Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে ৭০ ভাগ

অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাবে বাড়ছে ধর্ষণ : টিআইবি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

দেশে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ঘটনা ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সাথে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যথাসময়ে অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাবে ধর্ষণের মতো অপরাধ প্রতিরোধ করাও সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে সংস্থাটি।
নারী ও কন্যাশিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে বিশ্বব্যাপী ষোল দিনের কর্মসূচির প্রাক্কালে গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি এ অভিমত ব্যক্ত করে। টিআইবি নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িতদের সুষ্ঠু বিচারিক প্রক্রিয়ায় কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করারও জোর দাবি জানিয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, আর্থিক অসচ্ছলতা, অবহেলা ও পক্ষপাতিত্ব, বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, নিরাপত্তাহীনতা, সম্পদ ও ক্ষমতার যোগসাজশসহ চলমান করোনা সঙ্কটের কারণে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ঘটনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। করোনা মহামারি স্বাস্থ্য সঙ্কটের পাশাপাশি নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতাকেও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। নির্যাতিত নারীদের আইনি সহায়তা প্রদান করে এমন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের হিসেবে গত বছরের তুলনায় এ বছর মার্চ-এপ্রিল মাস নাগাদ নারী নির্যাতনের ঘটনা ৭০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছেন ১৯২ জন। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে পারিবারিক নির্যাতনে খুন হয়েছেন ২৩৫ জন নারী। একই সঙ্গে, ধর্ষণের মতো পাশবিক অপরাধের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিতের অভাবে ক্রমান্বয়ে তা মহামারির মতোই ছড়িয়ে পড়ছে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারি ৯টি ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের এক হিসাবে প্রায় ১১ হাজার নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনার মধ্যে মাত্র ১৬০টি ক্ষেত্রে চ‚ড়ান্তভাবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা সম্ভব হয়েছে। চূড়ান্ত বিচারে মাত্র ১ শতাংশ তাঁদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নির্যাতনের ন্যায়বিচার পেয়েছেন বলে জানা যায়। অর্থাৎ ৯৯ শতাংশ ঘটনার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়নি, যা আইনের কার্যকর প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে খুবই উদ্বেগজনক একটি চিত্র।
বর্তমানে প্রায় ১৫০০ মামলা উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে বিচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ করার মাধ্যমে বিচারহীনতার ঝুঁকি সৃষ্টি করা হচ্ছে। সাধারণ ভুক্তভোগী যেখানে স্থানীয় পর্যায়ে থানা-পুলিশ করতেই অনভ্যস্ত কিংবা হয়রানির শিকার হয়, সেখানে উচ্চ আদালত পর্যন্ত মামলা পরিচালনা করা তাদের কল্পনারও অতীত বিধায় অনেকেই আইনের এই মারপ্যাঁচ ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। দুঃখজনকভাবে এক ধরনের ধারণার জন্ম হয়েছে যে, সময়ক্ষেপণের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ করতে পারলে নতুন কোনো ঘটনার ডামাডোলে মানুষ এক সময় ভুলে যাবে এবং শাস্তি এড়ানো সম্ভব হবে।
এমন বাস্তবতায় সরকারের, সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার পাশাপাশি জনগণকেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে এবং নারীর প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে আহ্বান জানিয়েছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নারী নির্যাতন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ