Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নন্দিত নারী জাতি ও ইসলাম

প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মাওলানা এইচ এম গোলাম কিবরিয়া রাকিব

॥ দুই ॥
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, “সাবিত ইবনে কায়েসের স্ত্রী নবী (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল। আমি সাবিত ইবনে কায়েসের চরিত্র এবং ধর্মপরায়ণতা সম্পর্কে কোনো দোষ দিচ্ছি না। কিন্তু আমি চাই না যে, তার সাথে ঘর-সংসার করতে গিয়ে আমি ইসলামের সীমা অতিক্রম করে কুফরীর মধ্যে নিপতিত হই। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমার স্বামী তোমাকে যে বাগানটি দিয়েছিল তুমি কি তাকে তা ফিরিয়ে দিতে রাজি আছ। তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসূলে করীম (সা.) সাবিত ইবনে কায়েসকে বললেন, তুমি বাগানটি গ্রহণ করো এবং তোমার স্ত্রীকে তালাক দাও।” (সহীহ বুখারী)।
অভিন্ন আইন : ইসলামে নারী-পুরুষের মর্যাদা সমান এবং তাদের জন্য অভিন্ন আইন প্রণীত হয়েছে। কুরআন মজীদ ঘোষণা করেছে ঃ
“পুরুষ অথবা নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকাজ করলে ও মু’মিন হলে তারা জান্নাতে দাখিল হবে এবং তাদের প্রতি অণু পরিমাণও জুলুম করা হবে না।” (সূরা আন নিসা : ১২৪)।
বিচারের ক্ষেত্রে ইসলামে নারী এবং পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয়নি। যদি কোন মহিলা কোন পুরুষকে হত্যা করে তাহলে তার জন্য যে শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে, পুরুষের জন্যও একই শাস্তি। রাসূলে করীম (সা.)-এর জারিকৃত আইনের একটি হচ্ছে “স্ত্রীলোকের হত্যাকারী কোন পুরুষ হলে শাস্তিস্বরূপ তাকে হত্যা করা হবে” (বায়হাকীর সুনানুল কুবরা)।
নারী শিক্ষা : দ্বীনী ও পার্থিব শিক্ষা লাভ করার জন্য নারীকে শুধু অনুমতিই দেয়া হয়নি; বরং পুরুষের শিক্ষাদীক্ষা যেমন আবশ্যকীয় মনে করা হয়েছে তাদের শিক্ষাদীক্ষাও তদ্রƒপ আবশ্যকীয় মনে করা হয়েছে। নবী করীম (সা) বলেন, “প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরয” (ইবনে মাজা)।
কর্মক্ষেত্রে নারী : নারীদের কর্মতৎপরতা কেবলমাত্র বিদ্যা শিক্ষা, জ্ঞান অর্জন ও চিন্তা-গবেষণা পর্যন্তই নয়। বাস্তব কাজে যথার্থ ভূমিকা পালনের স্বার্থেও ইসলাম এক বিস্তীর্ণ ক্ষেত্র তাদের জন্যে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। রাসূলে করীম (সা.)-এর সময়কার মুসলিম মহিলাদের কর্মৎপরতা দেখে একথা বলিষ্ঠ কণ্ঠেই বলা যেতে পারে যে, মুসলিম মহিলারা কাজের প্রয়োজনে বাড়ির বাইরেও যেতে পারেন। মহানবী (সা.) উবাদা ইবনে সামেতের স্ত্রী উম্মে হারামকে জিহাদের জন্য সমুদ্র যাত্রার অনুমতি দিয়েছিলেন। এই অনুমতি প্রদান থেকে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অনুধাবন করা যায়। ইসলাম চায় না যে, সামাজিক ক্রিয়াকা- থেকে নারী দূরে থাকুক।
ইসলাম নারীকে প্রয়োজনে বাইরের কাজে আত্মনিয়োগ করার অনুমতি দিয়েছে। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা)-র কন্যাকে তার স্বামী তালাকা দেয়। তালাকের পর ইদ্দত চলাকালে তিনি কয়েক কাঁদি খেজুর কেটে বিক্রি করার ইচ্ছা করলে এক ব্যক্তি তাকে নিষেধ করে এই বলে যে, ইদ্দতের মেয়াদে বাইরে যাওয়া জায়েজ নয়। বিষয়টি মহানবী (সা.)-এর কাছে উত্থাপন করা হলে তিনি তাঁকে অনুমতি দেন বাগানে গিয়ে খেজুর সংগ্রহ করতে এবং বিক্রি করতে (সুনাম আবু দাঊদ)।
ইসলামের প্রাথমিক যুগে মহিলারা প্রয়োজনে বাজারে এবং খেত-খামারে যাতায়াত করতো। হযরত আয়েশা (রা.) পর্দার হুকুম নাযিল হওয়ার পরের একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। একদিন মহানবী (সা.)-এর স্ত্রী হযরত সওদা (রা.) কে বাইরে যেতে দেখে হযরত উমর (রা.) আপত্তি করলে তিনি ঘরে ফিরে আসেন এবং মহানবীকে বিষয়টি জানান। উত্তরের মহানবী (সা.) বললেন, “প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়ার জন্য আল্লাহ তোমাদের অনুমতি দিয়েছেন (সহীহ বুখারী)।
সাহল ইবন সা’দ (রা.) এক মহিলার কথা বলেছেন। মহিলার একখ- কৃষিক্ষেত ছিল এবং তিনি কৃষিক্ষেতের সেচখালের পাড় দিয়ে গাজরের চাষ করতেন। হযরত আবু বকরের কন্যা আসমা (রা.)-এর বিয়ে হয় হযরত যুবাইর (রা.)-এর সাথে। প্রথমদিকে তাঁদের আর্থিক অবস্থান অসচ্ছল ছিল। তাঁদের মাত্র একটি ঘোড়া ও একটি উট ছিল। আসমা (রা.) নিজেই ঘোড়াকে ঘাস ও পানি দিতেন। দূরে তাঁদের একখ- জমি ছিল। তিনি সে জমি থেকে ঘাস ও খেজুরের আঁটি সংগ্রহ করে আনতেন। একদিন এক ঝুড়ি গোখাদ্য নিয়ে আসার সময় পথিমধ্যে মহানবীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নন্দিত নারী জাতি ও ইসলাম
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ