Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শীর্ষ চরমপন্থী সন্ত্রাসী শীর্ষ ত্রাস কসাই সিরাজের কর্মকাণ্ডের পরিসমাপ্তি ও শত খুনের আদ্যোপান্ত

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০২০, ৭:১৪ পিএম

কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শীর্ষ চরমপন্থী সন্ত্রাসী শীর্ষ ত্রাস কসাই সিরাজের কর্মকাণ্ডের পরিসমাপ্তি ও শত খুনের আদ্যোপান্ত। আজ সারাদিন ব্যাপী কুষ্টিয়াসহ প্রন্তত্য গ্রাম অঞ্চলে আলোচনার বিষয় ছিল কসাই সিরাজ কে নিয়ে। মিরপুর উপজেলার হালসা আমবাড়ীয়া গ্রামের সেই দুর্ধ্বর্ষ 'সিরাজ-বাহিনী'র প্রধান সিরাজ (৬১) মৃত্যুবরণ করেছেন বলে সংবাদ পাওয়া গেছে। গত ১৭নভেম্বর মঙ্গলবার রাতে লন্ডনে একটি মসজিদে নামাজরত অবস্থায় স্ট্রোকজনিত কারণে মৃত্যুবরনের মধ্যদিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটলো তার সকল কর্মকান্ডের।
দেশে তার মাটি হলো না সূদূর ইংল্যান্ডের লন্ডনে তার জানাযা শেষে ১৮ নভেম্বর স্থানীয় গৌরস্থানে দাফন করা হয় বলে আমবাড়ীয়া গ্রামের নিকটতম সূত্রে জানা যায় মৃত্যুকালে তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। কসাই সিরাজ নিজ নামে, স্ত্রীর নামে, পুত্র ও কন্যার নামে দেশে ও বিদেশে অঢ়েল সম্পদ রেখে গেছেন বলে সূত্রে জানা যায়।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আন্ডারওয়ার্ল্ড কাঁপানো দুর্ধ্বর্ষ চরমপন্থী সন্ত্রাসী শীর্ষ ত্রাস সিরাজ। এক সময়ে তার বাহিনীর দাপটে কাঁপতো কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। ১৯৯৯ সালের ২৩ জুলাই কুষ্টিয়া স্টেডিয়ামে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দিয়ে সিরাজ তার ১০৮ সহযোগীসহ আত্মসমর্পণ করেন৷ সিরাজ বাহিনী আত্মসমর্পণ করায় কুষ্টিয়ার আমবাড়িয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এখন পর্যন্ত শান্ত। কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যেখানে প্রতিদিন খুনের হোলিখেলা শুরু হয়েছিল। সকালে ঘুম ভাঙলেই লাশের মিছিল। এই রক্তের হোলি খেলা বন্ধ করেন দেশের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তাঁর সন্ত্রাস বিরোধী বক্তব্য আর সন্ত্রাসীদের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা সন্ত্রাসীদের পিলে চমকে দেয়। অস্ত্রসহ সন্ত্রাসীদের আত্মসমর্পন দেশের মানুষকে তাক লাগিয়ে দেয়।
আজ সেই বিপ্লবী, প্রতিবাদী, বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ নাসিম চলে গেছেন পরপারে। কিন্তু তাঁর সন্ত্রাস বিরোধী কর্মকান্ড জাতি যুগ যুগ ধরে স্মরণ করবে শ্রদ্ধার সাথে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদান করায় দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।

১৯৯৯ সালের ২৩ জুলাই কুষ্টিয়া স্টেডিয়ামে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দিয়ে সিরাজ ও তার ১০৮ সহযোগী আত্মসমর্পণ করে। সে সময় সিরাজ আত্মসমর্পণ করলেও তার বাহিনীর একাংশ বাইরে রয়ে যায়৷ পরে সিরাজ বাহিনীর একাধিক সদস্য প্রশাসনের নিকট আটক হলে তাদের কাছ থেকে জানা যায় সিরাজ-বাহিনীর অজানা অনেক লোমহর্ষক কাহিনী৷ ১৯৯৯ সালে কুষ্টিয়ার সিরাজ-বাহিনীর কিছু সদস্য অস্ত্র সমর্পণ করে। বাকী সদস্যরা স্বাভাবিক জীবনযাপনের চেষ্টা করেও ফিরে আসতে পারেনি। তাই চুয়াডাঙ্গা জেলার চরমপন্থী সন্ত্রাসী নুরুজ্জামান লাল্টুর 'বাংলার কমিউনিস্ট' বাহিনীতে যোগ দেয়। পেছনে ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে ডারা বলেন বলে, সিরাজ বাহিনী মানুষকে ধরে এনে ইটের ভাটায় জীবন্ত পুড়িয়ে মারত। দামুড়হুদা থানার নতিপোতা ইউপি সদস্য মতেহার আলীকে হাত-পা বেঁধে চিমনির ভেতরে ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়। চাঁদা দিতে অপরাগতা জানালে ডা. এ কে মুখার্জীকে চরমপন্থীরা তীক্ষ্ম ফলা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। ১৯৯৪ সালে ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু থানার কাপাসটিয়া ইউনিয়নের গোলাপনগর গ্রামের আত্তাব বুড়োকে হত্যা করে তার লাশ ৩ টুকরো করে ৩ স্থানে ফেলে রাখে। একই থানার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের বরুণ গোলাপকে একটি বস্তায় ভরে বস্তার মুখ বন্ধ করে চরমপন্থীরা খেজুরের কাঁটা দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৪ই জুন ঝিনাইদাহ কারাগার থেকে দীর্ঘদিন পর তিনি মুক্তি পান।তারপরে তিনি আত্মগোপন করেন ও ভিতর ভিতরে সবাইকে ম্যানেজ করে তিনি কবে যে দেশ ত্যাগ করেছেন কেও বলতে পারে না। পরে জানা যায় লন্ডনে বসবাসরত তার ছেলে ফিরোজ আহমেদ কাছের একটি ভাড়া বাসায় দীর্ঘদিন ধরে এই শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রবাস জীবনে আত্মগোপন করছিলেন৷কুষ্টিয়ায় শীর্ষ চরমচন্থী সন্ত্রাসী তাদের প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয় বাকি সন্ত্রাসীরা র্যাব ও পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। মাদকের গডফাদারের মধ্যে দু-এক জন বেচে আছেন ও বাকিরা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

 

সিরাজ বাহিনীর শত খুন ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড

মুকুটহীন সম্রাট সিরাজ লিডারের আদ্যোপান্ত

সিরাজ ১৯৫৯ সালে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর থানার আমবাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করে৷ তার পিতার নাম মোসলেম মন্ডল, যিনি কার্যত ভূমিহীন৷ মাটি কাটার শ্রমিক দলের সরদারী করা ছিল তার মূল পেশা৷ সিরাজরা পাঁচ ভাই ও দুই বোন৷ এলাকাবাসী জানায়, সিরাজের দাপট, অন্ধকার জগত্‍ যত বৃদ্ধি পেয়েছিল, তার আত্মীয় স্বজনের কর্তৃত্ব ও খবরদারিও ততটা সহ্য করতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে৷ সিরাজের শিক্ষা জীবন শুরু হয়েছিল আমবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাতে৷ এরপর সে হালসা হাই স্কুলে ভর্তি হয় এবং অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে৷

আমবাড়িয়া গ্রামে মূল বিরোধ সৃষ্টি হয় স্বাধীনতার পক্ষ এবং বিপক্ষ শক্তির অবস্থান থেকে৷ ওই গ্রামের মাহবুবুল হক ছিল পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সহযোগী এবং শান্তি কমিটির সেক্রেটারি৷ মাহবুবুল হক মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিযোদ্ধা মজনুর বাড়ি পুড়িয়ে দেয়৷ মজনু এর ক্ষতিপূরণ দাবি করলে সে তরুণ সিরাজকে দলে যুক্ত করে এবং লেলিয়ে দেয় মজনুর বিরুদ্ধে৷ পরে অবশ্য মাহবুবুল হককে জাসদ গণবাহিনী মৃত্যুদন্ড দেয় এবং তা কার্যকর করে৷ সিরাজ দমে যায় সাময়িকভাবে৷ পরে গা বাঁচাতে যোগ দেয় জাসদ গণবাহিনীতে৷ এ সময় সে স্বাধীনভাবে চুরি-ডাকাতিও করত৷ গণবাহিনী অবলুপ্ত হলে সিরাজ নিজেকে রক্ষা এবং গ্রামবাসীর কাছে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য প্রথমে মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করে৷ কিছুদিন পর ইমামের অবর্তমানে সে নিজেই অস্থায়ীভাবে ইমামের দায়িত্ব পায়৷ মসজিদের নামে গ্রামের এক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কিছু সম্পত্তি লিখে দেন৷ সিরাজ দাবি জানায়, তাকে মসজিদের স্থায়ী ইমাম নিযুক্ত করা হোক এবং সম্পত্তির একটি অংশও লিখে দেয়া হোক তার নামে৷ তার অতীত কার্যকলাপের জন্য গাঁয়ের অধিকাংশ লোক এতে অসম্মতি জানায়৷ গাঁয়ের মানুষের পক্ষে এ ব্যাপারে নেতৃত্ব দেন মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলাম৷ স্বাধীনতাবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী সিরাজ এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অস্থায়ী ইমামের কাজ ছেড়ে দেয়৷ জাসদ গণবাহিনীর সদস্য থাকাকালে সিরাজের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার পাইকপাড়ার রফিকুলের৷ তিনি এক সময় গণবাহিনীর সঙ্গে ছিলেন এবং তার জিম্মায় ছিল একটা কাটা রাইফেল৷ ১৯৭৭ সালে রফিকুলকে হত্যা করে সিরাজ তার কাটা রাইফেল লুট করে নেয়৷ আলমডাঙ্গার আক্তার ডাকাতকে সে দলে ভিড়িয়ে গঠন করে একটি চরমপন্থী সন্ত্রাসী বাহিনী৷

খুনের জগতে সিরাজের যেভাবে হাতেখড়ি

মসজিদের ইমাম থেকে সিরাজ একদিন এক বিস্তৃৃর্ণ জনপদের মূর্তিমান আতঙ্ক হবে, সে কথা বৃহত্তর কুষ্টিয়া কেন, তার নিজ গ্রাম আমবাড়িয়ার মানুষও কোনো দিন ভাবেননি৷ সিরাজের বিভীষিকাময় রাজত্ব থেকে পালিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদরে আশ্রয় নেয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বললেন, ‘তার সুললিত কণ্ঠে যখন পবিত্র কুরআনের আয়াত শোনা যেত, মুয়াজ্জিন হিসেবে আজান দিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে, তখন মনে হতো সিরাজ একদিন পরিণত বয়সে ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবে এলাকার মানুষের মনে আশ্রয় করে নেবে৷ কিন্তু সে যে এক সময় কালের কুখ্যাত ঘাতক হবে, মানুষকে ঠান্ডা মাথায় সরিয়ে দেবে পৃথিবী থেকে, তা একবারও মনে হয়নি আমাদের৷

বাংলাদেশের অপরাধ জগতের ইতিহাসে সত্যি সত্যিই সিরাজ এক কুখ্যাত কিংবদন্তি৷ মূলত কৌশল এবং ধীরস্থিরভাবে সে তার ক্যাডারদের পরিচালনা করতে সক্ষম হওয়ায় প্রায় ক্ষেত্রেই প্রতিপক্ষরা তার কোনো ক্ষতি করতে পারেনি৷ সে কারণে সিরাজ নিজ উপজেলা বা থানা মিরপুরসহ কুষ্টিয়া সদর, দৌলতপুর, ভেড়ামারা, কুমারখালী, খোকসা, ঝিনাইদহের শৈলকুপা, হরিনাকুন্ড, মেহেরপুরের গাংনী, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা এবং সদরের বিভিন্ন অংশে তার বাহিনী দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাতে সক্ষম হয়েছে৷

অনেক মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারী সিরাজ

পাঁচ বছরের শিশু রাজীবের ছোট্ট স্বপ্নিল নিষ্পাপ ভুবনে রাজনীতি, অস্ত্রবাজি কিংবা গ্রাম্য দলাদলির কূটচাল কখনো স্থান পাওয়ার কথা নয়৷ তার জীবনের চৌহদ্দি ছিল ছোট বাসাটির সীমানা প্রাচীর অবধি৷ যেদিন ঘাতকরা এসেছিল তখনও বাবা ফয়েজ উদ্দিনের বুকে মাথা রেখে শিশু রাজীব ঘুমে অচেতন৷ সে ঘুম তার আর কোনো দিনও ভাঙেনি৷ উত্তপ্ত বুলেট বুক বিদীর্ণ করে দিয়েছিল আলমডাঙ্গা শহরে বাবা ফয়েজ উদ্দিনের সঙ্গে শিশু রাজীবেরও৷ যখন লাশ উদ্ধার হয়েছিল পিতা-পুত্রের, তখন রাজীব তার কচি দু’হাত দিয়ে ধরে রেখেছিল পিতাকে৷ এই নৃশংস মর্মান্তিক দৃশ্য সেদিন যারাই দেখেছিলেন, তাদের কারও অবস্থা স্বাভাবিক ছিল না৷ কঠিন হৃদয়ের মানুষও চোখের পানিতে বুক ভাসিয়েছেন৷ একাত্তরের অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মিরপুর থানা এলাকায় যারা খ্যাতি লাভ করেছিলেন, তাদের একজন সিরাজেরই নিজ গ্রাম আমবাড়িয়ার আমিরুল ইসলাম৷ স্বাধীনতার পরও গ্রামে স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যে বিরোধ ছিল তাতে সিরাজ রাজাকারদের পক্ষ নিয়েছিল৷ সিরাজ সন্ত্রাস জীবনে পা বাড়ানোর পর যে গণপ্রতিরোধ গড়ে ওঠে তার নেতৃত্ব দেন আমিরুল৷ সিরাজ তার বাহিনী নিয়ে আমিরুলকে হত্যা করে ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে৷

প্রায় ১০০ হত্যাকান্ডে সিরাজ এবং তার বাহিনী সংঘটিত করে কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর, ঝিনাইদাহ, চুয়াডাঙ্গার সদর এবং আলমডাঙ্গার বিভিন্ন গ্রামে৷ ওপরে যাদের নামের তালিকা দেয়া হয়েছে, তাদের অনেকের লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি৷ আত্মীয়স্বজন নিখোঁজ হলে অনেকে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন সিরাজের সঙ্গে৷ তাদের লাশ ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সিরাজ মোটা অঙ্কের অর্থও হাতিয়ে নিয়েছে৷ কিন্তু স্বজনদের লাশ আর ফেরত দেয়নি৷ সিরাজের বিরুদ্ধে আত্মসমর্পণের আগে দায়ের করা মামলার সংখ্যা গোটা পনেরো৷ অনেক হত্যাকান্ডে ব্যাপারে মামলা হলেও আসামি করার সাহস হয়নি সিরাজকে৷ কারণ ১৯৯৬ সালের ২৬ নভেম্বর একটি মামলায় সাক্ষ্য দিতে গিয়ে কুষ্টিয়ার আদালতের সামনে সিরাজ বাহিনীর হাতে নিহত হন হাসেম৷ বাদী সিরাজের নাম দেননি প্রাণভয়ে৷

সন্দেহের বশেই অনেককে খুন করেছে সিরাজ

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেও যেন প্রায় তিন দশক চলছে ‘খুনের বদলে খুন’৷ কুষ্টিয়া সদর থানার মাঝিলা গ্রামের নিরীহ চারজনকে প্রাণ দিতে হয়েছিল শুধু প্রতিপক্ষের সন্দেহের কারণে৷ এক পক্ষ সিরাজ বাহিনী৷ অন্যপক্ষ বিপবী কমিউনিস্ট (এমএল)৷ স্থানীয় লোকজন এ তথ্য জানান৷ ওই নিহতের তালিকায় আছেন খোদ আইলচারা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক মাস্টার৷ খালেক মাস্টার কৃষক সংগ্রাম সমিতি করতেন, যে সংগঠনটিকে বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির প্রকাশ্য গণসংগঠন বলা হয়৷ সিরাজ বাহিনী তার এলাকা সম্প্রসারিত করার জন্য মিরপুর থানা সংলগ্ন কুষ্টিয়া সদরের আইলচারা, আলামপুর, পাটিকাবাড়ি এবং ঝাউদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ক্যাডার সংগ্রহ করতে থাকে৷ ওই এলাকাটি আগে ছিল বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল) কর্তৃত্বে, যেহেতু এই দলটি সে সময় পরিচালিত হতো রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এবং এর সদস্যরা যখন-তখন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারত না দলের নির্দেশ ছাড়া৷ তাই সিরাজ খুব দ্রুত তার সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে৷ মাঝিলা, নান্দিয়া, হারুরিয়া, মাগুরা, দুর্গাপুর, পাটিকাবাড়ি, ফকিরাবাদ, খেজুরতলা ও গোপালপুর চরপাড়ায় সিরাজ বাহিনী অবস্থান নেয়৷ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির অবস্থান ছিল খোর্দ আইলচারা, নাজিরপুর, সাওড়াতলা, কেষ্টপুর, মাঝপাড়া, ঝাউদিয়া, বাকুলিয়াসহ আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামে৷ মাঝিলার আজিমুদ্দিনের সঙ্গে সিরাজ বাহিনীর ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক৷ কয়েক বছর আগে এক বিকালে আজিমুদ্দিনকে অপহরণ করে একদল সন্ত্রাসী৷ খালমাগুরার বড়চর শ্মশানের কাছে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে৷ গ্রামবাসীর ভাষ্য, এই হত্যার সঙ্গে যুক্ত বিপবী কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল)৷ এরপর অতিক্রান্ত হয়েছিল মাত্র দুটি রাত৷ অন্যান্য দিনের মতো সেদিন সকাল সকাল খোর্দ আইলচারা হাইস্কুলে এসেছিলেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক (৪০)৷ তখনই সেখানে প্রবেশ করে সিরাজ বাহিনীর সশস্ত্র ক্যাডাররা৷ অস্ত্রের মুখে তারা মাগুরার খালের সেই শ্মশানের কাছে নিয়ে হত্যা করে আব্দুল খালেক মাস্টারকে৷ এরপর আরও দুটি লাশ পড়ে মাঝিলায়৷ খালেক মাস্টারের নিকটাত্মীয় জহুরুল এবং গোলাপের লাশে সিক্ত হয় ওখানকার মাটি৷ এ দুজনও খুন হয় সিরাজ বাহিনীর হাতে৷ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তারা নাকি বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির সহায়তাকারী৷ কিন্তু গ্রামবাসীর বক্তব্য, এ সব হত্যাকান্ড ছিল নিছক সন্দেহের বশে৷

সন্দেহের বশে চিরতরে নিখোঁজ হতে হয়েছে কুষ্টিয়া সদর থানার গোস্বামী দুর্গাপুর গ্রামের অতি সাধারণ দরিদ্র পরিবারের সন্তান বুড়োকে(২২)৷ ১৯৯৪ সালের ঘটনা এটি৷ বুড়ো সংসার চালাত ডাব বিক্রি করে৷ গাঁয়ের মানুষের কাছে ‘আধা পাগলা’ বলে সে পরিচিত ছিল৷ কিন্তু এই বুদ্ধিহীন সরল যুবককেই সিরাজ বাহিনী সন্দেহ করে বসে বিপ্লবী কমিনিস্ট পার্টির সোর্স হিসেবে৷ আলমডাঙ্গা বাজার থেকে ফেরার পথে বকশীপুর বাঁশের সাঁকোর কাছ থেকে সিরাজ বাহিনী তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়৷ এভাবে অনেক মানুষ নিখোঁজ আছেন এখনো৷ যারা ভাগ্যবান তাদের পরিবার হয়ত লাশ পেয়েছে৷ এ রকম ভাগ্যবানদের একজন সিদ্দিক৷ সিরাজের শ্বশুরবাড়ি আলমডাঙ্গার বেলগাছি গ্রামে তার বাড়ি৷ পেশায় ছিলেন ব্যবসায়ী৷ গ্রামে আছে বড় একটি জলাশয়৷ যেটি বরাবর লিজ দেয়া হয় মসজিদের নামে৷ ওই জলাশয়ের আয় দিয়ে মসজিদের খরচ চলে৷ কিন্তু এর ওপর দৃষ্টি পড়ে সিরাজের শ্বশুরবাড়ির পক্ষের আত্মীয় ছলেমান ও অন্যদের৷ তারা গ্রামবাসীকে জানিয়ে দেয় যে, এবার মসজিদের নামে জলাশয় ডাকা চলবে না৷ নিজেরাই ডেকে নেবে৷ এটা সিরাজের নির্দেশ৷ গ্রামবাসী জোটবদ্ধ হয় এবং সিদ্দিকের ওপর দায়িত্ব পড়ে সে যেন সিরাজের কাছে এই আবেদন পৌঁছে দেয়৷ এটাই বিপদ ডেকে আনে সিদ্দিকের৷ ১৯৯৮ সালের মাঝামাঝি সিদ্দিককে অপহরণ করা হয় বেলগাছি থেকে৷ সিরাজ আত্মসমর্পণের পর জানা যায়, সিদ্দিককে হত্যার পর লাশ পুঁতে রাখা হয় জগন্নাথপুরের ঠান্ডুর জমিতে৷ সিরাজ আত্মসমর্পণের পর অনেক হত্যাকান্ডের ঘটনা জানা যায়৷

কুষ্টিয়া সদরের পটিকাবাড়ি ইউনিয়নের খেজুরতলা গ্রামের সাহসী যুবক ছিলেন কলি৷ ১৯৯৫ সালের (রমজান ১৩) প্রকাশ্য দিবালোকে সিরাজ এবং তার সহযোগীরা নওদাপাড়া ব্রিজের কাছ থেকে কলিকে অপহরণ করে৷ মুক্তিপণ দাবি করা হয় ৬০ হাজার টাকা৷ তারপরও তাকে হত্যা করা হয়৷ থানায় যাওয়ার অপরাধে তাদের বাড়িতে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা৷ মিথ্যা মামলা দিয়ে কলির এক ভাইয়ের জমি লিখে নেয় সিরাজের এক চাচা৷ তিনি আবার সাবেক চেয়ারম্যান৷ ওই চেয়ারম্যানের নির্দেশে কলির চাচাত ভাই গনিকে হত্যা করা হয়৷ কলিকে হত্যা করা হয় নৃশংস ভাবে৷ সে যখন মারা যায়, তখন কলির একমাত্র শিশুপুত্রের বয়স আড়াই বছর৷

সিরাজ ও তার বাহিনীর নারী নির্যাতন

বিয়ে বাড়ির আনন্দঘন পরিবেশ নিশুতি রাতে তখন ছিল উজ্জ্বল৷ গুরুজনরা মনে মনে প্রার্থনা করছিলেন-তাদের জীবন হোক ফুলের মতো পবিত্র সুন্দর৷ কিন্তু তাদের নতুন জীবন শুরুর সেই মুহূর্তটি সিরাজ বাহিনীর অন্যতম অধিনায়ক ইসরাইল ও তার সঙ্গীরা তছনছ করে দিয়েছিল৷ আগ্নেয়াস্ত্র বুকে ঠেকিয়ে বরকে চলে যেতে বাধ্য করেছিল ইসরাইল ও সঙ্গীরা৷ তরুণী বধূর সুন্দর স্বপ্নকে তারা পরিণত করেছিল দুঃস্বপ্নে৷ ধর্ষক ও নারী নির্যাতনকারী হিসেবে কুখ্যাতি পাওয়া সিরাজ অবশ্য একদিন তার এই প্রিয় অধিনায়ক ইসরাইলকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিলো৷

নববধূর ঘটনাটি সিরাজ আত্মসমর্পণের কয়েক বছর আগেকার ঘটনা৷ মীরপুর থানা সংলগ্ন আলমডাঙ্গা থানার একটি গ্রাম৷ ওই গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে প্রেম ছিল এক তরুণীর৷ কিন্তু তরুণীর অভিভাবক ওই বিয়েতে রাজি ছিলেন না৷ সিরাজ বিষয়টি জানতে পারে৷ খবর দিয়ে ওই যুবককে ডেকে নিয়ে বলে, বিয়ের ব্যাপারে মেয়ের বাবাকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার৷ বিনিময়ে এত টাকা দিতে হবে৷ টাকার অঙ্কও ধার্য করে দেয় সিরাজ৷ যুবকটির পরিবার ভয়ে বহু কষ্টে টাকা যোগাড় করে সিরাজের হাতে তুলে দেয়৷ আসলে ওটা ছিল এক ধরনের চাঁদাবাজি৷ সিরাজ তার অন্যতম অধিনায়ক মীরপুরের ভেদামারীর ইসরাইলকে নির্দেশ দেয়, সে যেন ওই পাত্রীপক্ষকে বিয়েতে রাজি করায়৷ অবশেষে দু’পক্ষই নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর বিয়ের দিন ধার্য করে৷ বেশ আনন্দঘন পরিবেশেই বিয়ের পর্ব সমাধা হয়৷ পাত্রপক্ষের বাড়িতে দাওয়াত খেতে যায় ইসরাইল ও তার কয়েক সঙ্গী৷ কনে দেখার অজুহাতে প্রবেশ করে বাসর ঘরে৷ এরপর যে ঘটনা ঘটে তা ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন৷ ইসরাইল নাকি অস্ত্রের মুখে ঘর থেকে বরকে বের করে দেয়ার সময় বলেছিল, ‘তুই তো সারা জীবন এই সুন্দরীকে ভোগ করবি৷ আর আমরা শুধু একটি রাতের জন্য তাকে চাই৷’

ওই একই সময় ইসরাইল জগন্নাথপুর স্কুলে এক এনজিওকর্মীকে ধর্ষণ করেছিল৷ ধর্ষিতার কর্ম এলাকা ছিল জগন্নাথপুর ও এর আশপাশের কয়েকটি গ্রাম৷ তাকে দেখে পছন্দ হয় ইসরাইলের৷ কয়েক দিন রাস্তায় উত্ত্যক্ত করে৷ তরুণী সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেন৷ কিন্তু সেদিন পারেননি৷ তখন দুপুর ছুঁই ছুঁই৷ অস্ত্রের মুখে ইসরাইল ও তার সঙ্গীরা তরুণীকে জগন্নাথপুর স্কুলে নিয়ে যায়৷ তারা অস্ত্র বুকে তাক করে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের চলে যেতে বাধ্য করে৷ ঘটনাটি নিয়ে সে সময় এনজিওদের মাঝে তোলপাড় হয়েছিল৷ ঘটনাটি সিরাজকে ভাবিয়ে তুললে সে ইসরাইলকে দল থেকে বহিষ্কার করে৷ ‘মৃত্যুদন্ড ‘ দেয়া হয় তাকে, যা কার্যকরও করে সিরাজ বাহিনী ১৯৯৮ সালে৷ যদিও ধর্ষণের অভিযোগে ‘মৃত্যুদন্ড‘ দেয়া হয় বলে সিরাজের পক্ষে প্রচার চলেছিল সে সময়৷ কিন্তু অন্য সূত্রগুলো জানায়, দলের অভ্যান্তরীন বিবাদ ও ইসরাইলের মৃত্যুদন্ড অনিবার্য করে তোলে৷ ইসরাইল একা নয়, সিরাজ বাহিনীর বহু সদস্যের বিরুদ্ধে নারীর সম্ভ্রমহানির অভিযোগ আছে৷ বাহিনীর সদস্যরা সশস্ত্র অবস্থায় বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নানান বাড়িতে থাকত৷ সুন্দরী গৃহবধূ কিংবা কন্যা কোনো বাড়িতে থাকলে নজর পড়ত তাদের ওপর বাহিনীর সদস্যদের৷ অভিভাবকরা আতঙ্কিত থাকতেন সব সময়৷ শ্রীরামপুর গ্রামে এক সুন্দরী যুবতীর ওপর নজর পড়েছিল স্বয়ং সিরাজের৷ যুবতী সিরাজের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি৷ ঘটনাটি নিয়ে গাঁয়ের মানুষের ক্ষোভ থাকলেও প্রতিবাদ করার সাহস ছিল না৷ ১৯৯৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকের ঘটনা৷ সিরাজ দিনের বেলা ওই যুবতীর বাড়িতে যায়৷ সঙ্গে ছিল তার বিশ্বস্ত কয়েক দেহরক্ষী৷ আলমডাঙ্গা পুলিশের একটি বড় দল ওই গাঁয়ে গিয়েছিল সেদিন পলাতক এক আসামি ধরতে৷ সিরাজের গোয়েন্দারা তাকে আগেই খবর জানিয়ে দেয় যে, গাঁয়ের দিকে পুলিশ আসছে৷ সিরাজ নিরাপদে গ্রাম ত্যাগ করে৷ ঘটনাটি সিরাজকে অত্যাান্ত ক্ষুব্ধ করে৷ তার ধারণা, ওই যুবতী কিংবা তার আত্মীয়স্বজন অথবা প্রতিবাদী কেউ পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করেছে৷ সে পুলিশের সোর্স খুঁজে বের করতে একটি ‘তদন্ত কমিটি’ গঠন করে৷ তারা চিহ্নিত করে গাঁয়ের চার যুবককে৷ এরা হলো মহর আলী, জামাল, শরিফ ও মমিন৷ ১৯৯৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর প্রকাশ্য দিবালোকে সিরাজ বাহিনীর চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ সশস্ত্র ক্যাডার গ্রামটি ঘিরে ফেলে৷ ওই ৪ যুবককে অপহরণ করে নিয়ে যায়৷ সিরাজ বলে, এ অঞ্চলের সব কিছু আমি নিয়ন্ত্রণ করি৷ আর আমার এলাকায় ওরা পুলিশ আনে ৷ ওদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই৷ এরপর গ্রাম থেকেই প্রহার করতে করতে এদেরকে পাটিকাবাড়ি ও ডম্বলপুর গ্রামের মাঝামাঝি এক বটগাছের নিচে নিয়ে যায়৷ শারীরিক নির্যাতনের ফলে ঘটনাস্থলেই মহর ও জামাল মারা যায়৷

খুন হয়েছেন যারা, তাদের কয়েকজন,

কত মানুষ নিহত, অপহৃত বা নিখোঁজ হয়েছেন সিরাজ ও তার বাহিনীর হাতে, বলা কঠিন৷ তবে যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন মিরপুর থানার মালিহাদের মুক্তিযোদ্ধা মারফত আলী, আমবাড়িয়ার মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলাম, আব্দুল মতিন ওরফে বাবু সোনা, মোজাম, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নান, মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী, মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম, ছোট মুনি, আবুল হাসেম, সবিরন নেছা, হালসার কুদরত আলী, নগরবাঁকার আমীত মন্ডল, পাঁচবাড়িয়ার সমের আলী, ভেদামারির ইসরাইল রহমান, আলম, বামননগরের আলাউদ্দিন, আব্দুর রশিদ, কুরশার নাসের, জহুরুল, শহীদুল, মোফা, ফক্কর আলী, পুটিমারীর সানোয়ার হোসেন, দোধা মন্ডল, ঝরু মন্ডল, ফসরার মতিয়ার ফকির ও তার স্ত্রী, সুতাইলের কাওসার আলী, নান্দিরার রাকিব ও বাবু, রাজনগরের আব্দুল হামিদ ওরফে সালাম, রমজানপুরের আব্দুল গনি, তেঘরিয়ার আবু বক্কার, মাঝিহাটের জাজু, মালিহাদের কুদরত আলী ও মতিয়ার, মেহেরনগরের রহমত ও আয়নাল, পুটিমারীর রোসনাই, গোপনাথপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মারফত আলী ও হাবিবুর রহমান, কমলাপুর কুষ্টিয়ার বাহক, কুষ্টিয়া শহরের হুর আলী, মাঝিলার আব্দুল খালেক মাস্টার, আইয়ুব কারিগর, আলম, গাজী জহুরুল হক ও রবজেল, গোপালপুরের মনছুর আলী, গজনাইপুরের সোনা মিয়া, খেজুরতলার কাসেম চৌকিদার, জলপাড়ার আলেক চাঁদ, পটিকাবাড়ির গোলাপ, উসমান, আজিজ, আকবর, ফকিরাজের গোপাল, হাড়ুলিয়ার মঈনুদ্দিন ও লুত্‍ফর, শঙ্করদিয়ার জানু, আলমডাঙ্গা পারকুলার কোরবান আলী, মাইকপাড়ার রফিকুল হাবিলদার, ফিরোজ, রেজাউল, আবু হার, আব্দুর রাজ্জাক মাস্টার, গওহর আলী চেয়ারম্যান, সহিদুল আলম ও চতুর আলী, আলমডাঙ্গা শহরের ফয়েজ উদ্দিন ও তার শিশুপুত্র রাজীব, ঘোষবিলার বাবুল, বিনোদপুরের মন্টু, শিউলী খাতুন ও বাদল, জগন্নাথপুরের সিরাজুল, রেজাউল ও আনোয়ারুল, ডম্বলপুরের আলাউদ্দিন, বক্সিপুরের আফতাব উদ্দিন, তাহের ফকির, আলম, আহম্মদ আলী ও সুরত আলী, বেলগাছির সিদ্দিক আলী, হারিনারায়ণপুরের স্বপন সাহা, ফুলবাড়িয়ার ফকির মোহাম্মদ ওরফে আফাজ৷ আটিগ্রামের দুজন ছাড়াও মারফত আলীর অন্যতম সঙ্গী আয়নালকেও সিরাজ খুন করে৷



 

Show all comments
  • SADMAN ISLAM ১৯ নভেম্বর, ২০২০, ৮:২৯ পিএম says : 0
    কমিউনিষ্ট পার্টি নামে কত সাধারণ মানুষ যে খুন হয়েছে তার সঠিক হিসাব নেই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ