Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শীতের ফলের গুণাগুণ

| প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

রোগ চিকিৎসা থেকে প্রতিরোধই উত্তম। শীত আমাদের নানা দু:খ-কষ্টের কারণ হলেও সাথে নিয়ে আসে হরেক রকমের খাদ্য ও ফলমূল যা আমাদের মওসুমি রোগবালাই প্রতিরোধ করে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। আমরা জানি, বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন রোগের আগমন ঘটে। কিন্তু আল্লাহ এতই মেহেরবান যে, ওইসব মওসুমি রোগ প্রতিরোধের জন্য হরেক রকম ফলমূলও দান করেন, যাতে তার প্রিয় বান্দারা সুস্থ থাকতে পারে ওইসব ফলমূল খেয়ে। কিন্তু যারা এসব ফলমূল না খেয়ে অন্য কিছু খায় তারা নানা রোগের শিকার হয়।

ফলের দেশ-বাংলাদেশ। আমাদের দেশে প্রায় ৭০ রকমের ফল জন্মে। দেশি ফলগুলো রঙে, রসে, স্বাদে অনন্য। শুধু খাদ্য হিসেবেই নয় দেশীয় ফলগুলোর রয়েছে বৈচিত্র্যময় ব্যবহার। ফল আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। খাও ফল বাড়বে বল-প্রবাদটি খুবই সত্য। আল্লাহর অমূল্য নিয়ামত এই ফল। আসুন আমরা জেনে নিই কী কী ফলমূল খেলে শীতে সুস্থ থাকতে পারি।

শীতকালের প্রধান ফল হলো কমলা। যদিও এখন বিজ্ঞানের বদৌলতে আমরা সারা বছরই কমলা পাই। শীতের কমলাকে ফলের রাজা বলা যায়। গুণে মানে কমলা তুলনাহীন। কমলা বিভিন্ন জাতের হয়। দার্জিলিংয়ের কমলার এক সময় অনেক নাম ছিল। ভারতে এই কমলা সুলভ হলেও আমাদের দেশে দুর্লভ। বাংলাদেশে সিলেটের কমলা সমগ্র বাংলাদেশের চাহিদা পূরণ করত। আশির দশকের পর সরকারের উৎসাহে আবার সিলেট, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পঞ্চগড়ে কমলার চাষ শুরু হয়। এখন আমরা দেশী কমলা খাই। কমলা ভিটামিন-সমৃদ্ধ জনপ্রিয় ফল। আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই কমলা খেতে পারে। কমলা ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ বিধায় আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যাদের এই ভিটামিনের ঘাটতি আছে, তারা কমলা খেয়ে এই ঘাটতি পূরণ করতে পারেন। প্রতিদিন সকালে যদি নাশতার সময় কমলা খাওয়া যায়, তাহলে আমরা অনেক রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারি। হৃদরোগীদের জন্য কমলা খুবই উপকারী। যারা অপুষ্টিতে ভুগছেন, তারা প্রতিদিন কমপক্ষে একটা কমলার রস পান করুন, অতিদ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন। সদ্য রোগমুক্ত লোক এবং সদ্যপ্রসূতি মায়েরা কমলা খেলে সুস্থ হয়ে উঠবেন। একটা নতুন কথা। আমরা কমলা কেনার সময় মিষ্টি কমলা খুঁজি। কিন্তু পুষ্টিবিদদের মতে, মিষ্টি কমলা অপেক্ষা ঈষৎ টক কমলা বেশি উপকারী। যাদের ঘন ঘন ঠান্ডা লাগে, তাদের প্রতিদিন নিয়মিত কমলা খাওয়া উচিত।

কুল- কুল হচ্ছে শীতের আরেক জনপ্রিয় ফল। সামান্য সময়ের জন্য এই ফল পাওয়া যায়। তবু যত দিন পাওয়া যায় আমরা কুল খেয়ে ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করতে পারি। কুল নানা জাতের হয়। যেমন-আপেল কুল, বাউকুল, বিবি কুল ইত্যাদি। যে জাতের হোক কুল খুব ভিটামিন সমৃদ্ধ ও পুষ্টিকর। কুলের পাতা ও গাছের ছাল খুবই উপকারী। কবিরাজ, হেকিম বৈদ্যদের পরামর্শ মোতাবেক এই পাতা ও ছাল প্রয়োগ করলে অর্শ, ফোড়া, হৃদরোগ, কোষ্ঠবদ্ধতা, আমাশয় প্রভৃতি ভালো হয়।

কামরাঙা- কামরাঙা শীতের আরেকটি ফল। যদিও এটার চাষ খুব কমই দেখা যায়। এই ফল দুই জাতের। একটি খুব বড় ও অন্যটি ছোট। কাঁচা-পাকা দু’ভাবেই খাওয়া যায়। একটি জাত টক, অন্যটি মিষ্টি। কামরাঙা কামড়ে ও সালাদ করে খাওয়া যায়। এ ফলটিও অত্যন্ত ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ। ডালিম ও বেদানা বা আনার - ডালিম ও বেদানা বা আনার একই জাতের ফল। এটিও শীতে বেশি দেখা যায়, যদিও সারা বছরই এটি আমাদের দেশে পাওয়া যায়। তবে ডালিম আমাদের দেশে খুব কম চাষ হয়। গ্রামে কেউ কেউ শখ করে উঠানের পাশে হয়তো একটা ডালিম গাছ লাগায়। ডালিম ফুলের রঙ মনোলোভা লাল টকটকে। এর ভেতরের দানাগুলো হালকা লাল। স্বাদ একটু কষ কষ। কিন্তু বিদেশী বেদানার ভেতরে দানাগুলো গাঢ় লাল এবং খুবই রসালো ও স্বাদে মিষ্টি। কবিরাজের পরামর্শ মোতাবেক বেদানা খেলে হৃদরোগ, আমাশয়, গর্ভস্রাব, অজীর্ণ, রক্তপিত্ত ও অরুচি দূর হয়। শিক্ষার্থীদের মেধা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সফেদা- সফেদা শীতের আরেকটি অত্যন্ত মিষ্টি ফল। দেখতে গাবের মতো অসুন্দর। দেখতে ভালো না হলেও সফেদা অত্যন্ত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ফল। যারা অপুষ্টিতে ভুগছে, তারা সফেদা খেতে পারে। যারা অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং ক্লান্ত, তারাও এই ফল খেতে পারে। যাদের হার্টের দুর্বলতা আছে তাদের জন্যও উপকারী। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। মহিলাদের প্রসবান্তিক দুর্বলতায় সফেদা উপকারী। যেসব মায়ের বুকে দুধের স্বল্পতা আছে, তারা সফেদা খেলে বুকের দুধ বৃদ্ধি পাবে।

পেঁপে- পেঁপে শীতের আরেকটি সহজলভ্য ফল। পেঁপে আল্লাহর এমন একটি নিয়ামত যে, এটা কাঁচা, পাকা, ভাজা রান্না, সালাদ যেভাবে খাওয়া হোক; কোনো ক্ষতি নেই। যারা গ্যাস্ট্রিক, বুক জ্বালাপোড়া, পেট ফাঁপা বা অজীর্ণ রোগে ভুগছেন; তারা নিয়মিত পেঁপে খেলে উপকার পাবেন। অর্শ রোগীদের জন্যও পেঁপে উপকারী। লিভার সমস্যায় পেঁপে অমোঘ ওষুধ। বদহজম, পাকস্থলীর আলসারে পেঁপে খুবই ভালো। কবিরাজ, হেকিম ও বৈদ্যদের পরামর্শে খেলে বহু রোগ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। তাই পাকা ফলে তুষ্ট মন যোগায় পুষ্টি বাড়ায় ধন। দৈনিক একটি করে পেঁপে খাও, বাড়ির বাইরে ডাক্তার তাড়াও।

ফল বিষমুক্ত করার নিয়ম-ফল অন্তত ১ ঘন্টার জন্য পানিতে ডুবিয়ে রাখুন এতে উপরে লেগে থাকা কেমিক্যালের মাত্রা কমে যাবে এবং খাবার উপযোগী হবে।

ডা: মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবা : ০১৭১৬২৭০১২০।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফলের-গুণাগুণ

১৩ নভেম্বর, ২০২০
আরও পড়ুন