Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন : হেফাজতকে কঠোরভাবে শায়েস্তা করা হবে : হানিফ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪৯ পিএম | আপডেট : ২:৩৯ পিএম, ৩০ নভেম্বর, ২০২০

হঠাৎ করে হেফাজতে ইসলাম কেন ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে মাঠে নামল এমন প্রশ্নের জবাবে হেফাজতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও হাটহাজারী মাদ্রাসা পরিচালনা জন্য গঠিত শূরা কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন নানুপুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা বলেছি, আজ আপনারা ভাস্কর্য নির্মাণ করবেন কাল কেউ এসে সেটা ভেঙে ফেলবে৷ সাদ্দাম, গাদ্দাফির ভাস্কর্য এখন ভেঙে ফেলা হচ্ছে৷ বরং আপনারা যদি বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করতে চান তাহলে ভাস্কর্য নির্মাণ করে টাকার অপচয় না করে তার নামে হাসপাতাল করুন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করুন বা এমন কিছু করুন যা মানুষ মনে রাখবে৷’’দেশে তো আরো ভাস্কর্য আছে তাহলে কেন শুধু বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের প্রতিবাদ করছেন? জবাবে জনাব নানুপুরী বলেন, ‘‘শুধু এটা না, আমরা তো বলেছি, সবগুলো ভাস্কর্যই ভেঙে ফেলতে হবে৷ যদি বিখ্যাতদের স্মরণ করতে চান তাহলে তাদের নামে এমন কিছু করুন যা মানুষের উপকারে আসবে৷ ভাস্কর্যের নামে মানুষের টাকার অপচয় তৌহীদী জনতা মেনে নেব না৷’’


বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে হেফাজতের আমীর বাবুনগরীর বক্তব্যর নিন্দা জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল-আলম হানিফ বলেছেন, তারা যদি ইসলামের নামে উগ্রবাদী আচরণ করে তাহলে তাদের কঠোরভাবে শায়েস্তা করা হবে৷

শুক্রবার চট্গ্রামে এক মাহফিলে জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘‘যারা ভাস্কর্য তৈরি করবে, টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেয়া হবে৷ আমার বাবার নামেও যদি কেউ ভাস্কর্য তৈরি করে, টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেব৷ বর্তমানে পুরো বিশ্বে আস্তিক আর নাস্তিকের লড়াই চলছে৷ আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে কোনো লড়াই নেই, তাদের আত্মীয়তার বন্ধন হয়৷ কিন্তু আস্তিক আর নাস্তিক কখনো এক হতে পারে না৷’’

এমন বক্তব্যকে ‘জঙ্গিবাদের ভাষা’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব উল-আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইসলাম শান্তির ধর্ম৷ কিন্তু তারা (হেফাজত) যে ভাষায় কথা বলছে, এটা জঙ্গিবাদের ভাষা, সংঘাতপূর্ণ ভাষা৷ ইসলামের নামে এ ধরনের মৌলবাদী, উগ্রবাদী কথা বললে এটা বরদাশত করা হবে না৷ তারা যদি ধর্মের নামে ভাস্কর্য নির্মাণে এভাবে বাধা দিতে আসে তাহলে তাদেরকে কঠোরভাবে শায়েস্তা করা হবে৷’’

এদিকে ভাস্কর্য বিষয়ে হেফাজতের এমন বক্তব্য পর্যবেক্ষণ করছে সরকার৷ আর এ ব্যপারে সরকারকে কঠোর হতে বলছেন বুদ্ধিজীবীরা৷

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, এ ভাস্কর্য পূজা করার জন্য নয় সে বিষয়টি তারা বুঝতে পারছে না৷ বিশ্বের অনেক মুসলিম প্রধান দেশেও ভাস্কর্য আছে উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘তাদের (হেফাজতের) বক্তব্য আমরা শুনেছি৷ সব কথায় তো আর সরকার রিঅ্যাক্ট করে না৷ দেখা যাক, কয়েকজন আলেম তো এগুলো নিয়ে কথা বলছেন৷ আমরা তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছি৷ এখনও আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু হয়নি৷''

ঢাকার ধোলাইখালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য বসানোর সরকারের উদ্যোগের পর গত কয়েকদিন ধরে প্রতিবাদ জানাচ্ছে কট্টরপন্থিইসলামিক দলগুলো৷ এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে আলেচনায় আসেন হেফাজত ইসলামের নেতা মামুনুল৷ শুক্রবার চট্টগ্রামে আয়োজিত এক মাহফিলে অংশগ্রহণ করার কথা ছিল মামুনুল হকের৷ আর চট্টগ্রামে মামুনুল হককে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে রাজপথে নামে জঙ্গিবাদ বিরোধী ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদ৷ সেখানে ছাত্রলীগ ছাড়াও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন৷


এ মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে বাবুনগরী বলেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন মদিনা সনদে দেশ চলবে৷ আমরাও চাই মদিনা সনদে দেশ চলুক৷ ভাস্কর্য- এটা শরিয়তসম্মত নয়৷ কোনো পার্টি বা নেতার নাম বলছি না, যার ভাস্কর্য হোক না কেন, আল্লাহর কসম, কেউ যদি আমার আব্বার ভাস্কর্য বসায়, আমি সর্বপ্রথম সেই ভাস্কর্য টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেব৷ যেকোনো দল ভাস্কর্য বসাবে, আমার আব্বার ভাস্কর্যও যদি স্থাপন করা হয়, সেটা শরিয়ত সম্মত হবে না৷ টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেব৷’’

হাটহাজারির মাহফিলের দিনে শুক্রবার চট্টগ্রামে জঙ্গিবাদবিরোধী ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল৷ সমাবেশে দেওয়া বক্তব্য নওফেল বলেন, তার দল গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী বলে এ ধরনের বিষয়ে প্রতিবাদ করছে না৷ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদনা করার কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে মত তার৷

‘‘আজ মৌলবাদী গোষ্ঠী সারাদেশে হুমকি-ধামকি দিয়ে মাঠ গরম করার চেষ্টা করছে৷ আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের মূল নীতি-আদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক কর্মী, আমরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করি, এরা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যাবে, আমরা জানি৷ কিন্ত আমরা গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী বলে সেটা করছি না৷ কিন্তু গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে আজ ধর্মীয় অনুষ্ঠান করে কেউ কেউ রাজনৈতিক কথাবার্তা বলছে, নিজের রাজনৈতিক খায়েশ মেটানোর চেষ্টা করছে৷ এই ধরনের কাজ আমাদের দেশে হচ্ছে৷ কেন হচ্ছে? আমাদের নিজেদের মধ্যে দুর্বলতার কারণে৷’’

তবে হেফাজতের এমন হুমকির দেওয়ার বিষয় সরকারকে দায়ীকরলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম৷ প্রবীণ এ অধ্যাপক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকারের প্রশ্রয়ে তো তারা আজকে এসব কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে৷ আজ তো তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য টেনেহিঁচড়ে ফেলার কথা বলছে, দু'দিন পর তারা অন্য সব ভাস্কর্য ভেঙে ফেলতে বলবে৷’’

হেফাজতের এমন আচরণ ‘শঙ্কার' উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘আরেকটা জিনিস হল দেশের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ আছে৷ বিরোধী রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম না থাকায় এই ক্ষোভ বিক্ষোভগুলো রাজনৈতিকভাবে প্রকাশ পাচ্ছে না৷ আমার শঙ্কা, এরা যদি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বিক্ষোভকে পুঁজি করে ফেলে তাহলে কিন্তু এখান থেকে বের হওয়ার পথ থাকবে না৷ ফলে আমি বলব, এখনই এ ব্যাপারে শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে৷’’

তবে হেফাজতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মাঠে নেমেছে ইসলামী ঐক্যজোট৷ সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান ভাস্কর্য ও মূর্তি শব্দের ভুল ব্যখ্যা দিয়ে যারা অপরাজনীতির চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন৷

তিনি বলেন, ‘‘এ দেশের মানুষ আপনাদেরকে ৭১ সালেও চিনতে ভুল করেনি, এখনও করবে না৷ প্রাণীর ভাস্কর্য মানেই শিরক নয়৷ বিশ্বের অনেক ইসলামি দেশেই ভাস্কর্য রয়েছে৷’’ জয়চে ভেলে



 

Show all comments
  • habib ৩০ নভেম্বর, ২০২০, ১:০৬ পিএম says : 0
    apnader asol rup manus ekhon dekhte pasche....
    Total Reply(0) Reply
  • Mizanur Rahman ৩০ নভেম্বর, ২০২০, ১:১৬ পিএম says : 0
    আমি মনে করি শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব কে মূর্তি না বানিয়ে একটি মসজিদ ও ভারতের কুতুব মিনার এর মতো মুজিব মিনার নির্মাণ করতে পারেন, আর হানিফ সাহেব সহ সকল আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীদের পরামর্শ দিতে চাই মুজিবুর রহমানের জন্য সকল বিতর্ক এরিয়ে চলেন। তিনি একজন মহান ব্যক্তি তিনিকে সকল বিতর্কের উর্দ্ধে রাখবেন আশাকরি।
    Total Reply(0) Reply
  • Nadim ahmed ৩০ নভেম্বর, ২০২০, ৩:০২ পিএম says : 0
    Apnar payer niche mati ache Hanif? Humki dhamki diye test korchen jonogon k? Hefazot ar shate compromise koren, beyadobi korben nah. Murti banano thake pichiye Jan. Apni o to muslim, aktu O kharap lage na pouttolikotar dalali korte?
    Total Reply(0) Reply
  • Nadim ahmed ৩০ নভেম্বর, ২০২০, ৩:২২ পিএম says : 0
    Apnara ki mone kpten Hanif nijeder? Ato lutpat kore hajar hajar kuti taka kamiye chen, pachar korchen bidesh a. Kintu arpor O Alhamdulillah hefajoti ra apnader chaite beshi bhalo ache, shustho ache. Manush howar cheshta korun, otherwise, jonogon apnader desh thake bitarito korbe.
    Total Reply(0) Reply
  • Anwar Ashraf ৩০ নভেম্বর, ২০২০, ৩:৩১ পিএম says : 0
    আল্লাহর কসম, কেউ যদি আমার আব্বার ভাস্কর্য বসায়, আমি সর্বপ্রথম সেই ভাস্কর্য টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেব৷
    Total Reply(0) Reply
  • Md Rejaul Karim ৩০ নভেম্বর, ২০২০, ৯:০৩ পিএম says : 0
    ইসলাম শান্তির ধর্ম মনে করলে আপনার মন্তব্যটি প্রত্যহার করা উচিত ছিল।।। আলেমেরা শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে কথা বললেই জঙ্গীবাদের ভাষা হয়।।। তাহলে দম ফুরালেই জানাজা পড়ানোর আলেমদেরকে ডাকবেন কোন বিবেকে??? কাজেই দয়াকরে জাহেলী মন্তব্য পরিহার করুন।।। আলেমদের নিয়ে অশালীন কুরুচিপুর্ন মন্তব্য পরিহার করুন।।।
    Total Reply(0) Reply
  • Nadim ahmed ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:৪৩ পিএম says : 0
    ...এত চর্বি দেখাচ্ছ কেন?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হানিফ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ