Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নবী করিম (সা.)-এর বীরত্ব

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

হযরত আনাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমাকে অন্য লোকের ওপর চার বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে- দানশীলতা, বীরত্ব, পৌরুষশক্তি ও বিপক্ষের ওপর প্রাধান্য। তিনি নবুওয়াতের পূর্বে এবং নবী থাকাকালেও প্রতিপত্তিশালী ছিলেন। (নাশরুত তীব)।

হুনাইন যুদ্ধের সময় কাফেররা অবিশ্রান্ত তীর বর্ষণ করে সাহবায়ে কেরামের মধ্যে একপ্রকার অস্থিরতা ও চিত্তচাঞ্চল্য সৃষ্টি করে দিয়েছিল। কিন্তু রাসূলে আকরাম (সা.) নিজের অবস্থান একটুও পরিবর্তন করেননি। তিনি একটি অশে^র ওপর সওয়ার ছিলেন এবং আবু সুফিয়ান ইবনে হারেস তার অশ্বের লাগাম ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কাফেররা সরাসরি তাকে আক্রমণ করতে উদ্যত হলে তিনি অশ্ব থেকে নেমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থণা করেন এবং এক মুঠো মাটি হাতে নিয়ে শত্রুদের দিকে নিক্ষেপ করেন। তখন শত্রুপক্ষের এমন কেউ ছিল না, যার চোখে সে ধূলিকণা প্রবেশ করেনি। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন একটি কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন- যার অর্থ : আমি নবী, এতে কোনো মিথ্যা নেই। আমি বীর আবদুল মুত্তালিবের সন্তান।

সেদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) অপেক্ষা অধিক দুঃসাহসী, বীর ও নির্ভীক কাউকে দেখা যায়নি। (মাদারিজুন নবুওয়াত)। হযরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) অপেক্ষা না কোনো বীর, সবল ও উদারপ্রাণ ব্যক্তি দেখিছি এবং না অন্যান্য চরিত্রগুণেও তার চেয়ে পছন্দনীয় কাউকে দেখেছি। বদর যুদ্ধে আমরা তার আড়ালে আশ্রয় নিতাম। কারণ, বড় বীর তাকেই মনে করা হতো, যে যুদ্ধক্ষেত্রে তার সন্নিকেটে থাকত। কারণ, তখন তিনিই ছিলেন কাফেরদের নিকটবর্তী। (নাশরুত তীব)।

রাসূলে আকরাম (সা.) যেমনিভাবে অতুলনীয় সাহসী বীর ছিলেন, তেমনিভাবে অঙ্গীকার পালনে ছিলেন বদ্ধপরিকর। বদর যুদ্ধের সময় মুসলমানদের সংখ্যা খুবই সামান্য ছিল। এ মুহূর্তে একজন লোক পাওয়াও ছিল আনন্দের বিষয়। হুযাইফা ইবনে ইয়ামান ও অপর একজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে হাজির হলেন এবং আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমরা মক্কা থেকে এসেছি। পথিমধ্যে কাফেররা আমাদের গ্রেফতার করেছিল।

অবশেষে এই শর্তে মুক্তি দিয়েছে যে, আমরা যুদ্ধে আপনার পক্ষে যোগদান করব না; কিন্তু এটা তো ছিল অপারগ অবস্থার অঙ্গীকার। আমরা অবশ্যই কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হব। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, কখনোই না; তোমরা তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করো এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে যাও। আমরা মুসলমানদের কৃত অঙ্গীকার সর্বাবস্থায় পালন করব। আমাদের কেবল আল্লাহ তায়ালার সাহায্য প্রয়োজন। (সহীহ মুসলিম)।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবিল হাম্মাদ (রা.) বর্ণনা করেন, নবুওয়াত লাভের পূর্বে আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ থেকে কোনো বস্তু ক্রয় করেছিলাম, কিছু মূল্য বাকি ছিল। আমি ওয়াদা করলাম যে, অবশিষ্ট মূল্য নিয়ে আমি এ স্থানেই উপস্থিত হব। এরপর ঘটনাক্রমে কথাটা বেমালুম ভুলে গেলাম। তিনদিন পর স্মরণ হওয়ায় আমি সেখানে পৌঁছে দেখি, রাসূলে কারীম (সা.) সেখানে বিদ্যমান আছেন। তিনি বললেন, তুমি আমাকে কষ্টে ফেলে দিয়েছ। তিনদিন ধরে আমি এখানে তোমার অপেক্ষায় আছি। (আবু দাউদ)। এ ঘটনায় রাসূলে কারীম (সা.)-এর বিনয় ও ওয়াদা পালনের চ‚ড়ান্ত নমুনা রয়েছে। (মাদারিজুন নবুওয়াত)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাসূলুল্লাহ (সা.)
আরও পড়ুন