Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চিনিকল বন্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

পাবনা-পঞ্চগড়-দিনাজপুর-কুষ্টিয়ার শ্রমিকদের ৫ দফা দাবি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

লোকসানের অজুহাতে দেশের ৬টি চিনিকল বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সরকারি পাটকলগুলোর মতো চিনিকলগুলো সাময়িক বন্ধ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এবিষয়ে শিল্পমন্ত্রনালয় চিঠি পাঠানো হয়েছে। আর চিনিকল বন্ধের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে কলগুলোতে কর্মরত শ্রমিকরা। ইনকিলাবের সংবাদদাতারা জানান, গতকাল পাবনা, দিনাপুর, কুষ্টিয়া বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা।

দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলা সংবাদদাতা জানান, চিনিকল বন্ধের প্রক্রিয়া বাতিলসহ ৫ দফা দাবি আদায় লক্ষ্যে চলতি মৌসুমে আখ মাড়াই চালুর দাবিতে গত ৩ি দন ধরে সেতাবগঞ্জ চিনিকল আখচাষি ও শ্রমিক-কর্মচারীদের সমন্বয়ে কর্ম বিরতী ও সেতাবগঞ্জ পৌর শহরে বিক্ষোভ মিছিল পালন করেছে। এর আগে গত বুধবার থেকে তারা দাবি আদায়ের লক্ষে চিনিকলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

গতকাল ১০ টায় সেতাবগঞ্জ চিনিকলের মূল ফটকের সামনের সড়কে আখচাষি কল্যাণ সমিতি ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন অবস্থান কর্মসূচী পালন করে। পরে, তারা পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে চিনি কলের মূল ফটকে এসে শেষ হয়।

মিছিলে শ্রমিক-কর্মচারীরা তাদের পাঁচ দফা দাবির স্বপক্ষে স্লোগান দিতে থাকে । শ্রমিক কর্মচারীদের দাবি চলতি মৌসুমে আখ মাড়াই সীদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে অবিলম্বে শ্রমিকদের বেতন ভাতাদি প্রদান এবং আখ মাড়াই কার্যক্রম চালুর জোর দাবি করেন।

জানতে চাইলে সেতাবগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম জাকির হোসেন জানান, সদর দপ্তর থেকে মন্ত্রালয়ের চিঠি গত কয়েক দিন আগেই পেয়েছি। এবছরে জন্য আখ মাড়াই ৯ টি মিল চালু, ৬টি মিল আখ মাড়াই কার্যক্রম স্থগিত করেছে সরকার। এখানে যে আখটা আছে তা পাশ্বর্বতী মিল ঠাকুরগাও মিলে পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে। চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি প্রশান্ত কুমার চৌহান বলেন, সকল মিলে চিনি উৎপাদন কার্যক্রম এক সঙ্গে চালু রাখতে হবে। সেই সাথে আখ চাষিদের সকল কৃষি উপকরণ সরবরাহ করতে হবে।

ঈশ্বরদী (পাবনা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, দাশুড়িয়ায় অবস্থিত পাবনা সুগার মিল (পাসুমি) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গত ২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এই মিল বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। পাবনা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান।

জানা গেছে, পাবনা সুগার মিল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ক্রমাগত লোকসান দিয়ে আসছে। এ যাবৎকাল এই মিলটি ৫ শ ৬৭ কোটি টাকারও বেশি লোকসান দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ১৯৯২ সালের ২৭ ডিসেম্বর পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের পাকুরিয়া মৌজার জোতগাজিতে পাকিস্তান সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় পাবনা সুগার মিল (পাসুমি) প্রতিষ্ঠা করা হয়। মিলটি উৎপাদনে যাওয়ার পর থেকেই উৎপাদন ঘাটতি ও লোকসানের কবলে পড়ে।

এই মিল বন্ধের প্রতিবাদে মিলের শ্রমিক কর্মচারীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। তারা প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে। মিল বন্ধের ঘোষণাকে সরকারের হটকারী সিদ্ধান্ত বলে শ্রমিক-কর্মচারীরা দাবি করেছে।

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, ৪১৫ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কুষ্টিয়া সুগার মিলস (চিনি কল)। এরই প্রতিবাদে শ্রমিকরা রাজপথে নেমেছে। প্রতি মৌসুমে কোটি কোটি টাকা লোকসানের বোঝা ও নানা সংকটে চিনিকলটি পরিণত হয় অতি রুগ্ন শিল্পে। শুধুমাত্র ২০০১-০২ থেকে ২০১৯-২০ অর্থ বছর পর্যন্ত গত ১৯ বছরে দেশের বৃহত্তম এই চিনিকলটিতে লোকসান হয়েছে ৪১৫ কোটি টাকা। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে মিলটি। এরই প্রতিবাদে শ্রমিকরা রাজপথে নেমেছে।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের এক নেতা জানান, মিলটি বন্ধ না করে সঠিক তদারকি ও টাক্সফোর্স গঠন এবং দুর্নীতি বন্ধ করে মিলটি আধুনিক করে গড়ে তুলতে হবে। কুষ্টিয়া সুগার মিল শ্রমিক নেতা সুমন বলেন, কুষ্টিয়ার ঐতিহ্য ও একমাত্র ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান সুগার মিলটি বন্ধ করা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।
এদিকে চিনিকল বন্ধের প্রতিবাদে ৫ দফা দাবিতে কুষ্টিয়া চিনিকলে শ্রমিক-চাষীদেও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। চিনিকলের পাশে বাইপাস সড়কে চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়ন, আখ চাষী কল্যান সমিতি ও রেনউইক যজ্ঞেশ্বর শ্রমিক ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা জানান, চিনিকল বন্ধ করার প্রক্রিয়া বাতিল, আখ চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবারহসহ আখের মুল্য পরিশোধ ও আসন্ন মাড়াই মৌসুমে পঞ্চগড় চিনিকলসহ ১৫টি চিনিকল চালু রাখার ঘোষণাসহ তারিখ নির্ধারন এবং শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ও আখচাষীদের বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে চিনিকলের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শ্রমিক কর্মচারীরা। গতকাল পঞ্চগড় চিনিকলের প্রধান ফটকের সামনে এ বিক্ষোভ মিছিল করে পঞ্চগড় চিনিকলের শ্রমিক ও কর্মচারীরা। এ সময় বিক্ষোভকারীরা অবিলম্বে পঞ্চগড় চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল করে শ্রমিক কর্মচারীদের ৩ মাসের বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ করে পঞ্চগড় চিনিকল চালু রাখার দাবি জানান। পরে সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও পঞ্চগড় চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আনোয়ারুল হক, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নবী হাসেম।



 

Show all comments
  • আবু তাহের আনসারী ৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:২৯ পিএম says : 0
    নিউজটি যুক্তযুক্ত
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চিনিকল

৬ জুন, ২০২১
৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ