Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চলে ৭ লাখ হেক্টরে রবি ফসল আবাদের পরিকল্পনা বাস্তায়ন করছেন কৃষি যোদ্ধাগন

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২০, ৫:১৩ পিএম

চলতি রবি মৌসুমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো সহ গম, গোল আলু, মিষ্টি আলু, ভুট্টা,শীতকালীন সবজী, তেল বীজ, মসলা, ডাল জাতীয় ফসল এবং তরমুজ ও সয়াবীন চাষের লক্ষে কৃষি যোদ্ধাগন প্রস্তুতি শুরু করেছেন। তবে গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’এর পরে ভাদ্রের বড় অমাবশ্যায় ভর করে লঘুচাপের প্রভাবে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ার আর উজোনর ঢলের সাথে প্রবল বর্ষনে গোটা দক্ষিণাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় উঠতি আউশের ক্ষতির সাথে আমন বীজতলা ও রোপা আমনেরও ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরেও অমাবশ্যার ভরা কোটালে ভর করে আরো দু দফার প্রবল বর্ষনে দক্ষিণাঞ্চলের আগাম রবি ফসল সহ রোপা আমনের ব্যপক ক্ষতি হয়। তিন দফার অতিবর্ষনে এবার দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি জমিতে দীর্ঘদিন পানি আটকে ছিল। এখনো অনেক জমি থেকে পানি সম্পূর্ণ সরে যায়নি। ফলে দক্ষিণাঞ্চলে রবি ফসল আবাদ এবার কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে।
তবে আউশ ও আমনের সব ক্ষতি কাটিয়ে এ অঞ্চলের কৃষি যোদ্ধাগন রবি আবাদের মাধ্যমে ঘুরে দাড়াবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত বছর রবি মৌসুমে এ অঞ্চলে যেখানে ৬ লাখ ৮৮ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসলের আবাদ হয়েছিল, কৃষি মন্ত্রনালয় এবার সেখানে ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৫ শ হেক্টরে এসব ফসল আবাদের লক্ষ্য নির্ধারন করেছে। এ তথ্য কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র।
ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে আমনের জমিতে থোর ও ফুল আসতে শুরু করেছে। আর দিন পনেরর মধ্যেই আমনের কর্তন শুরু হয়ে চলবে পৌষের শেষ ভাগ পর্যন্ত। ইতোমধ্যে কৃষকরা বোরো বীজতলা তৈরীর কাজও শুরু করেছেন। অন্যন্য রবি ফসল আবাদও শুরু হয়ে যাবে খুব সহসাই।
একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় অতিক্রম করেই দক্ষিণাঞ্চলে এবার ৬ লাখ ১৫ হাজার ৯২২ হেক্টর জমিতে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১৮ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে পৌছানের ব্যাপারে আশাবাদী ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। পাশাপাশি চলতি রবি মৌসুমে এ অঞ্চলে গত বছরের সোয়া লাখ হেক্টরের স্থলে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫১৬ হেক্টরে বোরো আবাদের মাধ্যমে ৬ লাখ টনেরও বেশী চাল উৎপাদণের লক্ষ্য রয়েছে। বিদায়ী খরিপ-১ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে আউশ উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ৬ লাখ টনেরও বেশী।
এছাড়া প্রায় ৫২ হাজার হেক্টরে শীতকালীন শাক-সবজী, ৩৫ হাজার হেক্টরে তরমুজ, ৭ হাজার হেক্টরে গম, ১৩ হাজার ৫১ হেক্টরে মিষ্টি আলু, ৯ হাজার ৫১ হেক্টরে গোল আলু, ১০,১৭৫ হেক্টরে ভ’ট্টা, আড়াই হাাজার হেক্টরে আখ, ৬,১২৯ হেক্টরে শসা, ক্ষিরা ও মর্মা ছাড়াও ১,৩৮৪ হেক্টরে ফুট আবাদের লক্ষ্য অর্যনে কাজ শুরু করেছেন দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি যোদ্ধাগন।
এসব ফসলের বাইরেও দক্ষিনাঞ্চলে এবার প্রায় ৪৩ হাজার হেক্টরে বিভিন্ন ধরনের তেল জাতীয় ফসল আবাদের লক্ষ নির্ধারন করেছে কৃষি মন্ত্রনালয়। এরমধ্যে ২৩ হাজার হেক্টরে চিনা বাদাম, ১৩ হাজার হেক্টরে সরিষা, ৪,২১২ হেক্টর সূর্যমূখী, ২,৪৫৩ হেক্টরে তিল ও প্রায় সোয়াশ হেক্টরে তিসির আবাদ হচ্ছে। এছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলে এবার আরো প্রায় ২৪ হাজার হেক্টরে সয়াবিনের আবাদ হচ্ছে। উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে ৭০ হাজার টন। তবে দক্ষিণাঞ্চলের সম্ববনাময় এ তেলবীজ আজ পর্যন্ত কোন তেলকলে ভোজ্যতেল উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছেনা। বিভিন্ন পোল্ট্রী ফিড-এর কারখানার নিয়োজিত ফিড়য়ারা মাঠ থেকেই সয়াবীন তেল বীজ সংগ্রহ করে তা প্রাণি খাদ্যের উপকরন হিসেবে ব্যবহার করছে। উপরন্তু দক্ষিনাঞ্চলে সূর্যমূখি উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভবনা থাকলেও শুধুমাত্র বিপননের অভাবে এর আবাদ সম্প্রসান হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
দক্ষিণাঞ্চলে এবার প্রায় ৩ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ডাল জতীয় ফসলের আবাদ হচ্ছে। এরমধ্যে মুগ ডালই আবাদ হচ্ছে প্রায় ২ লাখ ১ হাজার হেক্টরে। যা দেশে মোট মুগ আবাদের প্রায় ৬০ ভাগ। এছাড়া ১ লাখ ৫ হাজার হেক্টরে খেশারী, ২৩ হাজার হেক্টরে ফেলন, প্রায় ৪ হাজার হেক্টরে মুশুর, ১ হাজার হেক্টরে ছোলা ও প্রায় ৫০ হেক্টরে মাসকালাই ও মটর ডালের আবাদ হচ্ছে।
এসবের বাইরে দক্ষিণাঞ্চলে চলতি রবি মৌসুমে প্রায় ৪৬ হাজার হেক্টরে মসলা জাতীয় ফসলের আবাদ হচ্ছে। যার মধ্যে মরিচই আবাদ হচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টরে। এছাড়া ১ হাজার ৬শ হেক্টরে পেয়াঁজ, ১ হাজার ১শ হেক্টরে রসুন ছাড়াও ৩ হাজার হেক্টরে ধনিয়া এবং প্রায় ৮শ হেক্টরে আদা,কালোজিরা ও হলুদের আবাদ হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
এবার গত জুলাই মাসে সারা দেশে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান স্বাভাবিকের চেয়ে ১১.৩% বেশী হলেও বরিশাল অঞ্চলে তা ছিল ১৫.৬% কম। জুন মাসেও সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ২% বেশী বৃষ্টি হলেও বরিশাল অঞ্চলে তা ছিল ০.৬% কম। কিন্তু আগষ্ট,সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে অতিভারি বর্ষনে ফসলের আবাদ ও স্বাভাবিক উৎপাদন যথেষ্ঠ ব্যাহত হচ্ছে।
তবে এসব কিছুর পরেও সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে চলতি রবি মৌসুমে সব ধরনের ফসলের আবাদ ও উৎপাদন নিয়ে কৃষকদের পাশাপাশি কৃষি মন্ত্রনালয় ও কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল যথেষ্ঠ আশাবাদি বলে জানিয়েছেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ