Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আপাতত চিন্তা নেই লকডাউনের

২০২১ সালের ছুটির তালিকা অনুমোদন সাংবাদিকদের মন্ত্রিপরিষদ সচিব

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

২০২১ সালের সরকারি ছুটির তালিকা অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মোট ২২ দিন ছুটির মধ্যে সাতদিন পড়েছে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার। শীত মৌসুমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় লকডাউন করা হলেও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সেই চিন্তা সরকার করছে না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয় প্রান্ত থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা এতে অংশ নেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, করোনা থেকে সুরক্ষায় মাস্ক ব্যবহারের ওপরই জোর দিচ্ছে সরকার, মাস্ক ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কোনো সেবাই দেয়া হবে না বলে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে নো মাস্ক নো সার্ভিস ব্যাপকভাবে বাস্তবায়নে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারির প্রাদুর্ভাবজনিত বিপর্যয় থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন-অগ্রগতির বিষয়ে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়। সরকার কি আবারও চলাচলের ওপর কোনো রেস্ট্রিকশন (লকডাউন) আনার চিন্তা-ভাবনা করছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখন পর্যন্ত না। আমাদের আল্লাহর রহমতে তেমন অবস্থা নেই। আমাদের যে অবস্থা সবাই মাস্ক ব্যবহার করলে আমরা কমফরটেবল জোনে থাকতে পারব। এটা আজ প্রধানমন্ত্রীও বলছিলেন। এটা আমরা ঠিক করে দিচ্ছি। কোনোভাবেই মাস্ক ছাড়া সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যেন সার্ভিস না পাওয়া যায়। আমরা সব অফিসে সেই নির্দেশনা পাঠিয়ে দিয়েছি। যে কোনো জনসমাগমে মাস্কের বিষয়ে এই কঠোর নির্দেশনা থাকবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আজও কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেহেতু আমেরিকা ও ইউরোপের অবস্থা খুবই খারাপ। ইউরোপে সবচেয়ে বেশি দেশ লকডাউনে চলে গেছে। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স লকডাউন দিয়ে দিয়েছে। ফ্রান্সে ইতিমধ্যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কেউ অনুমতি ছাড়া বাসা থেকে বের হতে পারবে না। বের হতে হলে আগে অনুমতি নিতে হবে, তাও অনুমতি পাবে এক ঘণ্টার জন্য। এক কিলোমিটারের বাইরে কেউ যেতে পারবে না। সব লোক প্যারিস ছেড়ে দিচ্ছে, প্রায় ৭শ কিলোমিটার জ্যাম হয়ে গেছে। সেজন্য এগুলো বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। বিশেষ করে নো মাস্ক নো সার্ভিস-এটাকে ব্যাপকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। সেজন্য আপনাদের (গণমাধ্যম) সবচেয়ে বেশি উদ্যোগ নিতে হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গতকাল মসজিদে বলে দিয়েছি, মাস্ক ছাড়া মসজিদে কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না। বায়তুল মোকাররমের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আমি অবাক হয়েছি, কেউ তিন ফুটের গ্যাপ ছাড়া দাঁড়াচ্ছে না এবং নিয়ম মেনে চলছেন না। আর মসজিদের কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউ যদি মাস্ক ছাড়া মসজিদে যায় তাহলে তাকে সেজন্য সাজা ভোগ করতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে, ক্লান্ত হওয়ার উপায় নেই। গণপরিবহনে মাস্ক ব্যবহারে অনীহা নিয়ে তিনি বলেন, পাবলিক পরিবহনে মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে আমি ইতোমধ্যে বলে দিয়েছি। তারা মিটিং করে ফেলেছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০২১ সালে সাধারণ ছুটি ১৪ দিন, এর মধ্যে সাপ্তাহিক ছুটির দিন পড়েছে ছয়দিন। তবে চাঁদের আগে-পরে হলে দু’একদিন কম বেশি হতে পারে। আর নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি আটদিন, এর মধ্যে একদিন সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পড়েছে। ঐচ্ছিক ছুটি মুসলিমদের জন্য ৫ দিন, হিন্দু ধর্মালম্বীদের জন্য ৮ দিন, খ্রিস্টানদের জন্য ৮ দিন এবং বৌদ্ধদের জন্য ৫ দিন। আর পার্বত্য এলাকার জন্য বিশেষ করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈসাবীসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য ২ দিন। ২০২০ সালে ২২ দিন সরকারি ছুটির মধ্যে আটদিনই পড়ে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার। চুটির তালিকায় জানানো হয়, একজন কর্মচারীকে তার নিজ ধর্ম অনুযায়ী বছরে সর্বোচ্চ তিনদিনের ঐচ্ছিক ছুটি ভোগ করার অনুমতি দেয়া যাবে। তবে প্রত্যেক কর্মচারীকে বছরের শুরুতে নিজ ধর্ম অনুযায়ী নির্ধারিত তিন দিনের ঐচ্ছিক ছুটি ভোগ করতে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমোদন নিতে হবে। সাধারণ ছুটি, নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে যুক্ত করে ঐচ্ছিক ছুটি ভোগ করা যায়। যেসব অফিসের সময়সূচি ও ছুটি তাদের নিজস্ব আইন-কানুন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে বা যেসব অফিস, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের চাকরি সরকার অত্যাবশ্যক হিসেবে ঘোষণা করেছে, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অফিস, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান নিজস্ব আইন-কানুন অনুযায়ী জনস্বার্থ বিবেচনা করে এই ছুটি ষোষণা করবে।

সাধারণ ছুটিগুলো হচ্ছে, ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, ১ মে দিবস, ৭ মে জুমাতুল বিদা, ১৪ মে ঈদুল ফিতর, ২৬ মে বুদ্ধপূর্ণিমা, ২১ জুলাই ঈদুল আজহা, ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবস, ৩০ অগাস্ট জন্মাষ্টমী, ১৫ অক্টোবর দুর্গাপূজা (বিজয়া দশমী), ১৯ অক্টোবর ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.), ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস এবং ২৫ ডিসেম্বর যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন (বড়দিন)। নির্বাহী আদেশে ছুটিগুলো হচ্ছে, ২৯ মার্চ শবেবরাত, ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ, ১০ মে শবেকদর, ১৩ ও ১৫ মে ঈদুল ফিতরের আগে ও পরের দিন, ২২ ও ২২ জুলাই ঈদুল আজহার আগে ও পরের দিন এবং ১৯ অগাস্ট আশুরা। ঐচ্ছিক ছুটি গুলো হচ্ছে, ১২ মার্চ শবে মেরাজ, ১৬ মে ঈদুল ফিতর (ঈদের পরের দ্বিতীয় দিন), ২৩ জুলাই ঈদুল আজহা (ঈদের পরের দ্বিতীয় দিন), ৬ অক্টোবর আখেরি চাহার সোম্বা এবং ১৭ নভেম্বর ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম।

১৬ ফেব্রুয়ারি সরস্বতী পূজা, ১১ মার্চ শিবরাত্রী ব্রত, ২৮ মার্চ দোলযাত্রা, ৯ এপ্রিল হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাব, ৬ অক্টোবর মহালয়া, ১৪ অক্টোবর দুর্গাপূজা (নবমী), ২০ অক্টোবর লক্ষীপূজা এবং ৪ নভেম্বর শ্যামাপূজা। ১ জানুয়ারি ইংরেজি নববর্ষ, ১৭ ফেব্রুয়ারি ভস্ম বুধবার, ১ এপ্রিল পুণ্য বৃহস্পতিবার, ২ এপ্রিল পুণ্য শুক্রবার, ৩ এপ্রিল পুণ্য শনিবার, ৪ এপ্রিল ইস্টার সানডে এবং ২৪ ও ২৬ ডিসেম্বর যিশুখ্রিস্টের জন্মোৎসব (বড়দিনের আগে ও পরের দিন)। ২৮ জানুয়ারি মাঘী পূর্ণিমা, ১৩ এপ্রিল চৈত্রসংক্রান্তি, ২৩ জুলাই আষাঢ়ী পূর্ণিমা, ২০ সেপ্টেম্বর মধু পূর্ণিমা (ভাদ্র পূর্ণিমা) এবং ২০ অক্টোবর প্রবারণা পূর্ণিমা (আশ্বিনী পূর্ণিমা)। পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা ও এর বাইরে কর্মরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত কর্মচারীদের জন্য ঐচ্ছিক ছুটি, ১২ ও ১৫ এপ্রিল বৈসাবি ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর অনুরূপ সামাজিক উৎসব।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন যুগ্মসচিব জানান, একজন কর্মচারীকে তার নিজ ধর্ম অনুযায়ী বছরে সর্বোচ্চ তিন দিনের ঐচ্ছিক ছুটি ভোগ করার অনুমতি দেয়া যাবে। তবে প্রত্যেক কর্মচারীকে বছরের শুরুতে নিজ ধর্ম অনুযায়ী নির্ধারিত তিন দিনের ঐচ্ছিক ছুটি ভোগ করতে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। এছাড়া তিনটি প্রস্তুব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ