Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্ট্যানফোর্ডের বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় আমরাও আছি

অজয় কান্তি মন্ডল | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৫ এএম

বর্তমান বিশ্বে একের পর এক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবনীয় উদ্ভাবন ঘটছে। যেসব দেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যত বেশি উন্নত, বিশ্বের অন্যান্য দেশ সেসব দেশের উপর তত বেশি নির্ভরশীল। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের এই যুগে যেকোন আবিষ্কারের প্রতিযোগিতা এমন পর্যায়ে পৌঁছিয়েছে যে, উদ্ভাবনকারীরা ভালোভাবেই বুঝে গেছেন যে, উদ্ভাবক যত সহজে, যত অল্প সময়ে, যত সাশ্রয়ী এবং সময়োপযোগী পণ্য বানাতে পারদর্শী বিশ্ব তার উদ্ভাবনকে তত সহজে গ্রহণ করবে। সেজন্য বিশ্বের খ্যাতনামা গবেষকরা দিনরাত নিরলস পরিশ্রমে আবিষ্কার করে চলেছেন অসাধারণ সব উদ্ভাবনী এবং মানুষের দোর গোড়ায় সার্বক্ষণিক উদ্ভাবনীর সেবা পৌঁছে দিতে চেষ্টা করে চলেছেন তাদের সর্বোচ্চ মেধার ব্যবহারে। বিষয়টি পরিষ্কার করে বলতে গেলে এভাবে বলতে হয়, কোন কিছুই কিন্তু রাতারাতি তৈরি হয়নি। আজকে সবার হাতে হাতে ব্যবহৃত স্মার্ট ফোনটির কথাই ধরা যাক। ফোনটির এই অবস্থানে আসতে কিন্তু যুগ যুগ সময় লেগেছে। এক গবেষক থেকে অন্য গবেষকের হাত বদলে, তাদের গবেষণালব্ধ ফলকে কাজে লাগিয়ে আজকের স্মার্ট ফোনটির উদ্ভব সম্ভব হয়েছে।

গবেষকরা তাদের আবিষ্কারকে যখন প্রকাশ করে তখন অন্যান্য গবেষকরা সেই গবেষণার হাত ধরে আরও ভালো থেকে ভালোর দিকে যেতে থাকেন। কোনো গবেষকের উদ্ভাবনকে জনসমক্ষে প্রচারের জন্য পৃথিবীব্যাপী আছে কয়েক হাজার বৈজ্ঞানিক প্রকশনা সংস্থা। এসব প্রকাশনা সংস্থার প্রধান কাজ হলো গবেষকের উদ্ভাবনকে বিশ্বব্যাপী প্রকাশ করে অন্যান্য গবেষকদের ওই উদ্ভাবন থেকে বিস্তর জ্ঞান আহরনের পাশাপাশি উদ্ভাবনকারীর গবেষণার পরিধি আরও বাড়ানো। সহজ ভাষায় বলতে গেলে এভাবে বলা যেতে পারে, বিজ্ঞানীদের গবেষণার স্বীকৃতি স্বরূপ এসব প্রকাশনা সংস্থা গবেষকদের উদ্ভাবনকে জনগণের ব্যবহার উপযোগী করার জন্য জনসমক্ষে প্রকাশ করে।

যখন কোনো গবেষক নির্দিষ্ট বিষয়ে গবেষণা শেষ করেন তখন সেই গবেষণার দলিল হিসেবে যাবতীয় তথ্য নোট করে প্রকাশের জন্য প্রকাশনা সংস্থা বরাবর পাঠান। প্রকাশনা সংস্থার দায়িত্বে নিয়োজিত বিশিষ্ট গবেষকগণ পাঠানো সেই গবেষণা কাজের বৈজ্ঞানিক মূল্য কতটুকু সেটার একটা প্রথমিক মূল্যায়ন করেন। প্রাথমিক মূল্যায়ন শেষে যদি গবেষণা কাজটির যথেষ্ট অভিনবত্ব এবং ভবিষ্যৎ মূল্য দেখতে পান তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য সেটির চূড়ান্ত মূল্যায়নের জন্য পাঠানো হয় ওই নির্দিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ অন্যান্য গবেষকদের কাছে। এই গবেষকদের সংখ্যা কমপক্ষে ২ থেকে ১০ জন পর্যন্ত হতে পারে। যত বেশি উচ্চ পদমর্যাদার গবেষণা সংস্থা হবে চূড়ান্ত মূল্যায়ন সংখ্যায় গবেষকদের সংখ্যা তত বেশি হবে।

এসব গবেষক তাদের সর্বোচ্চ মেধা দিয়ে তদের কাছে পাঠানো অন্য গবেষকের কাজটা মূল্যায়ন করেন। সবার মূল্যায়ন শেষে সব গবেষকের মতামত পাঠিয়ে দেওয়া হয় উদ্ভাবনকারী গবেষকের কাছে। এর পরবর্তী ধাপে যদি উদ্ভাবনকারী সব গবেষকের মতামতের পক্ষে সঠিক যুক্তি এবং ব্যাখ্যা দিতে পারেন তারপরেই গবেষণা পত্রটি সেই প্রকাশনা সংস্থা প্রকাশ করে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার সময়টাও কিন্তু অনেক দীর্ঘ। কোনো কোনো প্রকাশনা সংস্থা এই কাজে ব্যয় করেন এক মাস থেকে শুরু করে এক বছর পর্যন্ত। গবেষণাপত্র প্রকাশের প্রকাশনা সংস্থাগুলোর আছে বিশেষ মর্যাদা এবং এই মর্যাদা নির্ধারিত হয় প্রকাশিত পত্রের অভিনবত্ব এবং গবেষণার কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে। যেসব বিজ্ঞানী যত কোয়ালিটি সম্পন্ন কাজ করতে পারেন তাদের গবেষণালব্ধ ফল তত বেশি উচ্চ মর্যাদার গবেষণাপত্রে প্রকাশিত হয়। এককথায় গবেষকদের গবেষণার মানের প্রধান মাপকাঠি হলো কে কত উচ্চ মর্যাদার প্রকাশনা সংস্থায় কত বেশি সংখ্যক গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে পেরেছেন তার উপর।

আবার শুধুমাত্র বেশি সংখ্যক গবেষণাপত্র প্রকাশ করলেও কিছু বিষয় থাকে। যেমন, প্রকাশিত পত্রগুলো অন্যান্য গবেষক তাদের নিজেদের গবেষণার কাজে কতটা ব্যবহার করছেন তার উপরেই প্রকাশিত গবেষণা পত্রের তথা গবেষকের উদ্ভাবনের মান যাচাই হয়। অর্থাৎ এতক্ষণ যেটা বললাম সেটা গবেষণাপত্র সবার সম্মুখে উন্মোচনের ব্যাপারে। এরপরে কিন্তু ওই প্রকাশিত গবেষণার মূল্যায়নপর্ব শুরু হয় গোটা বিশ্বের অন্য গবেষকদের অনুসরণ করার ভিতর দিয়ে। প্রকাশিত গবেষণার হাত ধরে অন্যান্যরা আরও বেশি এগিয়ে যেতে প্রকাশিত গবেষণা পত্রের গবেষণাকে ব্যবহার করেন এবং তাদের কাজের রেফারেন্স হিসেবে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের উদ্ধৃতি উল্লেখ করেন। যেটা প্রকাশিত ওই গবেষণাপত্রের ক্রেডিট হিসেবে যোগ হয়। এই ক্রেডিট গবেষণাপত্রে যোগ হওয়া মানে নিঃসন্দেহে সেটা ওই গবেষকের গবেষণার প্রোফাইলকে আরও বেশি ভারী করে। গুগল স্কলার, রিসার্চ গেট, মেন্ডেলেই-সহ বেশ কিছু অনলাইনভিত্তিক গবেষণা নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা আছে, যেটা গবেষকদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল হিসাব রাখাসহ গবেষকদের উদ্ভাবনী বা প্রকাশিত গবেষণাপত্রের ক্রেডিট কতটুকু ভারী হলো তার সুস্পষ্ট হিসাব রাখে।

স¤প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের যেসব গবেষকের গবেষণা কর্ম অন্য গবেষকদের গবেষণায় সবচেয়ে বেশি উদ্ধৃত হয়েছে সেটি জরিপপূর্বক তার মধ্য থেকে শীর্ষদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। উক্ত জরিপটি অধ্যাপক জন আইওনিডিস, কেভিন ডবিøউ বয়াক এবং নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থা এলসেভিয়ারের তিন গবেষক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় সর্বমোট ১,৫৯,৬৮৩ জন বিজ্ঞানীর একটি তালিকা ‘প্লজ বায়োলজি’ জার্নালে প্রকাশ করে। বিশ্বসেরা গবেষকদের এ তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন আমাদের দেশের ১৭টি প্রতিষ্ঠানের ২৬ জন গবেষক। উক্ত ২৬ জনের প্রোফাইল ঘাঁটলে দেখা যায়, সবাই এক এক জন খুবই উচ্চ মানের গবেষক। সবারই আছে গবেষণার শীর্ষে অবস্থিত একাধিক দেশ থেকে অর্জিত একাধিক ডিগ্রি। বিশদ আলোচনা করলে সবার কাছে একটু পরিষ্কার হবে আশা করি।
ড. মোহাম্মদ সরোয়ার জাহান বাংলাদেশের ২৬ জন গবেষকের একজন। ড. জাহান ‘বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ’ (বিসিএসআইআর) এর পাল্প এবং পেপার রিসার্চ ডিভিশনের ডিভিশন ইনচার্জের দায়িত্বের পাশাপাশি সম্প্রতি মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদ হতে পদোন্নতি পেয়ে বিসিএসআইআর এর সর্ববৃহৎ ইউনিট ‘ঢাকা গবেষণাগার’ এর পরিচালকের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। ড. সরোয়ারের গবেষণার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় পাল্পিং কেমিস্ট্রি এবং তিনি বায়োরিফাইনারি, ব্লিচিং, উড কেমিস্ট্রি এবং ন্যানো সেলুলোজ নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন। তিনি বিদেশে বহু স্বনামধন্য বিজ্ঞানীর সাথে কলাবোরেশন রিসার্চে জড়িত সম্প্রতি তিনি কানাডা অবস্থিত ‘ইউনিভার্সিটি অব নিউ ব্রান্সউইক’ থেকে ভিজিটিং স্কলার হিসেবে রিসার্চ শেষ করে দেশে ফিরেছেন। এর আগেও তিনি দুইবার সর্বমোট আড়াই বছর মেয়াদে একই ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং সায়েন্টিস্ট হিসেবে গবেষণা সম্পন্ন করেন। ড. সরোয়ার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে ফলিত রসায়ন বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষ করে ১৯৯২ সালে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে বিসিএসআইআর এ যোগদান করেন। এরপর উড এবং পাল্পিং কেমিস্ট্রিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডক্টরাল ডিগ্রি গ্রহণ করেন। তিনি চীন এবং কোরিয়াতে উড এবং পাল্পিং কেমিস্ট্রির উপর এক বছর মেয়াদে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। স্ট্যানফোর্ডের ওই তালিকায় রয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এ মামুন। ড. মামুন ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো হিসেবে নির্বাচিত হন এবং তিনি ২০০৯ সালে পদার্থবিদ্যায় অসামান্য অবদানের জন্য জার্মানির আলেকজান্ডার ভন হোমবোল্ট ফাউন্ডেশন থেকে ফ্রেডরিক উইলিয়াম ‘ব্যাসেল রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেন। ড. মামুন যুক্তরাজ্যের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে পিএইচডি অর্জন করেছেন। এছাড়া তিনি জার্মানির হোমবোল্ট পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবেও গবেষণা করেছেন।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর’বি) পাঁচ জন গবেষক এ তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। যেটা দেশের ১৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে সর্বাধিক সংখ্যা। তারা হলেন ড. ফিরদৌসী কাদরী, মুহম্মদ ইউনুস, রশিদুল হক, আমিনুর রহমান এবং জন ডি ক্লেমেনস। ড. ফিরদৌসী কাদরী যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করে ১৯৮৮ সালে তিনি আইসিডিডিআর’বি তে যোগ দেন। তিনি মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে গবেষণা করছেন। ড. কাদরী উন্নয়নশীল দেশে শিশুদের সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে অবদান রাখায় এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্মাননা ল’রিয়েল-ইউনেস্কো উইমেন ইন সায়েন্স অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। এছাড়াও ড. কাদরী আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজির ‘মজিলো ক্যাচিয়ার পুরস্কার’ এবং ইনস্তিতুত দ্য ফ্রাঁসের ‘ক্রিস্তোফ মেরো’ পুরস্কারে ভূষিত হন। অন্য চার জনের মধ্যে মুহম্মদ ইউনুস গবেষণা করছেন আরথ্রিটিস্ট অ্যান্ড রিউম্যাটোলজিস্ট বিষয়ে, জন ডি ক্লেমেনসের গবেষণার বিষয় মাইক্রোবায়োলজি এবং একই বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন গবেষক রশিদুল হক। অপরদিকে আমিনুর রহমানের গবেষণার বিষয় জেনারেল অ্যান্ড ইন্টারনাল মেডিসিন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের কৃষি বিশ্ববিদালয় এবং কৃষি বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র থেকে ওই তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বেশ কয়েকজন গবেষক। তাদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এম রহমান (গবেষণার বিষয়: পলিমার্স), একই প্রতিষ্ঠানের এম রফিকুল ইসলাম (গবেষণার বিষয়: এনার্জি)। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এম মিজানুর রহমান (জেনারেল অ্যান্ড ইন্টারনাল মেডিসিন), শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মির্জা হাসানুজ্জামান (গবেষণার বিষয়: প্লান্ট বায়োলজি অ্যান্ড বোটানি)। এদিকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উক্ত জরিপে স্থান পেয়েছেন তিন জন গবেষক। তাদের মধ্যে মো. আনোয়ার হোসেন ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট বিষয়ে, মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ প্লান্ট বায়োলজি অ্যান্ড বোটানি বিষয়ে এবং এম এস রহমান নেটওয়ার্কিং অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনস বিষয়ে গবেষণা করছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্ট্যানফোর্ডের এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন সাবেক অধ্যাপক রনজিত কুমার বিশ্বাস এবং মো. আব্দুল মজিদ। তাদের গবেষণার বিষয় যথাক্রমে মাইনিং অ্যান্ড মেটালার্জি ও এগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচার।

অপরদিকে বেশ কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার সাথে যুক্ত কিছু গবেষকও এ তালিকায় আছেন। এদের মধ্যে আছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. সৈয়দ সাদ আন্দালিব (গবেষণার বিষয়: হেলথ পলিসি অ্যান্ড সার্ভিসেস)। নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আহনাফ রাশিক হাসান (গবেষণার বিষয়: নেটওয়ার্কিং অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন)। ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের দুইজন শিক্ষক আছেন। তারা হলেন ওমর রহমান (গবেষণার বিষয়: জেনারেল অ্যান্ড ইন্টারনাল মেডিসিন) এবং সালিমুল হক (গবেষণার বিষয়: এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স)। একইভাবে তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বি কে বালা (ফুড সায়েন্স), এইচ কে জি এগ্রোর গবেষক আবেদ চৌধুরী (প্লান্ট বায়োলজি অ্যান্ড বোটানি)। বাংলাদেশ রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট কমিটির গবেষক সৈয়দ মাসুদ আহমেদ (ট্রপিক্যাল মেডিসিন) এবং ইউশিকাগো রিসার্চ বাংলাদেশের মাহফুজুর রহমান (টক্সিলজি) গবেষকদের এ তালিকায় আছেন। এছাড়াও গণবিশ্ববিদ্যালয়ের মুস্তাফিজুর রহমান (গবেষণার বিষয়: জেনারেল অ্যান্ড ইন্টারনাল মেডিসিন) এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ সালাম (গবেষণার বিষয়: ট্রপিক মেডিসিন) উক্ত জরিপে স্থান পেয়েছেন।

উপরিউক্ত বিজ্ঞানীদের গবেষণার অবদান বিশ্লেষণ করলে এমনটা দাঁড়ায়, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। স্ট্যানফোর্ডের জরিপে আইসিডিডিআর’বি থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক গবেষকদের নাম উঠে আসায় তেমনটাই ইঙ্গিত আমরা দেখতে পাই। আমরা কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, কৃষিবিজ্ঞানীদের অভিনব সফল্যে। উপরিউক্ত জরিপে বিভিন্ন কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের গবেষকদের সাফল্য আমরা স্বচক্ষে অবলোকন করতে পারি। স্বাধীনের পরে যেখানে দেশের সাত কোটি জনগোষ্ঠীর খাবার যোগান দেওয়া অসম্ভব ছিল, সেখানে কৃষিবিজ্ঞানীদের অভূতপূর্ব সাফল্যে এখন আঠারো কোটি জনগণের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েও খাবার উদ্বৃত থাকে। চিকিৎসাবিজ্ঞান ও কৃষিবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার পাশাপাশি ফাইবার ও পলিমার, খাদ্যবিজ্ঞান, আবহাওয়া ও জলবায়ু, মাইনিং অ্যান্ড মেটালার্জি, ফ্লুইড অ্যান্ড প্লাজমা, মেক্যানিকাল, টেলিকমিউইকেশনসহ বহু সেক্টরে বিজ্ঞানীদের গবেষণার সাফল্য লক্ষনীয়।

বাংলাদেশের গবেষকদের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ বিষয় প্রায়শই ঘটে। বেশিরভাগ গবেষণা কর্মকান্ডে দেশের বাইরে যাওয়ার পরেই তাদের মেধার বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায়। ফলে দেশীয় গবেষক এবং মেধার কিন্তু বাইরের দেশে ভালোই মূল্যায়ন আছে। সেই সুযোগে দেশে থেকে যেটা সম্ভব হতনা সেটা বিদেশ গিয়েই গবেষকরা খুবই সহজেই সেরাদের সেরা হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেন। বেশ কিছু কারণে এমনটা হতে পারে বলে আমাদের ধারণা। যেমন, দেশের গবেষণা কর্মকান্ডে সরকারি কোষাগার থেকে বরাদ্দের অপ্রতুলতা, গবেষকদের গবেষণা কাজে এবং ব্যক্তিগত জীবনে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাব, গবেষকদের গবেষণার চেয়েও ব্যক্তি স্বার্থের চিন্তাকে প্রাধান্য দেওয়াসহ অন্যান্য লাভের আশা ইত্যাদি। তবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের কাতারে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ সর্বক্ষেত্রে দেশের ভাবমর্যাদা দিনকে দিন উজ্জ্বল হচ্ছে সেটা সহজেই আমরা আঁচ করতে পারি। এই ধারাবাহিকতাকে ত্বরান্বিত করতে গবেষক এবং শিক্ষকদের স্বদিচ্ছার পাশাপাশি গবেষণা কর্মকান্ডে সরকারের গুরুত্ব বাড়ানো এবং গবেষকদের আরও কিছু অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। সেক্ষেত্রে অদূর ভবিষ্যতে স্ট্যানফোর্ডের করা অনুরূপ তালিকায় দেশীয় গবেষকদের সংখ্যার পাল্লা নিঃসন্দেহে ভারী থেকে ভারীতর হবে এই আশা আমরা করতেই পারি। সর্বোপরি আমরা সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিজেদের নাম লেখাব এটাই আমাদের সবার কাম্য।
লেখক: গবেষক, ফুজিয়ান এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটি, ফুজিয়ান, চীন।
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন