Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ডিপিডিসির জুরাইন কার্যালয়ে বেপরোয়া চোরচক্র

অনিয়ম দুর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানি চরমে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ডিপিডিসির জুরাইন অফিসের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগের অন্ত নেই। ভুল রিডিং দিয়ে অতিরিক্ত বিল করে উৎকোচ আদায়, মিটার টেম্পারিং অভিযোগ তুলে হয়রানিসহ নানা অভিযোগে অতিষ্ঠ গ্রাহকরা। সরেজমিনে জুরাইন অফিসের অধীন এলাকাগুলোতে ঘুরে জানা গেছে, আবার আগের মতোই বাইপাস লাইনে বিদ্যুত চুরি চলছে। মুরাদপুর এলাকার বিদ্যুৎ চোরচক্র আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। প্রকাশ্যেই তারা বিদ্যুত চুরি করছে। এই গ্রুপের নেতৃত্বে আছে আলোচিত সেই নাসির। ভুক্তভোগিরা জানান, বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে জুরাইন অফিসের অনিয়ম, দুর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। আবার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরচক্র। যার মাশুল দিচ্ছে সাধারণ গ্রাহক।

ভুক্তভোগিরা জানান, জুরাইন অফিসের অধীনে এলাকাগুলোতে এখন লোডশেডিং নিত্যনৈমিত্তক ঘটনা। শীতের মধ্যেও দিনে কয়েকবার লোডশেডিং হয়। এ নিয়ে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মেলে না। জানা গেছে, জুরাইন বিদ্যুৎ অফিস নিয়ন্ত্রণ করছে বহিরাগতরা। হাসান নামে এক ঠিকাদারের লোকজন চালাচ্ছে জুরাইন বিদ্যুৎ অফিস। তারা মিটার টেম্পারিং করাসহ সব ধরনের অনৈতিক কাজে সিদ্ধহস্ত। এর আগেও হাসানের লোকজনের বিরুদ্ধে গুরুতর বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছিল। সে কারণে হাসানকে ঠিকাদারি থেকে বাদ দেয়া হয়। মুরাদপুরের একজন গ্রাহক বলেন, বিদ্যুৎ চোর নাসির, হাসান এরা আসা মানেই আমরা আতঙ্কে থাকি।

অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যুত বিভাগের অনিয়ম দুর্নীতির সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করছেন বিদ্যুৎ অফিসের সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল্লাহ আল ফারুক আফ্রাদ এবং সুপারভাইজার সাদ্দাম হোসেন। মো: শহীদ ও বাবুসহ অনেকের মাধ্যমে আফ্রাদ ও সাদ্দাম সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। গ্রাহকদের অভিযোগ, শহীদ ও বাবু এখানে সব ইঞ্জিনিয়ারদের বিল করে দিচ্ছেন। ছোট স্বপন ও শামীম বড় বড় কারখানায় সাব-মিটার বসিয়ে ব্যবসা করছেন। মিটারম্যান আমিনুল আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তার বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানি ও জালিয়াতির অভিযোগ বহু পুরানো। জানা গেছে, কয়েকদিন আগেও শ্যামপুর এলাকার গ্রাহক মোশাররফ হোসেনের বাসায় মিটার লাগিয়ে কূটচালে গ্রাহক মোশারফকে ফাঁসিয়ে দেন আমিনুল। ১৮০ নং নামা শ্যামপুরের বাসার জন্য মিটারের আবেদন করেন মোশারফ। মিটারম্যান আমিনুল তার কাছে নতুন মিটারের জন্য ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। মোশারফ ২০ হাজার টাকা দেন। বাকি ১০ হাজার মিটার লাগানোর পরে দিবেন বলে জানান। কয়েকদিন পর আমিনুল নতুন মিটার (নং ডি৮কেজি৩৪২৯) লাগিয়ে দিলেও ডিমান্ড নোট দেননি। ডিমান্ড নোট কয়েকদিন পরে হবে বলে মোশারফকে জানান আমিনুল। এরপর আমিনুল অন্য এক টিমকে মোশারফের ওই বাসায় পাঠান। তারা নতুন মিটারের কাগজপত্র চাইলে মোশারফ জানান, তিনি ডিমান্ড নোট এখনও হাতে পাননি। কিন্তু ওই টিমের লোকজন মোশারফকে নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে নিয়ে যান। মোশারফ নির্বাহী প্রকৌশলীকে সব জানালে তিনি বলেন, কাগজপত্রবিহীন মিটার লাগানোর জন্য জরিমানা দিতে হবে। মোশারফ মিটারম্যান আমিনুলের কথা বলেন নির্বাহী প্রকৌশলী তা মানতে নারাজ। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আপনি যদি আমিনুলের নাম না বলেন তবে জরিমানা কমবে। কিন্তু মোশারফ মিথ্যা বলতে নারাজ। শেষ পর্যন্ত তাকে মোটা অঙ্কের জরিমানা গুনতে হয়েছে। এমনিভাবে গ্রাহকদেরকে ফাঁদে ফেলে জরিমানাসহ নানাভাবে টাকা আদায় করা হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, বহিরাগত মিটার রিডাররা তাদের ইচ্ছামতো বিল করে গ্রাহকদের হয়রানি করছেন। ভুক্তভোগী একাধিক গ্রাহক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেক সময় দেখা যায় মিটারের রিডিংয়ের চেয়ে অনেক বেশি বিল করে দেয়। দিনের পর দিন ঘুরেও এসব বিল আর সংশোধন হয় না। তখন বাধ্য হয়ে গ্রাহক মিটার রিডারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকেন। এক পর্যায়ে গ্রাহকরা মিটার রিডারদের সাথে চুক্তি করতে বাধ্য হন। হয়রানির ভয়ে তারা এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও কোনো অভিযোগ করেন না।

অভিযোগ রয়েছে ডিমান্ড নোট ইস্যু থেকে শুরু করে এই দফতরের সর্বক্ষেত্রেই রয়েছে হয়রানির চিহ্ন। অভিযোগ রয়েছে ডিমান্ড নোট পেতে নির্বাহী প্রকৌশলীর কম্পিউটার অপারেটর আব্দুল কাউয়ুমকে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা দিতে হয়। গ্রাহক আঙ্গিনায় সব অনিয়ম করে দেয়ার সিস্টেম করে দেন আব্দুল আলীম ও মোর্শেদ। এদের মাধ্যমে সব লেনদেন করে থাকেন আফ্রাদ, সাদ্দাম, সাখাওয়াত ও মাহবুব। তাদের আবার বহিরাগত কিছু দালাল আছে। যারা নিয়মিত ওই অফিসেই আড্ডা দিয়ে থাকে।

স¤প্রতি দক্ষিণ দনিয়ার এক গ্রাহক অভিযোগ করেন, তার ভাড়াটে বিদ্যুৎ চুরি করে কারখানা চালাচ্ছেন। এই অভিযোগ পেয়ে তিনি নিজেই বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ দায়ের করেন। এই অভিযোগ দায়েরের পর সাদ্দামসহ কয়েকজন গিয়ে ওই বাড়ির সব মিটার খুলে নিয়ে যান। কিন্তু যে মিটারে চুরি হয়েছে ওই মিটারটি ফেরত দিয়ে দেন সাদ্দাম হোসেন। ওই গ্রাহক অভিযোগ করেছেন, সাদ্দাম ৪০ হাজার টাকা এককালীন এবং মাসিক ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে মিটারটি ফেরত দিয়েছেন। আর উল্টো যিনি এই চুরির অভিযোগ করেছেন তাকেই দুই লাখ পনেরো হাজার চারশত চুরানব্বই টাকা জরিমানা করা হয়। এ নিয়ে ওই গ্রাহক ঊর্ধ্বতন কর্তাদের সাথে কথা বলতে চাইলে তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে তিনি ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বরাবর বিচার চেয়ে আবেদন করেছেন। একাধিক গ্রাহক অভিযোগ করেন, সাদ্দাম হোসেন গত পাঁচ বছর ধরে এই অফিসে কর্মরত আছেন এবং নানাভাবে গ্রাহকদের হয়রানি করছেন। এই ঘটনার সাথে সাখাওয়াত নামের আরো একজন জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আফ্রাদ ৯ বছর ধরে এই কার্যালয়ে দায়িত্বরত আছেন। দু’বার বদলি হলেও তিনি তা বাতিল করেছেন বলে অভিযোগ আছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জুরাইনের নির্বাহী প্রকৌশলী মেজবাহ উদ্দিন বলেন, এভাবে হয়রানির কোনো অভিযোগ তার কাছে নেই। সাদ্দামের ব্যাপারে যে অভিযোগটি উঠেছিল সে ব্যাপারে তদন্ত করা হয়েছে, কিন্তু তদন্তে কিছু পাওয়া যায়নি। আর জরিমানা করে থাকে টাস্কফোর্স। এখানে তাদের কোনো হাত নেই। বহিরাগতদের দিয়ে কাজ করানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা নিয়ম আছে। স্টোরের কাজে মামুন সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডিপিডিসি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ