Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বেকার নূপুর ভাড়া থাকেন লাখ টাকা ভাড়ার ফ্ল্যাটে

প্রতারণার অভিযোগে গ্রামীণফোন সার্ভিস সেন্টারের কর্মীসহ গ্রেফতার-৪

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

তেজগাঁওয়ের গ্রামীণফোনের সার্ভিস সেন্টারের এক কর্মীর সহযোগিতায় সার্ভার থেকে গ্রাহকের তথ্য চুরি করে প্রতারণা মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার সঙ্গে জড়িত ৪সদস্য গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই চক্রের নেতৃত্বে ছিলেন পারভীন আক্তার নূপুর নামে এক নারী। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভুয়া আইনজীবীর মাধ্যমে ফোন করে নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণ মামলার হুমকি দিয়ে ভয়ও দেখানো হতো। এই চক্রকে টার্গেট করা ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহ করে গ্রামীণফোনের সার্ভিস সেন্টারের কর্মী রুবেল মাহমুদ অনিক। চক্রের প্রধান পারভীন আক্তার নূপুর, তার বোন শেফালি বেগম, গ্রামীণফোনের কর্মী রুবেল মাহমুদ অনিক এবং নূপুরের সহযোগী শামসুদ্দোহা খান বাবু নামে ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরপরই বেরিয়ে এসেছে এ ধরনের ভয়ঙ্কর প্রতারণার নানা তথ্য।

গতকাল তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশীদ জানান, চক্রটির নেতৃত্বে রয়েছে পারভীন আক্তার নূপুর। চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করে। তার টার্গেট ছিল মূল ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরা। টার্গেট করা ব্যক্তির সব ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে পরিবারের সব সদস্যকে জানিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে পাঁচ লাখ থেকে শুরু করে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করতো।

তিনি আরো বলেন, কোনও পেশা না থাকলেও সপ্তম শ্রেণি পাস নূপুর থাকেন গুলশানের নিকেতনে। তার ফ্ল্যাট ভাড়া মাসে লাখ টাকা। তার মেয়ের স্কুলের বেতন প্রতিমাসে প্রায় ১০ হাজার টাকা। গুলশান থানায় সে একবার অভিযোগ করেছিল যে, তার ৬টি লিপস্টিক চুরি হয়েছে, যে ৬টি লিপস্টিকের দাম ৯০ হাজার টাকা। গত বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত রাজধানীর মোহাম্মদপুর, হাতিরঝিল এবং বাড্ডা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। হাতিরঝিল থানায় দায়ের করা প্রতারণা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আইনজীবী পরিচয়দানকারী ইসা নামে চক্রের এক সদস্য এখনও পলাতক। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিস্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রামীনফোনের সার্ভিস সেন্টারের কর্মী রুবেল মাহমুদ অনিক ও ট্রাভেল এজেন্সিতে কর্মরত শামসুদ্দোহা খান বাবুর সঙ্গে নূপুরের সখ্যতা রয়েছে। অনিক ও বাবু নূপুরকে বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বর দিয়ে নূপুরকে সহযোগিতা করে। এরপর নূপুর নিজেকে কখনও সমাজকর্মী কখনও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য তহবিল সংগ্রহকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য তহবিল সংগ্রহে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাতে, চাকরির প্রার্থী বা সাংবাদিক পরিচয়ে এসব ব্যক্তিদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করে। নানা অজুহাতে টার্গেট করা ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে। অনেক সময় ব্যক্তিগত স্পর্শকাতর বা গোপন কথা বলে তা মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে। এমনকি মোবাইল ফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে নূপুর। বয়স্ক ব্যক্তিদের টার্গেট করে এমন প্রেমের সম্পর্ক করে। পরবর্তীতে ওই ব্যক্তির পরিবারকে সব জানিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করে।

সূত্র আরো জানায়, কেউ দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আইনজীবী পরিচয় দিয়ে ইসা নামে অপর এক সদস্য ওই ব্যক্তিদের ফোন করে মিথ্যা ও বানোয়াট ধর্ষণ মামলা বা নারী নির্যাতন মামলা করার হুমকি দেয়। ইসা বিভিন্ন মিথ্যা ও বানোয়াট বিল ভাউচার তৈরি করার কথাও জানায়। এমনকি শারীরিক অসুস্থতার অজুহাতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী টার্গেট করা ব্যক্তিকে ফাঁসানোর জন্য নামকরা চিকিৎসকদের কাছে গিয়ে প্রেসক্রিপশনে স্বামীর নাম অপশনে ওই ব্যক্তির (টার্গেট) নাম লিখে আনে নূপুর। কয়েক মাসে পারভীন তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর এবং আরও কয়েকটি মোবাইল নম্বর থেকে ১৫-২০ জন ব্যক্তিকে টার্গেট করে প্রতারণা করে মোটা অংকের অর্থ আদায় করেছে। এমনকি রুবেলের মোবাইল নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে ৬টি গ্রামীণফোন নম্বর পাঠিয়ে মোবাইল নম্বরধারী ব্যক্তির সিম রেজিস্ট্রেশন তথ্য (নাম, পিতার নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, জন্ম নিবন্ধন নম্বর) জানতে চায় নূপুর। দশ হাজার টাকার বিনিময়ে রুবেল গ্রামীণফোন সার্ভার থেকে এ তথ্যগুলো সংগ্রহ করে হাতে লিখে নূপুরকে দেয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ