Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আবারও গৃহযুদ্ধের দিকে ইথিওপিয়া?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

দীর্ঘ যুদ্ধের ক্ষত বহন করে চলা ইথিওপিয়া আরেকটি গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ল। প্রধানমন্ত্রী আবিই আহমেদের ফেডারেল সরকারের অনুগত বাহিনীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে টাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট (টিপিএলএফ)। ইথিওপিয়ার ১০টি আধা-স্বায়ত্তশাসিত ফেডারেল রাজ্যের একটি টাইগ্রে। উত্তরাঞ্চলীয় এ রাজ্যটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে প্রতিবেশী দেশ ইরিত্রিয়া, আর ঢেউ লেগেছে সুদানেও। যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে বাঁচতে হাজার হাজার ইথিওপিয়ান আশ্রয় নিয়েছেন সুদানে। টাইগ্রের নেতা ডেব্রেটসন গেব্রেমাইকেল বলছেন, ইথিওপিয়ার স্পেশাল ফোর্স ও ইরিত্রিয়ার সৈন্যরা মিলে টাইগ্রেতে সমন্বিত হামলা চালিয়েছে। ১৯৭৪ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে পতন হয় রাজা হেইলে সেলাসির। ক্ষমতা দখল করে নেন দ্য ডের্গ নামের এক সামরিক জান্তা। সামরিক বাহিনী তখন দশ হাজারেরও বেশি তরুণকে হত্যা করে। পরের বছরই ডের্গ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে টিপিএলএফ। সেই থেকে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক জান্তার দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। টিপিএলএফ ও দ্য ইথিওপিয়ান পিপলস রেভল্যুশনারি ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইপিআরডিএফ) যৌথ হামলায় ১৯৯১ সালে সামরিক সরকারের পতন হয়। এরপর ইথিওপিয়ার রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে টাইগ্রের আঞ্চলিক দল টিপিএলএফ। ইপিআরডিএফ ক্ষমতা থাকে ২৭ বছর, সে সময় দুর্ভিক্ষ বিদায় নেয় এবং শিশুমৃত্যুর হার পাঁচজনে একজন থেকে কমে ২০ জনে একজনে নেমে আসে। বড় আকারের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে। যদিও ইথিওপিয়া গণতন্ত্র দেখেনি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আবিই ও তার অনুসারীরা একে বলেন ‘অন্ধকারাচ্ছন্ন ২৭ বছর’। উঠতি তরুণ প্রজন্ম দেখল রাজনীতিতে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত। তারা দেখতে পেল, টাইগ্রেয়ানরা তাদের নিজেদের স্বার্থেই রাজনীতি, সেনাবাহিনী আর অর্থনীতিতে কর্তৃত্ব করে। কয়েক দশকের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৯৩ সালে ইথিওপিয়া থেকে স্বাধীন হয়ে যায় ইরিত্রিয়া। যদিও ১৯৯৮ সালে ইথিওপিয়ার সঙ্গে ফের যুদ্ধে জড়ায় ইরিত্রিয়া। ২০০০ সালে সেই যুদ্ধ থামলেও উত্তেজনা জিইয়ে ছিল প্রায় দুই দশক। ২০১৮ সালে আবিই আহমেদ ক্ষমতায় আসার পর ইরিত্রিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এ কারণে ২০১৯ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। যদিও শান্তি দীর্ঘস্থায়ী হলো না। এখন ইথিওপিয়ার ক্ষমতাসীন সরকারের নতুন মাথাব্যথার কারণ টাইগ্রে। আবিই আহমেদের সরকারকে সমর্থন করে সীমান্তে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে ইরিত্রিয়া, যার জবাবে শনিবার ইরিত্রিয়ার রাজধানী আসমারায় রকেট ছুড়েছে টিপিএলএফ সেনাবাহিনী। রোববার নিজের মুখেই এ কথা স্বীকার করেছেন টিপিএলএফ নেতা ডেব্রেটসন গেব্রেমাইকেল। আসমারায় অবস্থানরত পাঁচজন আফ্রিকান ক‚টনীতিকও শনিবারের এ রকেট হামলার কথা স্বীকার করেছেন। অবশ্য আলাদা হয়ে যেতে যুদ্ধ করছে না টিপিএলএফ। আবিই আহমেদ কর্তৃক কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তাদের কোণঠাসা করে দেয়ার কারণে টাইগ্রেতে অসন্তোষ নেমে আসে। ২০১৮ সালে জনবিক্ষোভের পর হাইলিমারিয়াম দেশালেগন সরকারের পতন হলে ক্ষমতায় বসেন আবিই আহমেদ। এরপর থেকেই টাইগ্রের নেতারা অভিযোগ করতে থাকেন, বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে, সরকারের বিভিন্ন পদ থেকে সরিয়ে তাদের ক্রমাগত কোণঠাসা করে ফেলেন আবিই সরকার। ফলে গত বছর আবিই সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় টিপিএলএফ। চলতি বছর সেপ্টেম্বরে টাইগ্রেতে আঞ্চলিক নির্বাচনের পর পরিস্থিতি জটিল হয়। করোনাভাইরাসের কারণে নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল আবিই সরকার। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় টাইগ্রের নির্বাচনকে বেআইনি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার এবং আবিই টাইগ্রেতে বিমান হামলার ঘোষণা দেন। বিবিসি অবলম্বনে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইথিওপিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ