Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিচার শুরু হলে থেমে যাবে ধর্ষণ

মুনিয়া মুন | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশে ধর্ষণ বাড়ছে, বেড়েছে নারীর প্রতি সহিংসতাও। কঠোর আইন, প্রচার-প্রচারণা ও উচ্চ আদালতের নানা ধরনের নির্দেশনার পরেও নারীর প্রতি সহিংসতা কমানো যাচ্ছে না। হাইকোর্ট প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিযোগ সেল গঠনসহ কতিপয় নির্দেশনা দেয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানা রকম প্রচারণায় নামে, কিন্তু কোনো কিছুতেই কার্যকর ফল হচ্ছে বলে মনে হয় না। ধর্ষণ দিনদিন বেড়েই চলছে। বেপরোয়া হয়ে উঠছে ধর্ষকরা। ক্ষমতা ও প্রভাবশালীদের বলয়ে আশ্রয়-প্রশ্রয়ে রক্ষাও পেয়ে যাচ্ছে তারা।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এ বলা হয়েছে: ১. যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে তাহলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হইবেন। ২. যদি কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণ পরবর্তী তাহার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে তাহা হইলে উক্ত ব্যাক্তির মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যূন একলক্ষ টাকা অর্থদন্ডেও দন্ডিত হইবেন। ৩. যদি একাধিক ব্যক্তি কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ফলে উক্ত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তাহা হইলে ঐ দলের প্রত্যেক ব্যাক্তি মৃত্যুদন্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যূন এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে ও দন্ডনীয় হইবেন। ৪. যদি কোনো ব্যাক্তি কোনো নারী বা শিশুকে- (ক) ধর্ষণ করিয়া মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যাক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হইবেন। (খ) ধর্ষণের চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ বছর কিন্তু অন্যূন পাঁচ বছর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হইবেন। ৫. যদি পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে কোনো নারী ধর্ষিত হয়, তাহা হইলে যাহাদের হেফাজতে থাকাকালীন উক্তরূপ ধর্ষণ সংগঠিত হয়েছে, সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ ধর্ষিতা নারীর হেফাজতের জন্য সরাসরি দায়ী ছিলেন, তিনি বা তাহার প্রত্যেকে ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হইলে, হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য অনধিক দশ বছরের কিন্তু অন্যূন পাঁচ বছর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত দশ হাজার টাকা অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হইবেন।
কথা হচ্ছে, এসব আইন দেশে চালু থাকা সত্তে¡ও কেন থেমে নেই ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধ? এটা কি জাতির মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করে না? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে দেখা যায়, বাংলাদেশের আইনের দুর্বলতার কারণে ধর্ষণের মামলায় অনেক অভিযুক্তরা পার পেয়ে যাচ্ছে বলে মানবাধিকার কর্মীদের অভিযোগ। তারা বলছেন, আইনের মধ্যে এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো ধর্ষিতার বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে দেখা দিচ্ছে। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, ২০১১ থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ছয়টি জেলায় ধর্ষনের মামলা পর্যবেক্ষণ করেছে এবং তাতে দেখা গেছে ৪৩৭২টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে, কিন্তু সাজা হয়েছে মাত্র পাঁচ জনের। প্রতিদিন চলছে অসংখ্য ধর্ষণ আর এসব ধর্ষণের বিচার কার্য কড়াকড়ির অভাবে পার পেয়ে যায় অপরাধীরা। অবশেষে গণদাবির প্রেক্ষিতে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ড করা হয়েছে সম্প্রতি। তারপরও ধর্ষণে ছেদ পড়েনি। আসলে আইন প্রণয়ন করাই যথেষ্ট নয়। তা যথাযথভাবে বলবৎ করা না গেলে ধর্ষণ বন্ধ হবে না।

ধর্ষণ প্রতিরোধে আইনের সাথে সাথে সামাজিক প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই। ধর্ষণ আসলে কোনো হালকা বিষয় নয়। এটা নারী নির্যাতন। কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেজন্যই আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এই সঙ্গে চাই সামাজিক জাগরণ ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার। আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং প্রতিটি সচেতন নাগরিকের প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের সমন্বয়েই সব ধরনের নারী নির্যাতনের অবসান ঘটানো সম্ভব। অপরাধ করলে তার জন্য শাস্তি পেতে হবে, কোনভাবেই রেহাই পাওয়া যাবে না, এ বার্তা ধর্ষক-সন্ত্রাসীদের কাছে পৌঁছাতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো প্রকার নমনীয়তা দেখানো চলবে না। পারিবারিক ও রাজনৈতিক চাপ দিয়ে সন্ত্রাসী-দুর্বৃত্তদের বাঁচানো যাবে না, এই বিশ্বাস সাধারণ মানুষের মধ্যেও তৈরি করতে হবে। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দিলে সে মামলা যাতে কোনো ধরনের টালবাহানা না করে গ্রহণ করা হয় সে জন্য পুলিশ প্রশাসনকে দায়িত্বশীল ও সক্রিয় হতে হবে। এ লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে জনগণের সৃষ্ট দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে। পুলিশকে গণমানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে।



 

Show all comments
  • Jack Ali ২১ নভেম্বর, ২০২০, ৬:০০ পিএম says : 0
    Only Islam is the Answer.... We must rule our country by the Law of Allah...So many type of crime is happening because our country is ruled by the Man Made Law. Human being is the Creation of a Creator The Al-Mighty Allah [SWT] He clearly mentioned in the Qur'an that He is the only Legislator.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্ষণ


আরও
আরও পড়ুন