা আদায় করা যাবে না।
জানতে চাইলে টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠান মিনহাজ এন্টারপ্রাইজের এক কর্মকর্তা বলেন, এই ব্যক্তিরা আগেও চাঁদা দিতেন। কিন্তু তখন তারা চাঁদাবাজদের চাঁদা দিতেন। একটি চক্র এই টাকা লুটপাট করে খেয়েছে। এখন আমরা এর ইজারা নিয়েছি। সরকার রাজস্ব পায়। তারা এখন বিভিন্ন কথা বলছে। এ প্রসঙ্গে মিনহাজ এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী টিটু বলেন, দীর্ঘ ৮ বছর সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বন্ধ ছিল। কিছু লোক এটা নিয়ন্ত্রণ করতো। বর্তমান মেয়র সাহেব টেন্ডার শিডিউল কল করার পর আমরা টেন্ডার ড্রপ করি। এখন আমরা রাজস্ব আদায় করছি। তিনি বলেন, যারা আগে অবৈধভাবে এই টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণ করতো তারা হয়তো ব্যবসায়ীদেরকে ভুল বুঝিয়ে এটা করাতে পারে। তিনি বলেন, যখন কেউ চাঁদাবাজি করে তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু বৈধভাবে রাজস্ব নেওয়া হলে তাতে তাদের আপত্তি।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির মহা-ব্যবস্থাপক (পরিবহন) বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, এমন অভিযোগ যারা করেছে তাদের কিছু কথা অতিরঞ্জিত হতে পারে। আমরা ওটা ইজারা দিয়েছি। সেখানে পরিবহন ভেদে টোল নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আর ইজারাদার যদি ইজারার শর্তের বাইরে কিছু করে থাকেন, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টোলের
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ