Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভাষ্কর্য বা মূর্তি উভয়ই ইসলামে নিষিদ্ধ

বিভিন্ন ইসলামী দলের আলোচনা-সভায় নেতৃবৃন্দ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ৮:৩৫ পিএম

ইসলাম বিরোধী ভাষ্কর্যের নামে মূর্তির পক্ষ নিয়ে ইমাম উলামা ও মুসলমানরা নিজেদের ঈমান বিক্রি করবে না। জনগণ মসজিদের শহরে ভাষ্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন চায়না। বঙ্গবন্ধুর ঈমানী চেতনাকে উপলব্ধি করে ভাষ্কর্যের পরিবর্তে মুজিব মিনার স্থাপন করুন। ভাষ্কর্য বা মূর্তি অকল্যাণের প্রতীক। ইসলামে ভাষ্কর্য বা মূর্তি উভয়ই নিষিদ্ধ। আজ শনিবার বিভিন্ন ইসলামী দলের আলোচনা সভা ও বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই শুক্রবার শান্তিনগরে মাদরাসার ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের হামলা ও ১৮ জন মাদরাসা ছাত্র ও তৌহিদী জনতাকে আটকের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, ভাষ্কর্য বা মূর্তির বিরোধীতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরোধীতা নয়।
এটা যারা বুঝতে পারে না, তারাই দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। ভাস্কর্য বিরোধী মাদরাসার ছাত্র-জনতার কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জ খুবই দুঃখজনক ঘটনা। নিরীহ মাদরাসার ছাত্রদের মিছিলে এধরণের লাঠিচার্জ সরকারের জন্য সুখকর হবে না। তিনি অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত ১৮জন মাদরাসা ছাত্র এবং ঈমানদার মুসল্লিদের মুক্তির দাবি জানান।
তিনি বলেন, দেশের শীর্ষ ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ ও চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ, যুবলীগকে মাঠে নামিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গালি-গালাজ করিয়ে সরকার অত্যন্ত খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ছাত্র-যুবলীগ সারাদেশে যখন ধর্ষণের রাজত্ব কায়েম করেছে, তখন তাদের নিয়ন্ত্রণ ও নিবৃত না করে ওলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে উসকে দিয়ে সরকার অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক কাজ করেছেন।
মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের হামলা সরকার নাস্তিক মুরতাদ ও শয়তানী শক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তিনি বলেন, ওলামায়ে কেরাম শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যবিরোধী নন, তারা সকল মানবমূর্তি বা ভাষ্কর্যের বিরোধী। ওলামায়ে কেরাম বঙ্গবন্ধুসহ দেশ, জাতি ও মানবতার কল্যাণ চান বলেই তার বিরোধীতা করছেন এবং ওলামায়ে কেরাম মূর্তি ও ভাষ্কর্যের বিষয়ে খোলামেলা বিশ্লেষণ করে জাতিকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন। ভাষ্কর্য বা মূর্তি অকল্যাণের প্রতীক। এতে কোন শান্তি ও কল্যাণ নেই। বঙ্গবন্ধুর নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল-কলেজ বানিয়ে তাকে স্মরণীয় করে রাখুন। এতে প্রতিনিয়ত তার আত্মায় সওয়াব পৌঁছতে থাকবে। তিনি বলেন, অনেক বুদ্ধিজীবী মূর্তি বিরোধীদের বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে দাড় করানোর অপচেষ্টা করছেন। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও বঙ্গবন্ধু আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতোপূর্বে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা হাইকোর্টের সামনে থেকে থেমিসের মূর্তি অপসারণে যেমন আন্দোলন করেছে, এখন দোলাইপাড়ে নতুন মূর্তি স্থাপনসহ সারাদেশে নির্মিত মানবমূর্তির বিরোধিতা করছে।
বাংলাদেশ ইমাম মুসল্লি ঐক্য পরিষদ : বাংলাদেশ ইমাম মুসল্লী ঐক্য পরিষদের দেলাইরপাড়স্থ কার্যালয়ে নেতৃবৃন্দের এক জরুরি পরামর্শসভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, ভাষ্কর্য নির্মাণকে কেন্দ্র করে ওলামা মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতার সাথে সরকারের দূরত্ব বাড়ছে যার অবসান অতি দ্রুত করতে হবে। শুধু বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্য বা মূর্তিই নয় বরং সকল প্রকার প্রাণ ভাষ্কর্য বা মূর্তির বিরুদ্ধে তৌহিদী জনতার ঈমানী আন্দোলন। দুনিয়ার কেহ এই ঈমানী আন্দোলন রুখে স্থির থাকতে পারে নাই। কওমী মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি দিয়ে ওলামা-মাশায়েখকে প্রধানমন্ত্রী সম্মান করেছেন এজন্য আমরা আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ইমাম সমাজের সাথে জনসাধারণের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সাধারণ মানুষের মনোভাব ইমামরা বুঝেন। জনগণ মসজিদের শহরে ভাষ্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন চায়না। বঙ্গবন্ধুর ঈমানী চেতনাকে উপলব্ধি করে মূর্তির পরিবর্তে মুজিব মিনার স্থাপন করুন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন দফতরে ইতিমধ্যেই এ দাবির লিখিত আবেদন পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এই আবেদনকে অবজ্ঞা করে জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিবেন না। দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে বিনষ্ট করার গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। দেশের আলেম ওলামার সাথে সরকারে যে সুসম্পর্ক রয়েছে তা নষ্ট করে আলেম ওলামার কুষ্পত্তলিকা দাহ করে দেশের নীরহ মাদরাসার ছাত্রদের উপর দমন পীড়ন চালিয়ে লাভ হবে না। আমরা এই দমন পীড়নের তিব্র নিন্দা এবং গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের নি:শর্ত মুক্তির দাবি জানাই। নেতৃবৃন্দ বলেন, স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর জন্য আল্লাহর ৯৯ নাম অঙ্কিত মুজিব মিনার স্থাপন করে আপনার পিতার কবরে শান্তি পৌঁছানোর জোর দাবি জানাচ্ছি।
পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা মাওলানা রশিদ আহমাদের সভাপতিত্বে এতে আরো বক্তব্য রাখেন, পরিষদের উপদেষ্টা মুফতি মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, মুফতি মনিরুজ্জামান, পরিষদের সভাপতি মাওলানা মুরশিদুল আলম, মহাসচিব হাফেজ মাওলানা হারুনুর রশীদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি রুহুল আমীন, মুফতি শফিক সাদী, হাফেজ মাওলানা আনোয়ার হামিদী, মাওলানা হাসান বিন বাশার, মুফতি সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা নূর আহমাদ ও মাওলানা ইবরাহীম শরীয়তপুরী।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ঢাকা মহানগরী : জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর এর উদ্যোগে আগামী ৩০ ডিসেম্বরের কাউন্সিল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এক “আলোচনা সভা”আজ শনিবার পল্টন অফিসে মহানগর সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা বেলায়েত হোসাইন আল-ফিরোজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। প্রিন্সিপাল মাওলানা বেলায়েত হোসাইন আল-ফিরোজী শান্তিনগরে মিছিলরত ছাত্রদের ওপর পুলিশী নির্যাতনের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি হেফাজত নেতৃবৃন্দের সমালোচনা করে বলেন যে, এভাবে নেতৃত্ব ছাড়া মাদ্রাসার তালবে ইলম তথা মাসুম ছাত্রদের মিছিলের নামে রাজপথে ছেড়ে দেয়া কোনভাবেই উচিত হয়নি। তিনি ভাস্কর্যের নামে রাজধানীসহ দেশের মোড়ে মোড়ে মূর্তি স্থাপনেরও তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, ভাস্কর্য ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। তাই প্রয়োজনে মিনার সাদৃশ্য বহু ধরনের ভাস্কর্য স্থাপন করা যেতে পারে- এতে পৃথিবীর কোনো উলাম-ফুকাহা বিরোধীতা ইনশাআল্লাহ করবে না। কেননা ভাস্কর্য, মূর্তি ও প্রতিমা একই বস্তুর বিভিন্ন নাম মাত্র। তারা প্রকৃতপক্ষে মূর্তিরই প্রতিচ্ছবি। তাই ইসলাম বিরোধী আবদার এদেশের মুসলমান কোন মতেই গ্রহণ করবে না। সভায় উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের মহাসচিব- মাওলানা শেখ মুজিবর রহমান, মুফতি রেজাউল করীম, মুফতি আতাউর রহমান, মুফতি ইমরান, মুফতী মাহফুজ আহমাদ, মাওলানা রেজওয়ানুল বারী সিরাজী, মাওলানা আদ্নান, মাওলানা সোহাইল আহমদ ও মাওলানা মনিরুল ইসলাম।
খেলাফত মজলিস ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা : ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা জানান, খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর ইসলামি চিন্তাবিদ আল্লামা যুবায়ের আহমদ আনসারী (রহ.) এর স্মরণে স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে শহরের সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তনে খেলাফত মজলিস জেলা শাখার উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা রেজাউল করীম জালালী।
অনুষ্ঠানে খেলাফত মজলিসের জেলা শাখার সভাপতি হাফেজ মাওলানা খন্দকার আব্দুল আজিজের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, মাওলানা জালালুদ্দিন আহমদ, মুফতী মুহসিনুল হাসান, মাওলানা শায়খ সাজিদুর রহমান, মুফতী আবদুর রহিম কাসেমী, মাওলানা আসাদুল্লাহ আল গালীব আনসারী প্রমুখ। এ সময় বক্তারা বলেন, ইসলাম প্রচারে এবং সমাজে দ্বিনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠায় আল্লামা যুবায়ের আহমদ আনসারী বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এছাড়াও বক্তারা ভাস্কর্য নির্মাণ প্রসঙ্গে বলেন, আলেম-ওলামাদের দেশে মূর্তি সংস্কৃতি চলতে দেয়া হবে না। তারা সরকারকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে আহবান জানান। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন তারা। পরে দেশ ও জাতির কল্যাণ ও আল্লামা যুবায়ের আহমদ আনসারীর রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।



 

Show all comments
  • মুহাম্মদ নূরুল্লাহ ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ৯:১৮ পিএম says : 0
    আমি একজন বঙ্গালী, আমিও চাইনা এখানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কার্য নির্মাণ, আমি চাই বঙ্গবন্ধুর নামে একটি মিনার, আল্লাহ ৯৯ নামের একটি স্তম্ভ ইত্যাদি হোক। কারন মুর্তি বানিয়ে কারো ইতিহাস রক্ষা করা যায় না।
    Total Reply(0) Reply
  • রেজোয়ান হোসেন। ২৯ নভেম্বর, ২০২০, ৮:২১ এএম says : 0
    যাঁরা ভাস্কর্যের পক্ষে তাঁদের প্রতি অনুরোধ--আপনারা কুরআন/হাদিস থেকে মূর্তি/ভাস্কর্য সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করুন।আল্লাহ রব্বুল আলামিন শিরকের গুনাহ মাফ করবেন না। শিরকের গুনাহকারীর বাসস্থান হবে জাহান্নামের তলদেশে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ