Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ক্ষুদ্র শিল্পের প্রতি নজর দিতে হবে

মশি শ্রাবন | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

দেশ করোনাযুদ্ধে লিপ্ত। অর্থনীতি বিপর্যস্ত। এ অবস্থায় অগণিত মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বেঁচে থাকার তাগিদে তারা এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে এবং রয়েছে অনাহার-অর্ধাহারের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে। করোনায় তছনছ হয়ে যাওয়া অর্থনীতি আগের অবস্থায় ফিরবে কিনা, কর্মহীন বিপুল মানুষের কর্মসংস্থান হবে কিনা, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিতকরণে কোনো উন্নতি হবে কিনা- এ প্রশ্নগুলো এখন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। যদিও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এরই মধ্যে লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে, তবু দেশজুড়ে ক্ষুধার্ত ও কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছে শ্রমজীবী, গার্মেন্টসহ ক্ষুদ্র শিল্পে কর্মরত মানুষ। ব্যবসা-বাণিজ্যের মন্দার মধ্যে বহু শ্রমিক চাকরি হারিয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এক প্রতিবেদনে বলেছে, করোনার কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার ৩৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০১৬ অনুযায়ী, তখন দারিদ্র্যের হার ছিল সাড়ে ২৪ শতাংশ। ২০১৯ সাল শেষে অনুমিত হিসাবে তা নেমে আসে সাড়ে ২০ শতাংশে। সিপিডি জানিয়েছে, করোনার কারণে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, মানুষের আয় কমেছে। ফলে দারিদ্র্যের হারও বেড়ে গেছে। করোনার কারণে ভোগের বৈষম্য বেড়ে দশমিক ৩৫ পয়েন্ট হয়েছে। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে তৈরি হওয়া পরিস্থিতির প্রভাবে শহরের নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমেছে ৮২ শতাংশ। আর গ্রামাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমেছে ৭৯ শতাংশ।

শুধু পোশাক খাত নয়, বেসরকারি খাতের অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মী ছাঁটাই চলছে। প্রবাসী আয়ও কমতে শুরু করেছে, যার উপর নির্ভরশীল নিম্নমধ্যবিত্তদের একটি বড় অংশ। করোনা সংকটের কারণে চাকরি হারিয়ে প্রবাস থেকে লাখ লাখ কর্মীর ফিরে আসার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে এমনিতেই শিক্ষকরা তেমন বেতন পান না। বেশির ভাগ শিক্ষকই প্রাইভেট-টিউশনি করেন। কিন্তু এখন সবই বন্ধ রয়েছে। দেশের প্রায় ৫০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ছয় লাখ শিক্ষক কর্মরত। টিউশন ফির টাকায়ই বাড়িভাড়া, নানা ধরনের বিল ও শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়।

অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে টিকে থাকতে না পেরে শহর ছেড়েছে। আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি মানুষের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশায় এত দিন সঞ্চয় ভেঙে কোনোরকম টিকে ছিল কাজ-হারানো নিম্নবিত্ত শ্রেণি। এখন তারা হতাশায় নিমজ্জিত। আসলে যত দ্রুত ব্যক্তি খাত ও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে, তত দ্রুত সংকট কাটবে। সবার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সহজ সাধ্য নয়। আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করতে হবে। নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য করতে হবে অর্থায়নের ব্যবস্থা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা আবার পুরোপুরি চাঙ্গা হলেই সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান। এখনো শপিং মল, বিউটি পারলার, সিনেমা হল, বিনোদন কেন্দ্র, রেস্তোরাঁর মতো অনেক ব্যবসা পুরোপুরি চালু হয়নি। সংকট উত্তরণে শ্রমঘন ছোট ও মাঝারি শিল্প খাতে বেশি নজর দিতে হবে। শুধু শহর এলাকায় নয়, গ্রামে-গঞ্জে যে এসএমই খাত রয়েছে, তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। সবাইকে সমান সুবিধা দেওয়া গেলে তাতে অর্থনীতি দ্রুতই আবার ঘুরে দাঁড়াবে।
লেখক: প্রকাশক ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, দৈনিক মাতৃভূমি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থনীতি-বিপর্যস্ত
আরও পড়ুন