বছরের প্রথম অধিবেশন বসছে বিকেলে

একাদশ জাতীয় সংসদের এ বছরের প্রথম অধিবেশন বসছে আজ। সোমবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টায়
নাগরনো-কারাবাখকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ যুদ্ধের পরে অবশেষে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে শান্তি স্থাপিত হয়েছে। গত সোমবার রাশিয়া-তুরস্কের মধ্যস্থতায় শান্তির জন্য দেশ দুইটির মধ্যে চুক্তি সাক্ষরিত হয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, চুক্তির সমস্ত শর্তই গিয়েছে আজারবাইজানের পক্ষে। দেশটির পক্ষে তুরস্কের জোরালো সমর্থনের কারণে, রাশিয়াও বাধ্য হয় আজারবাইজানের সব দাবি মেনে নিতে। এর মাধ্যমে, রাশিয়ার পাশাপাশি এখন আঞ্চলিক ভ‚-রাজনীতিতে তুরস্ককেও নতুন শক্তি হিসাবে উঠে আসতে দেখা গেল।
চুক্তিতে ঠিক হয়েছে, সাম্প্রতিক যুদ্ধে যে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, সে সেখানেই থাকবে। আজারবাইজান শেষ কিছু দিনে নাগরনো-কারাবাখের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলি দখল করে ফেলেছে। রাজধানী লাগোয়া শুশা এখন তাদের দখলে। ফলে চুক্তিতে তাদেরই লাভ হয়েছে বেশি। চুক্তিতে আরও বলা হয়েছে, চলতি মাসের মধ্যেই আর্মেনিয়া নাগরনো-কারাবাখের জমি ছেড়ে দেবে। ফলে, এখন যুদ্ধ ছাড়াই পুরো এলাকা তাদের আয়ত্বে চলে আসবে।
এছাড়াও, আর্মেনিয়ার মধ্য দিয়ে সংযোগ করিডোর স্থাপন করতে পারবে তুরস্ক ও আজারবাইজান। আর্মেনিয়াও এই চুক্তি মানতে বাধ্য থাকবে, কারণ ইতিমধ্যে সেখানে দুই হাজার সেনা, ৯০টি ট্যাঙ্ক এবং ৩৮০টি সাঁজোয়া যান পাঠিয়েছে রাশিয়া। গতকাল থেকে গোটা এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী শক্তি হিসেবে সেখানে অবস্থান শুরু করেছে রাশিয়ার সেনা। পাশাপাশি তুর্কী সেনাও সেখানে অবস্থান করবে। চুক্তির পরেই আর্মেনিয়ায় মঙ্গলবার থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে বিক্ষোভ। আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনয়ান মঙ্গলবারও বলেছেন, মন ভার করেই তাকে এই চুক্তি মেনে নিতে হয়েছে। মঙ্গলবার থেকেই আর্মেনিয়ায় এই চুক্তির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সরকারি অফিসের সামনে জনগণ লাগাতার আন্দোলন করছে। কেন সরকার এই চুক্তি মেনে নিল, তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। চুক্তি ভেঙে ফের আক্রমণের কথাও বলছেন অনেকে। যদিও রাশিয়া এলাকায় সৈন্য মোতায়েন করে দেয়ার পর তা আর সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে, আজারবাইজানের এই প্রাপ্তি শুধুমাত্র তুরস্কের সমর্থনের কারণেই অর্জিত হয়েছে। এ কারণে তুরস্কের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। শান্তিচুক্তি হওয়ার পর মঙ্গলবার তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলো, প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার, সেনাবাহিনীর পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডার ওমিত দুনদার ও জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হাকান ফিদান বাকু সফরে গেলে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট তাদের কাছে দেশবাসীর পক্ষ থেকে ওই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘যুদ্ধের গত ৪৪ দিন তুরস্ক আমাদের সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করেছে। এ বিজয় আমাদের তুর্কি ভাইদেরও বিজয়। কারণ তাদের সহযোগিতা ছাড়া গত তিন দশক ধরে অবৈধভাবে আর্মেনিয়ার দখলে থাকা অঞ্চলটি আমরা পুনরুদ্ধার করতে পারতাম না।’ তুর্কি ওই প্রতিনিধিদলকে রাজধানী বাকুতে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। এর পর তাদের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট। এ সময় তিনি বলেন, কারাবাখ যুদ্ধে মূলত, তুর্কি ভাইদের অবদানের কথা আজারবাইজানের মানুষ সবসময় শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রাখবে।
তুরস্কে রজব তাইয়্যেপ এরদোগান ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মুসলমানদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয়েছেন। লিবিয়া, সিরিয়ার পাশাপাশি তারা আজারবাইজানকেও জোরালো সমর্থন জানিয়ে আসছিল। তুরস্ক আজারবাইজানকে ড্রোন ও সামরিক পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি আর্মেনিয়ার মিত্র ফ্রান্স ও গ্রীসকেও সাহায্য প্রদানে বাধা দিতে সক্ষম হয়। তাদের উপস্থিতির কারণে আঞ্চলিক পরাশক্তি রাশিয়াও এতদিন নিষ্ক্রিয় থেকেছে। চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে, লিবিয়া ও সিরিয়াতেও তুরস্ক-রাশিয়ার মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। সেই ক্ষেত্রগুলোতেও তারা প্রবল পরাশক্তি রাশিয়ার সাথে সমানে সমানে দিয়ে আসছে। আর্মেনিয়ায় রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি থাকলেও তুরস্ক যুদ্ধের ফলাফল পুরোপুরি আজারবাইজানের পক্ষে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে, সারা বিশ্বেই এখন তুরস্কের প্রতি সমীহের সৃষ্টি হয়েছে। আরববিশ্বেও এরদোগান প্রচন্ড জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। এর পেছনে কারণ হিসাবে রয়েছে ফিলিস্তিনের পক্ষে এরদোগানের জোরালো অবস্থান, সিরিয়ার লাখ লাখ শরণার্থীকে নিজ দেশে আশ্রয় ও মানবিক সেবা প্রদান এবং হাজার হাজার আরব শিক্ষার্থীকে তুরস্কে বিনা খরচে লেখাপড়ার সুযোগ দান, আরববিশ্বে পশ্চিমাদের অযাচিত হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ, আমেরিকা ও রাশিয়ার মতো বিশ্বশক্তির বিরুদ্ধে সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ ইত্যাদি। বিশেষত আরব বসন্তের পর আরব শাসকরা যখন আরববিশ্বে মুসলিম জাগরণের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা পালন করেছেন, তখন এরদোগান ইসলামপন্থীদের পক্ষে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন। মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তিউনিসিয়া এমনকি সউদী শাসকরা যখন আরবদের চিরাচরিত মুসলিম পরিচিতি এবং সত্তাকে খাটো করার চেষ্টা করছেন, এরদোগান তখন মুসলিম পরিচিতি তুলে ধরতে দ্বিধাহীনভাবে সোচ্চার। এটা আরববিশ্বের বহু মানুষকে আকৃষ্ট করছে।
শান্তি চুক্তিতে কি লাভ হলো: আজারবাইজান যেহেতু পুরো অঞ্চলটি মুক্ত করার প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। তাই এ মুহূর্তে যুদ্ধ বিরতির চুক্তি কিছুটা লোকসানের মতো মনে হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, চুক্তিতে আসলে লাভ হয়েছে আজারবাইজানের। কারণ, প্রথমত গত ২৮ বছর ধরে যে কাজটি করতে পারেনি সেটি তারা দুই মাসের মতো সময়ে করে দেখিয়েছে। দ্বিতীয়ত, আর্মেনিয়া আর কখনও আজারবাইজানের সামনে দাঁড়ানোর সাহস করবে না। তৃতীয়ত, যুদ্ধ না করেই তারা প্রায় সব এলাকা ফেরত পাবে। চতুর্থত, আর্মেনিয়ার মিত্রদের উপরে এটি তুরস্কের জন্য একটি কূটনৈতিক বিজয়। তুরস্কের সীমান্ত সংলগ্ন আজারবাইজানের ভূখন্ড নাখচিভান ছিটমহল থেকে আর্মেনিয়ার মধ্য দিয়ে আজারবাইজানের মূল ভূখন্ডে একটি করিডোর করার অনুমতি দেয়া হয় এই নতুন চুক্তিতে। এই করিডোরের মাধ্যমে তুরস্ক থেকে আজারবাইজানে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহন অনেক সহজ হবে। আগে স্থল পথে আজারবাইজানে যেতে জর্জিয়ার ওপর দিয়ে কয়েক হাজার কিলোমিটার পথ পারি দিতে হত। তবে তুরস্কের সবচেয়ে বড় পাওয়া হল বিশ্বজুড়ে তার সামরিক শক্তির প্রদর্শনী। তুরস্ক সিরিয়া, ইরাক এবং লিবিয়ার পরে তুরস্ক আবারও প্রমাণ করল যে, আঙ্কারা যার সঙ্গে থাকে তাকে শেষ পর্যন্ত সবকিছু দিয়ে সহযোগিতা করে। আর তুরস্কের অস্ত্র ও রণকৌশলের কাছে ছোটখাট দেশের সেনাবাহিনী দাঁড়ানোর ক্ষমতা রাখে না। সূত্র : ডন, রয়টার্স, এপি, আনাদলু এজেন্সি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।