Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

না ফেরার দেশে সাবেক তারকা ফুটবলার বাদল রায়

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০২০, ৬:১৩ পিএম | আপডেট : ৯:২৩ পিএম, ২২ নভেম্বর, ২০২০

বেশ কিছুদিন ধরে জীবন-মৃত্যুর সন্ধীক্ষণে থেকে ক্রীড়াঙ্গনের সবাইকে কাঁদিয়ে শেষ পর্যন্ত না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ‘মোহামেডানের বাদল’। লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন রাষ্ট্রিয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদ, জাতীয় দল ও ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সাবেক তারকা ফুটবলার এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) তিনবারের সহ-সভাপতি বাদল রায়। যিনি দেশের ক্রীড়াঙ্গনে ‘মোহামেডানের বাদল’ নামেই অধীক পরিচিত ছিলেন। রোববার সন্ধ্যা ৫টা ৩৫ মিনিটে বাংলাদেশ মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরলোক গমন করেন সাবেক এই তারকা ফুটবলার ও সংগঠক। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। রোববার রাতে তার মরদেহ হিমাগারে রাখা হয়। সোমবার বাদল রায়ের মরদেহ প্রথমে শহীদ মিনার নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে তার চিরচেনা মাঠ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম আনা হবে। এরপর প্রিয় ক্লাব মোহামেডান থেকে তাকে সরাসরি নেয়া হবে রাজারবাগ কালীবাড়ি শ্মশানে। সেখানেই দাহ করা হবে বাদল রায়ের নিথর মরদেহ। বাদল রায়ের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, এমপি।

আশির দশকের ঢাকার মাঠ মাতানো কিংবদন্তি ফুটবলার বাদল রায় গত ৫ নভেম্বর গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হন। ১১ নভেম্বর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আজগর আলী হাসপাতাল থেকে নেয়া হয় স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে। পরে পরীক্ষা-নীরিক্ষায় সেখানেই তার লিভারে ক্যান্সার ধরা পড়ে। চিকিৎসকরা তাকে বাসায় নিয়ে যেতে বললে বাদল রায়ের পরিবারের সদস্যরা স্কয়ার হাসপাতাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্বাবিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন। এখান থেকে ডায়ালাইসিস করাতে ধানমন্ডিস্থ বাংলাদেশ মেডিক্যালে তাকে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি।

খেলোয়াড়ি জীবনে ১৯৭৭ সালে মোহামেডানের জার্সিতে ঢাকার ফুটবলে অভিষেক হয়েছিল বাদল রায়ের। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ফুটবলারদের একজন বাদল রায়। যিনি ক্যারিয়ারের পুরো সময়ই কাটিয়েছেন মোহামেডান ক্লাবেই। খেলা ছেড়ে পরবর্তীতে ওই ক্লাবের কর্মকর্তাও হয়েছিলেন। মোহামেডানের প্রতি তার এতটাই প্রেম ছিল যে, ঢাকা আবাহনী থেকে লোভনীয় পারিশ্রমিকের প্রস্তাব পেয়েও সাদাকালো শিবির ছেড়ে যাননি বাদল রায়। ১৯৮১, ৮২ ও ৮৩ সালে টানা তিনবছরই আবাহনী তখনকার সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকের চেয়েও দ্বিগুণ টাকার প্রস্তাব দিয়েছিল বাদল রায়কে। কিন্তু তারা মোহামেডানভক্ত এই ফুটবলারকে দলে ভেড়াতে পারেনি।

লিভার ক্যান্সার ধরা পড়ার আগে বাদল রায় গত ১৩ আগস্ট প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় থেকেই চিকিৎসা করে করোনামুক্ত হন। পরে ৫ নভেম্বর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে আসগর আলী হাসপাতালে নেয়া হয় এবং ডাক্তাররা তাকে দ্রুত আইসিইউতে নেন।

২০১৭ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে বাদল রায়ের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা ও ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাদল রায়কে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠিয়েছিলেন। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করলেও মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়েছেন।

নিজের বর্ণাঢ্য ফুটবল ক্যারিয়ারে বাদল রায় মোহামেডানের জার্সি গায়ে খেলেছেন টানা ১২ বছর। লাল-সবুজ জার্সি গায়ে জাতীয় দলের হয়ে খেলেন পাঁচ বছর। খেলা ছেড়ে তিনি প্রথমে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) যুগ্ম সম্পাদক ও পরে টানা তিনিবার সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) উপ-মহাসচিব ও সহ-সভাপতি ছাড়া বাদল রায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোষাধক্ষ্যের দায়িত্বও পালন করেছেন। এক সময় মোহামেডানের সাদাকালো ও জাতীয় দলের লাল-সবুজ জার্সি গায়ে মাঠ কাঁপিয়েছেন। নিজে গোল করার চেয়ে বেশি গোল করিয়ে সতীর্থকে সেরা বানিয়েছেন। তুখোড় ক্রীড়া সংগঠকের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন বাদল রায়। বর্ষীয়ান এই সাবেক ফুটবলার, ক্রীড়া সংগঠক ও রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে একটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটলো।

বাদল রায়ের মৃত্যুতে আরো শোক প্রকাশ করেছে ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, হ্যান্ডবল ফেডারেশন, বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস কমিউিনিটি (বিএসজেসি), বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসজেএ) ও বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ), বাংলাদেশ আরচ্যারি ফেডারেশন, বসুন্ধরা কিংস, ঢাকা আবাহনী লিমিটেড, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব, শেখ জামাল ধানমন্ডি, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র, চট্টগ্রাম আবাহনী, সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব, উত্তর বারিধারা, বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল ক্লাব, রহমতগঞ্জ এমএফএস, মেরিনার ইয়াংস ক্লাব ও আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবসহ বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠন ও সংগঠকরা। তারা শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ