Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইন্টারনেট পরিষেবার মান বাড়াতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প বর্তমান সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার ভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্প। তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্বায়ণের সূত্রে বাংলাদেশ এখন ইন্টারনেট সুপারহাইওয়েতে প্রবেশ করেছে। চলমান করোনাকালীন বিশ্ববাস্তবতায় ইন্টারনেট পরিষেবা এখন একটি বিকল্পহীন মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা মহামারীর লকডাউন, শাটডাউনেও ঘরে বসে জরুরী পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, তথ্য আদানপ্রদান, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদনসহ নৈমিত্তিক সবকিছুই এখন ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে পড়েছে। এহেন বাস্তবতায় ইন্টারনেট পরিষেবার মান, স্বচ্ছতা, গতিশীলতা ও নিরাপত্তা এখন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। দু:খজনক বাস্তবতা হচ্ছে, ইন্টারনেটের প্রতি মানুষের নির্ভরতা যতই বাড়ছে, এ খাতের সেবার মান, অস্বচ্ছতা এবং বিড়ম্বনা নিয়ে মানুষের অভিযোগ ও সংক্ষোভ ততই বেড়ে চলেছে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশে ইন্টারনেটের গতিবৃদ্ধি ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে মোবাইলফোন অপারেটর ও আইএসপি কোম্পানীগুলো চটকদার বিজ্ঞাপণের ঢালি সাজালেও আদতে মানুষ প্রতিনিয়ত বঞ্চনা ও প্রতারণার শিকার হচ্ছে। বিশ্বে ইতিমধ্যেই পঞ্চম প্রজন্মের দ্রæতগতির ইন্টার সহজলভ্য হয়ে উঠলেও আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। আরো দুই বছর আগেই দেশে থ্রিজি থেকে ফোরজি ইন্টারনেট পরিষেবার নিশ্চয়তা দেয়ার পাশাপাশি ইন্টারনেট খরচ আদায় করা হলেও এখনো দেশের অধিকাংশ এলাকায় টুজি পরিষেবাও ঠিকমত পাওয়া যাচ্ছে না।

গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের অধিকাংশ এলাকায় ফোরজি’র দামে টুজি গতির ইন্টারনেট পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালাতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। আমরা গর্ব করে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্পের কথা বলছি বটে, কোটি কোটি মানুষ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে যুক্ত হলেও এ খাতে সেবার মানের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান প্রতিবেশী অনেক দেশের চেয়েও নিচে। বিশ্ব যখন ফাইভজির অভিজ্ঞতা লাভ করছে, সেখানে আমাদের দেশের ইন্টারনেট প্রোভাইডার ও মোবাইলফোন অপারেটররা থ্রিজি মানের সেবাও দিতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের অভিযোগ ও ভোগান্তির সমাধান ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার যেন কেউ নেই। ফোরজি পরিষেবার মূল্যে ইন্টারনেটের থ্রিজির গতিও পাচ্ছে না গ্রাহকরা। ব্রডব্যান্ড মানে ইন্টারনেটের প্রশ্বস্ত মহাসড়ক। আরো ৪ বছর আগেই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইথ এক মেগাবাইট থেকে কমপক্ষে ৫এমবিপিএস করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। বিশ্ববাস্তবতার নিরিখে তা ছিল সঠিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। তখনো দেশে থ্রিজি ইন্টারনেট চালু হয়নি। তবে সরকারের সেই সিদ্ধান্তের সাথে বাস্তবের মিল পাওয়া যাচ্ছে না। এখন কথিত ফোরজি’র যুগে এসেও ব্রডব্যান্ড গ্রাহকরা গতি পাচ্ছেন তিন এমবিপিএস।

করোনাকালে সামাজিক-অর্থনৈতিক কর্মকান্ড অব্যাহত রাখতে ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কোটি কোটি মানুষ অনেকটা বাধ্য হয়েই ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল হয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা বাস্তবায়নে বড় ধরণের অগ্রগতির দ্বারপ্রান্তে উপনীত। ব্যাংকিং, শপিং, শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক যোগাযোগের বিকল্প ক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ইন্টারনেট পরিষেবা। এ সময় এর শ্লথ গতি সব ধরনের কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। অথচ গতি ও সেবার মান না বাড়লেও নানা অজুহাতে ব্যান্ডউইথ মূল্য বাড়াচ্ছে সার্ভিস প্রোভাইডাররা। ইন্টারনেটের ঝুলন্ত তার অপসারণে বিটিআরসির নির্দেশনা দীর্ঘদিন ধরে অমাণ্য করায় সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশন ও বিটিআরসি’র তরফ থেকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ঝুলন্ত তার অপসারণের কাজ অব্যাহত রাখায় আইএসপি সংগঠনের তরফ থেকে সেবা বন্ধের হুমকি দেয়া হয়। এ খাতে সরকার শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে তথ্য প্রযুক্তি পরিষেবার গতি ও মান বৃদ্ধির উদ্যোগ নিলেও মোবাইলফোন ও সার্ভিস প্রোভাইডারদের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে সেবার মান ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। ইতিমধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় দফায় মানুষের কর্মকাÐ শিথিল হতে পারে। করোনাকালীন বাস্তবতা, ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প এবং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, সামাজিক-অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সেবা সকলের কাছে পৌছে দেয়া এবং ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির কার্যকর উদ্যোগ নেয়া এখন সময়ের দাবী। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি, অথচ আমাদের ইন্টারনেটের গতি এশিয়ার গড় গতির ছয়ভাগের একভাগ। এমনকি আফ্রিকার সাব-সাহারান অনেক দেশের চেয়ে ধীরগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করছি আমরা। এহেন বাস্তবতায় আমাদের ইন্টারনেট পরিষেবার গতি ও মানবৃদ্ধি কল্পে সরকারকে আরো দৃঢ় ও শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইন্টারনেট


আরও
আরও পড়ুন