কত সুধা আছে সেই মধুর আজানে-১

মহাকবি কায়কোবাদ তার বিখ্যাত আজান কবিতায় বলেছেন: কে ঐ শোনাল মোরে আজানের ধ্বনি। মর্মে মর্মে
তাবেয়ী যুগের একটি গল্প, হেলাল ইবনে ইসাফ (রহ.)-এর ঘরে মেহমান হলেন মুনযির ইবনে যালা সাওরী (রহ.)। দুজনই বিখ্যাত তাবেয়ী। প্রবীন তাবেয়ী রবী ইবনে খুসাইম (রহ.) তখনো জীবিত। হেলাল ইবনে ইসাফ অতিথিকে বললেন, চলুন না, শায়খের সাথে দেখা করে আসি। কিছু সময় ঈমানের কথা শুনে আসি। রবী ইবনে খুসাইম ছিলেন তাবেয়ীদের শায়েখ, গুরুজন ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি।
অতিথি মুনযির সাথে সাথে প্রস্তুত হয়ে গেলেন, অবশ্যই চলুন। কুফায় এসেছিই তো শায়েখ রবী ইবনে খুসাইমের সাথে সাক্ষাতের আশায়। তবে একটা কথা, শায়খের কাছে কি আমাদের যাওয়ার জন্য অনুমতি নেয়া হয়েছে? আমি শুনেছি, অসুস্থতার পর থেকে তিনি নাকি ঘরেই অবস্থান করেন, সেখানেই ইবাদতে মশগুল থাকেন, সাক্ষাৎ-মোলাকাত পছন্দ করেন না।’ হেলাল ইবনে ইসাফ বললেন, তাঁর নির্জনপ্রিয়তা অসুস্থতার কারণে নয়। বরং কুফাবাসী আজীবন এমনই দেখে আসছে। অসুস্থতা তাঁর মধ্যে কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি।
দুজন প্রস্তুত হলেন। শায়খের কাছে যাবেন। তার আগে দুজন একটি জরুরি আলোচনা সেরে নিলেন। পাঠক! একটু লক্ষ্য করুন, শায়খের কাছে যাওয়ার আগ মুহূর্তে তাদের আলোচনাটা কী ছিল! লক্ষ করুন এবং অনুভব করুন। কথা কিংবা আচরণে অন্যের যেন কোনো কষ্ট না হয় সে দিকে তাদের কেমন সজাগ দৃষ্টি ছিল! মুনযির বললেন, ‘কিন্তু আপনি তো জানেন এ পর্যায়ের মুরুব্বীদের মেযাজ বড়ই নাযুক।’ তাঁর কাছে গিয়ে কি কোনো প্রশ্ন করব, না তিনি নিজ থেকে যা বলেন, চুপচাপ তাই শুনতে থাকব? হেলাল বললেন, রবী ইবনে খুসাইমের তবিয়ত তো হলো, তুমি তার সামনে এক বছরও যদি বসে থাক, নিজে অগ্রসর হয়ে কোনো কথা বলবেন না। তুমি প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেবেন। হেলাল ও মুনযির এরপর রবী-এর কাছে গেলেন।
প্রিয় পাঠক! এরপর তাদের মধ্যে কী কী কথা হলো এবং আরো কী কী ঘটনা ঘটল সেসব এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজনীয় মনে করছি না। ঘটনার যতটটুকু উল্লেখ করা হলো তাতেই আমাদের জন্য অনেক বড় শিক্ষা নিহিত রয়েছে। সেই শিক্ষার মূল কথাটি হলো, প্রত্যেকের সাথে তার মেযাজ ও তবিয়ত বুঝে আচরণ করা উচিত। হেলাল ও মুনযির (রহ.) রবী ইবনে খুসাইমের মজলিসে যাওয়ার আগে দেখুন তার মেযাজ ও তবিয়ত সম্পর্কে পরস্পরকে কীভাবে অবিহিত করছেন। সামাজিক জীবনের শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং সৌহার্দ্য ও স¤প্রীতি প্রতিষ্ঠার বিরাট বড় একটি হাতিয়ার হলো, এই মেযাজ বুঝে চলা। রাসূলে কারীম (সা.)-এর যিন্দেগির বিভিন্ন ঘটনায় আমরা এই শিক্ষারই বহু নজির দেখতে পাই।
রাসূলে কারীম (সা.)-এর এ আদর্শটি বর্তমানে দারুণভাবে অবহেলিত হচ্ছে। বিশেষ করে দেখা-সাক্ষাতের ক্ষেত্রের এ আদর্শটি বর্তমানে আমাদের সমাজ থেকে হারিয়ে গেছে বললে অত্যুক্তি হবে না। কারো সাথে দেখা করার সময় আমরা নিজের সুবিধা ও স্বার্থগুলো আগে দেখি। যার সাথে দেখা করতে গেলাম তার সুবিধা-অসুবিধার প্রতি আমাদের নযর থাকে না। যে ব্যক্তির মেযাজ-তবিয়ত জানা নেই, তার সাথে সাক্ষাৎ করতে চাইলে আগে তার কোনো নিকটজন থেকে তার মেযাজ-তবিয়ত জেনে নেওয়া উচিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।