Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অর্থকরী ফসল সুপারি

দেশের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে বিদেশে

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার থেকে | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

কক্সবাজার জেলার অন্যতম অর্থকরি ফসল হচ্ছে সুপারি। প্রতিবছর সুপারি মৌসুমে কোটি কোটি টাকার সুপারি উৎপাদন হয়ে থাকে কক্সবাজারে। জেলার ৮ উপজেলার সবক’টিতে কমবেশি সুপারি বাগান থাকলেও রামু, উখিয়া ও টেকনাফে রয়েছে প্রচুর সুপারি বাগান। এসব সুপারি বাগান থেকেই কোটি কোটি টাকার সুপারি সরবরাহ হয়ে থাকে দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে। এমনকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে উখিয়া-টেকনাফের সুপারি স্বাদ নিয়ে থাকেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশীরা।
কৃষি বিভাগের এক সমীক্ষায় জানা যায়, কক্সবাজার জেলায় প্রায় ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে এক কোটি বিশ লাখেরও বেশি সুপারি গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ফলদ সুপারি গাছ রয়েছে প্রায় ৬০ ভাগ। দেখা গেছে প্রতিটি গাছে গড়ে ৩শ’ থেকে ৫শ’ সুপারির ফলন হয়। এ হিসেবে কক্সবাজারে প্রতি বছর সুপারি পাওয়া যায় কয়েক শ’ কোটি। খরচ বাদ দিয়ে প্রতিটি সুপারির গড় মূল্য ২.৫০ টাকা ধরলেও প্রতি বছর কম করে হলেও ৫-৬ কোটি টাকার সুপারি উৎপাদন হয়ে থাকে এ জেলায়।
কক্সবাজার-চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে আদিকাল থেকে পান-সুপারি এক প্রকার সম্মানীয় খাবার হিসেবে বিবেচিত। পান-সুপারি ছাড়া কোন অনুষ্ঠানই যেন পূর্ণতা পায়না। বিয়ে বাড়ি, মেজবানসহ যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে এই পান-সুপারির কদর অনেক বেশি। এখনো গ্রাম-গঞ্জে বিয়ে-শাদী, মেজবান ও সামাজিক অনুষ্ঠানের পরামর্শ সভাগুলোকে ‘পানসল্লা’ বলা হয়ে থাকে। এসব অনুষ্ঠানাদিতে প্রবীণ জনেরা চিবিয়ে চিবিয়ে পান খেতে খেতে সলা পরামর্শ করে থাকেন।
এখনো কক্সবাজার অঞ্চলে বিয়ে শাদীর সময় বরের বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে টেকনাফের সুপারি আর মহেশখালীর মিষ্টি পান না পাঠালে সেই বিয়ে বাড়ির আনন্দই অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়। সুপারি কক্সবাজারের বিভিন্ন গ্রামে গঞ্জে স্থানীয় আপেল হিসেবে খ্যাত। আর এই পান সুপারিকে একসাথে বলা হয় পান। প্রায় ঘর বাড়িতে খাবারের পরে থাকে এই সাজগোজ করে থালাতে করে পানের আয়োজন। খাবারের শেষে থালা ভরা এই পানই হচ্ছে এই অঞ্চলের মেহমানদারীর অন্যতম উপাদান।
আগে কক্সবাজারের প্রায় বাড়িতে কম বেশি সুপারি গাছ রোপন করে থাকলেও মেহেমানদারীর স্তর পেরিয়ে পান সুপারি এখন কোটি কোটি টাকা অর্থ উপার্জনের বস্তুতে পরিণত হওয়ায় সুচতুর ব্যক্তিরা গড়ে তোলেছেন সুপারি বাগান। এভাবে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে উঠেছে অনেক সুপারি বাগান। সুপারি গাছ বছরে একবার ফল দিয়ে থাকে। বাগানে পানি সেচ দিয়ে এবং সার দিয়ে অধিক ফলনের ব্যবস্থা করে থাকেন বাগান মালিকরা। মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে টেকনাফ যাওয়ার সময় দেখা যায় উখিয়া-টেকনাফের সমুদ্র সৈকতে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে অসংখ্য সুপারি বাগান।
এখন সুপারির মৌসুম হলেও ব্যাপক চাহিদার কারণে অন্যান্য বছরের তোলনায় এবারে বাজারে সুপারির মূল্য একটু বেশি বলে জানান, সুপারি ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ। টেকনাফের সুপারি বাগান মালিক হাবিব জানান, এবারে সুপারির ফলন যেমন হয়েছে, চাহিদা তেমন। টেকনাফ বড় বাজার, বাহারছরা শ্যামলাপুর বাজার ও উখিয়া সোনরপাড়া বাজারে জমজমাট সুপারিরহাট বসে থাকে। সেখান থেকে ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায় আপল রঙয়ের এই সুপারি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ