Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ছাদ থেকে ফেলে দেয়া কিশোরি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০২০, ৬:২৪ পিএম

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে পনের বছর বয়সের কিশোরিকে গভীর রাতে ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তিন তলার ছাদ থেকে ফেলে দেয়ার ঘটনায় তিনজনকে আসামী করে মামলা হয়েছে।গুরুতর আহত ওই কিশোরির বড় বোন রূপা বাদি হয়ে বন্দর থানায় এই মামলা দায়ের করেন। এদিকে ঘটনার পর থেকে আসামীরা পলাতক রয়েছে।তবে বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: ফখরুদ্দিন ভুঁইয়া সময় নিউজকে বলেন, ঘটনার ব্যাপারে তদন্তসহ আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে ছাদ থেকে ফেলে দেয়ার পর আহত কিশোরি লুবনার হাত, পা এবং বুকের পাঁজরের হাঁড় ভেংগে গেছে। রাজধানির পংগু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার অবস্থা আশংকাজনক বলে পরিবারের স্বজনরা জানিয়েছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসি ও প্রতিবেশিরা জানান, বন্দর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের কেওঢালা বাগদোবাড়িয়া এলাকার রশিদ মিয়ার তিন তলা বাড়ির তৃতীয় তলায় একটি রুম ভাড়া নিয়ে গত প্রায় এক বছর যাবত বসবাস করছেন স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হওয়া নারী হবিগঞ্জের রূপা। তিনি ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় বাড়ির মালিক রশিদ মিয়ার সুতার কুনিং কারখানায় কাজ করেন। বাড়ির নীচ তলায় রয়েছে একই মালিকের একটি মশার কয়েল তৈরির কারখানা। তৃতীয় তলায় রূপা ছাড়াও আরো চারটি ভাড়াটে পরিবার বসবাস করেন। এই বাড়ির ছাদ থেকেই ফেলে দেয়া হয় লুবনা নামের ওই কিশোরিকে।
সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ওই বাড়ির ভাড়াটে এক দম্পতি ছাড়া অন্যান্য ভাড়াটেদের ঘরে তালা ঝুলছে। অন্যদিকে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সন্ত্রাসীদের ভয়ে এ ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
রশিদ মিয়ার বাড়ির এক ভাড়াটে দম্পতি না প্রকাশ না করার শর্তে সময় নিউজকে জানান, রূপার ছোট বোন লুবনা গত ১৪ অক্টোবর হবিগঞ্জের বাড়ি থেকে এই বাসায় বেড়াতে আসে। তবে বাড়ির গেট বরাবর সামনের রাস্তার উল্টোদিকে মুদি দোকানদার হাসান মিয়ার ছেলে অপুর সাথে লুবনার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এদিকে বড় বোন রূপার পাশের রুমের ভাড়াটে অনাবিল পরিবহনের গাড়িচালক বখাটে যুবক রুবেল লুবনাকে উত্যক্ত করতো এবং বিভিন্ন সময়ে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছে।
গত ৩১ অক্টোবর (শনিবার) দিনগত রাত দুইটায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে প্রেমিক অপু লুবনার সাথে দেখা করতে আসে। লুবনা গোপনে ঘর থেকে বের হয়ে অপুর সাথে তিন তলার সিঁড়ি কোঠায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকে। পাশের ঘরের ভাড়াটে বখাটে যুবক রুবেল লুবনাকে ঘর থেকে বের হয়ে প্রেমিক অপুর সাথে কথা বলার এ ঘটনা দেখে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়। কিশোরি লুবনাকে জিম্মি করে তার প্রেমিক অপুকে একটি রুমে নিয়ে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে রুবেল জোর করে লুবনাকে ছাদে নিয়ে যায় এবং ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এ সময় দুইজনের মধ্যে ধস্তাধস্তিও হয়। ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে রুবেল লুবনাকে ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে নিচে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে আহত লুবনার কান্নার শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে। খবর পেয়ে লুবনার বড় বোন রূপাসহ প্রতিবেশিরা এসে গুরুতর অবস্থায় ঢাকার পংগু হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করায়। লুবনার হাত, পা এবং বুকের পাঁজরের একটি হাঁড় ভেংগে গেছে বলে প্রতিবেশি ওই দম্পতি জানায়।
এ ঘটনায় আহত লুবনার বড় বোন রূপা রবিবার বন্দর থানায় বাদি হয়ে রুবেল, অপু এবং অপুর বাবা মুদি দোকানদার হাসান মিয়াকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।মামলায় বাদি অভিযোগ করেন, বখাটে যুবক রুবেল ও অপুসহ কয়েকজন মিলে তার নাবালিকা বোনের মুখ চেপে ও হাত বেঁধে জোর করে ছাদে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে। পরে ব্যর্থ হয়ে তারা লুবনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে নিচে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, রুবেল এলাকার চিহ্নিত বখাটে যুবক। ইতিপূর্বে সে পাশের মহল্লায় ভাড়া থাকতো। সেখানেও এমন বেশ কয়েকটি অনৈতিক ও অসামাজিক কাজের অভিযোগে এলাকাবাসি তাকে বিতাড়িত করে। পরে রশিদ মিয়ার বাড়ির তিন তলায় একটি রুম ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের অতরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) টি এস মোশাররফ হোসেন জানান, বাদির অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হচ্ছে। আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জেলা পুলিশের অপরাধ শাখার এই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, কেউ যাতে হয়রানি না হয় সে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আমরা ন্যায়সংগতভাবে তদন্ত করব। ঘটনার সাথে যারাই জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে আসামী বাড়তেও পারে। আবার কমতেও পারে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কে কে অপরাধি সে বিষয়টি এখন নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে ভুক্তভোগি পরিবার আতে ন্যায়বিচার পায় তার জন্য যা যা করণীয় আমরা করবো।
তিনি আরো বলেন, মেয়েটি যাতে সুচিকিৎসা পায় সে ব্যাপারেও আমরা দেখভাল করছি। হাসপাতালে গিয়ে মেয়েটিকে দেখতে যাওয়াসহ তার পরিবারের সাথে স্বার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে আমি তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি। পংগু হাসপাতালের চিকিৎসকের সাথেও আমি কথা বলার চেষ্টা করছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ