Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নদী ড্রেজিংয়ে স্থায়ী পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

একনেকে ২৪৫৯ কোটি টাকার ৪ প্রকল্প অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০২০, ৬:৫২ পিএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদী ড্রেজিংয়ের জন্য স্থায়ী পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নদীর প্রবাহ যাতে ঠিক থাকে তাই বড় নদীগুলোতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং এবং মেইনটেনেন্স ড্রেজিং করতে হবে। যাতে সারাবছর পানি প্রবাহ ঠিক থাকে। নদীগুলোতে চর ও ডুবো চর থাকলে সেগুলো অপসারণ করতে হবে। তানা হলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে নদীর দুই তীরে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া বর্ষাকালে যাতে নদীগুলোতে পানি ধরে রেখে শুস্ক মৌসুমে ব্যবহার করা যায় তার ব্যবস্থা নিতে হবে। মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ‘যমুনা নদীর ডানতীর ভাঙ্গন হতে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলাধীন সিংড়াবাড়ী,পাটগ্রাম ও বাঐখোলা এলাকা সংরক্ষণ’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে এরকম নির্দেশনা দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম।

রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক পরবর্তী ব্রিফিং-এ আসাদুল ইসলাম আরও জানান, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, সবাই যাতে অন্তত মাস্ক ব্যবহার করে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া অপর একটি প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কক্সবাজারে শুটকি শিল্প স্থাপনের পর সেখানে যাতে লাভজনক মনে করে বাইরে থেকে জনগণ না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা এটি যেহেতু একটি পুর্নবাসন সংক্রান্ত প্রকল্প হবে। সেক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তরাই কেবল যেন সুবিধা পায়। এছাড়া সময় মতো সব উন্নয়ন প্রকল্প শেষ করারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ জানান, বর্তমানে প্রকল্প ভিত্তিক নদী ড্রেজিং কার্যক্রম চলছে। সেটি থেকে বেরিয়ে এসে ক্যাপিটাল ড্রেজিং এ যেতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু দেশে ড্রেজার সংকট রয়েছে। ড্রেজারগুলো অনেক দামী। একেকটির দাম প্রায় ৫০০-৬০০ কোটি টাকা এজন্য আমরা বড় প্রকল্প হাতে নিচ্ছি। যার মাধ্যমে ৩২টি ড্রেজার কেনা যাবে। বর্তমানে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাত্র ৬টি ড্রেজার রয়েছে। বাকি ভাড়া নিয়ে এসে কাজ চালানো হচ্ছে। এজন্য সব নদীতে এক সঙ্গে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা সম্ভব হবে না। আগে বড় নদীগুলোতে ড্রেজিং করা হবে।

এদিকে কক্সবাজারে স্থাপন করা হচ্ছে শুটকি শিল্প কারখানা। অর্থাৎ আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হচ্ছে শুটকি। যা বিদেশেও রফতানি হতে পারে। এটিসহ ৪টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪৫৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ হাজার ৬৬৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৬০৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ১৮২ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

রাজধানীর আগারগাঁও-এ এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। এ সময় পরিকল্পনা সচিব আসাদুল ইসলাম গণভবনেই উপস্থিত ছিলেন।

পরবর্তীতে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ব্রিফিং-মূল বিষয়বস্তু তুলে ধরেন পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম। এ সময় বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, পরিকল্পা কমিশনের কৃষি পানি সম্পদ ও পল¬ী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আসাদুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়নের জন্য অনেক জেলে পরিবারকে পূর্ণবাসন করা হয়েছিল। তাদেকে অন্যত্র যে স্থানে পুর্ণবাসন করা হয়েছে, সেখানে এই শুটকি শিল্প স্থাপন করা হচ্ছে। যাতে করে তারা সেখানে কাজ করে বেশি পরিমানে আয় করতে পারেন।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, এখন যে পদ্ধতিতে শুটকি তৈরি হচ্ছে সেটি পুরোপুরি সূর্যের আলো নির্ভর। ফলে শুটকিতে পোকা ধরে। এজন্য কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। এখন যে আধুনিক পদ্ধতিতে শুটকি তৈরি করা হবে তা এত স্বাস্থ্য সম্মত হবে, বিদেশেও রফতানী করা সম্ভব হবে।

একনেকে অনুমোদিত প্রকল্প গুলো হচ্ছে, যমুনা নদীর ডানতীর ভাঙ্গন হতে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলাধীন সিংড়াবাড়ী, পাটাগ্রাম ও বাঐখোলা এলাকা সংরক্ষণ প্রকল্প। পাঁচদোনা-ডাঙ্গা-ঘোড়াশাল জেলা জেলা মহাসড়কে একস্তর নীচু করে উভয় পার্শ্বে পৃথক সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প। এছড়া আমিনবাজার-মাওয়া-মংলা ৪০ কেভি সঞ্চালন লাইন প্রকল্প।

ব্রিফিং এ জানানো হয়, কক্সবাজার জেলায় শুটকি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১৯৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। চলতি মাস থেকে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে মাছ আহরণ করার পর অপচয় হ্রাস, আধুনিক পদ্ধতিতে মানসম্পন্ন শুঁটকি মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং কক্সবাজারের খুরুশকুল এলাকায় সাড়ে চার হাজার জেলে পরিবারের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। প্রকল্পের আওতায় আধুনিক পদ্ধতিতে বছরে প্রায় ১৪ হাজার টন মানসম্পন্ন শুঁটকিমাছ উৎপাদন করা যাবে। এছাড়া খুরুশকুলে ২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার আয়তনের অবতরণ শেড নির্মাণ, এক হাজার ৮৬০ বর্গমিটার আয়তনের ৪ তলা বিশিষ্ট ল্যাব, অফিস, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কাম ডরমেটরি নির্মাণ করা হবে। সেই সঙ্গে দুটি ওয়ে ব্রিজ এবং তিনটি পন্টুন গ্যাংওয়ে তৈরি করা হবে। এছাড়াও ৩৫০টি গ্রিন হাউজ মেকানিক্যাল ড্রায়ার এবং ৩০টি মেকানিক্যাল ড্রায়ারের পাশাপাশি প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি ও ৩৬টি শুঁটকি বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ