Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জব্দকৃত যানবাহনের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক বহন ও সড়ক দুর্ঘটনার কারণে মটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাইভেটকার, বাস, পিকআপ, সিএনজি ও লরি জব্দ করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। মামলা-মোকদ্দমার আলামত হিসেবে এসব যানবাহন জব্দ করা হয়। এতে প্রায় প্রতিটি থানার ভেতরের অঙ্গন এবং সামনের সড়ক যেন যানবাহনের ডাম্পিং ইয়ার্ডে পরিণত হয়েছে। মাসের পর মাস এসব যানবাহন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে এবং ধুলার আস্তরণ পড়ে এগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দেখা গেছে, কোনো কোনো যানবাহনের সিট থেকে শুরু করে ইঞ্চিনের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। থানা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হচ্ছে, এসব যানবাহন মামলার আলামত। এগুলো আদালতের সম্পদ, থানার নয়। আইনি জটিলতার কারণে বাধ্য হয়ে এগুলো থানায় রাখতে হয়। এছাড়া অনেক থানার এসব আলামত রাখার জায়গা নেই। ভবন ভাড়া করে থানা পরিচালনা করা হয়। ঐসব ভবনে গাড়ি রাখার স্থান থাকে না। ফলে অনেক সময় মামলার এসব আলামত রাস্তার পাশে রাখা হয়। আলামতের কার্যকারিতা নষ্ট হলেও থানা কর্তৃপক্ষের কিছু করার থাকে না। এতে থানার কার্যক্রমে যেমন ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি সড়কে যান চলাচলেরও সমস্যা হচ্ছে।

খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক বহন, অপহরণের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় অপরাধীরা মোটরসাইকেল, সিএনজি, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ব্যবহার করে থাকে। ধরা পড়ার পর ব্যবহৃত যানবাহনও মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও বাস, ট্রাক, পিকআপ, কভার্ডভ্যান জব্দ করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। অপরাধ যত বৃদ্ধি পায় এবং অপরাধী ধরা পড়ে, যানবাহনের আলামতের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ফলে বছরের পর বছর ধরে এসব আলামত থানা ও এর আশপাশের এলাকায় রাখা হয়। বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায় এসব যানবাহন ওই অবস্থায়ই থাকে। যদি বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত হতো, তবে জব্দকৃত যানবাহনের জটও কমে যেত, থানার জায়গাও অবমুক্ত হতো। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের মাধ্যমে অপরাধ সংঘটন নতুন কিছু নয়। এ ধরনের ঘটনা অহরহই ঘটে। ফলে জব্দকৃত যানবাহন রাখা ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে থানার স্থান নির্বাচন করা জরুরি। জব্দকৃত যানবাহন রাখার জায়গা যে একেবারে নেই, তা নয়। রাজধানীর আগারগাঁও, মিরপুর ও কাঁচপুরে তিনটি ডাম্পিং ইয়ার্ড থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। রাজধানীর প্রায় অর্ধশত থানা এলাকায় অপরাধ সংঘটন ও জব্দ হওয়া যানবাহনের ক্ষেত্রে অন্তত আরও অধিক ডাম্পিং ইয়ার্ড থাকা এবং মামলার এসব আলামত যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা অপরিহার্য। মামলার আলমতই যদি নষ্ট হয়ে যায়, তবে সে মামলা দুর্বল হয়ে পড়া স্বাভাবিক। এসব আলামত মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মামলার ক্ষেত্রে যেমন এগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম, তেমনি এগুলোর মূল্যও অনেক। বিভিন্ন থানায় জব্দকৃত যানবাহনের মূল্য কত, তার সঠিক হিসাব না থাকলেও কয়েকশ’ কোটি টাকা যে হবে, তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। এগুলো অপরাধ কর্মে ব্যবহৃত হলেও তা সম্পদ হিসেবে বিবেচিত। অথচ যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণের অভাবে এ সম্পদ নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এগুলোর যথাযথ বিহিত করা এখন সময়ের দাবী।

থানা ও এর আশপাশের সড়কে রাখা জব্দকৃত যানবাহন শুধু নষ্টই হচ্ছে না, যান চলাচল এবং পরিবেশেরও ক্ষতির কারণ হচ্ছে। এসব যানবাহনের ইঞ্জিন ও ব্যাটারি থেকে বিকিরত তেজস্ক্রিয়তা বাতাসে মিশে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে। জব্দকৃত যানবাহনের স্থান ঘাস ও অন্যান্য গাছ-গাছালি জন্মে এবং পানি জমে মশার উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হয়ে পরিবেশ বিপন্ন করছে। তাছাড়া জব্দকৃত গাড়ির গুরুত্বপূর্ণ পার্টস চুরি হয়ে সেগুলো অচল করে ব্যবহারের অযোগ্য করে দিচ্ছে। মামলা নিষ্পত্তির পর মালিক ফেরত পেলেও তার আর কোনো মূল্য থাকছে না। এতে যে আর্থিক ক্ষতি হয়, তা পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। অনেক সময় গাড়ি যথাযথভাবে ফেরত না পাওয়ায় তা ফেলে রেখেই চলে যায়, যা ডাম্পিং পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। বলার অপেক্ষা রাখে না, যানবাহন দ্বারা সংঘটিত অপরাধে যে মামলা হয়, তা দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা হলে মালিক যেমন যথাযথ অবস্থায় তার গাড়িটি ফেরত পাবে, না হলে সরকার তা নিলামে বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। এটা করা না হলে কোটি কোটি টাকার যানবাহন নষ্ট হয়ে পড়ে থাকবে এবং তা জঞ্জালে পরিণত হবে। আমরা মনে করি, মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিসহ প্রয়োজনে আরো ডাম্পিং ইয়ার্ড প্রস্তুত করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ ব্যাপারে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত ও কার্যব্যবস্থা নেবে বলে আশা কির। জব্দকৃত যানবাহন রাখার কার্যকর স্থান স্থির করা জরুরি। থানার পরিবেশ উন্নয়ন ও পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে তা করা দরকার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জব্দকৃত-যানবাহন
আরও পড়ুন