Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আজ মহান বিজয় দিবস

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। বিজয়ের ৪৯তম বার্ষিকী। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিবস আজ। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশসহ পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখন্ডের নাম জানান দেয়ার দিন।

১৯৭১ সালের এদিনে বাঙালি জাতি পরাধীনতার শেকল ভেঙ্গে প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করে। ২৪ বছরের নাগ পাশ ছিন্ন করে জাতির ভাগ্যাকাশে দেখা দেয় এক নতুন সূর্যোদয়। প্রভাত সূর্যের রক্তাভা ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। সমস্বরে একটি ধ্বনি যেন নতুন বার্তা ছড়িয়ে দেয় ‘জয়বাংলা’ বাংলার জয়, পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল।

যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস-২০২০ উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে কোভিড -১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে এ বছর বিজয় দিবস কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে না। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

বিজয় দিবসের বাণীতে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বিজয়ের পঞ্চাশ বছরে পা দেওয়ার ক্ষণে বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা এগিয়ে নিতে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত। সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। উন্নয়নের এ ধারাকে এগিয়ে নিতে সকলের সহযোগিতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন। তাহলেই দেশ পরিণত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায়। প্রেসিডেন্ট দেশে-বিদেশে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে বিজয়ের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

বিজয় দিবসের দেয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সা¤প্রদায়িক সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ, গণতন্ত্র ও সরকার বিরোধী যে কোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছেন। একইভাবে করোনা মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, মহান বিজয় দিবসে এই হোক আমাদের সুদৃঢ় অঙ্গীকার।

আজকের দিনটি সরকারি ছুটির দিন। সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ সমূহ জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী বাণী প্রদান করেছেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্র সমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। এ উপলক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। এছাড়াও বিজয় দিবস উপলক্ষে ভার্চুয়াালি ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জন’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে ।

মহামুক্তির আনন্দ ঘোর এই দিনে এক নতুন উল্লাস জাতিকে প্রাণ সঞ্চার করে সজিবতা এনে দেয়। যুগ যুগ ধরে শোষিত বঞ্চিত বাঙালি চোখে আনন্দ অশ্রæ আর ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় সামনে। বিন্দু বিন্দু স্বপ্নের অবশেষে মিলিত হয় জীবনের মোহনায়। বিশ্ব কবির সোনার বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ, জীবনানন্দের রূপসী বাংলা, রূপের তাহার নেইকো শেষ, বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ। বাঙালি যেন খুঁজে পায় তার আপন সত্তাকে।

বায়ান্ন, বাষট্টি, ঊনসত্তর এবং সত্তর শেষ করে একাত্তরে বাঙালি জাতি হিসাব করতে বসে। হিসেব-নিকেশ আর দেনা-পাওনায় পাকিস্তানিরাও বসে নেই। তারাও অংক কষতে থাকে কিভাবে বাঙালি জাতিকে যুগ যুগ ধরে পরাধীনতার শেকল পরিয়ে রাখা যায়। অবশেষে গভীর কালো নিকষ আঁধার থেকে জেগে উঠে হিরন্ময় হাতিয়ার। ৭ মার্চ একাত্তরের বিশাল জনসমুদ্র থেকে এক যুগের কবি, মহাকাব্যের প্রণেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বজ্রকণ্ঠ ঘোষণা দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। রক্ত যখন দিয়েছি তখন আরো দেব, তবুও এদেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।’

এই একটি মাত্র উচ্চারণে যেন বাঙালি সত্যিকার দিক-নির্দেশনা পেয়ে যায়। চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকে বাঙালি। বাঙালি বুঝে যায় শেষ কামড় দেয়ার সময় আসন্ন। পাকিস্তানিরাও আর বসে নেই। পুরো জাতিকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে মারাত্মক মারণাস্ত্র নিয়ে ২৫ মার্চ একাত্তর ঘুমন্ত জাতির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় বাঙালি নিধন যজ্ঞ। কিন্তু মুক্তি পাগল বাংলার দামাল ছেলেরা স্বাধীনতার রক্ত সূর্যকে ছিনিয়ে আনবে বলে একদিন অস্ত্র কাঁধে তুলে নেয়। কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সবাই শরিক হয়ে থাকে এ লড়াইয়ে। যতই দিন অতিবাহিত হতে থাকে আরো শাণিত হয় প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র।

অবশেষে ন’মাসের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে এলো নতুন প্রভাত। এ বিজয়ের মধ্যে এলো হাজার বছরের কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সূচিত হলো মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্য বিজয়।

বিজয় দিবসে আ.লীগের কর্মসূচি
সূর্যোদয় ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৯ টায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। ১০ টায় ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল সাড়ে ৯ টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। বিকাল ৩ টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে।

বিএনপির কর্মসূচি
ভোরে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৮-৩০টায় সাভারস্থ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পার্ঘ অর্পণ করা হবে। এরপর সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর মাজারে পুস্পার্ঘ অর্পণ করা হবে। বেলা সাড়ে ৩টায় ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সকাল ১১টায় বিজয় দিবস উপলক্ষে পতাকা র‌্যালী করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বিকাল তিনটায় পুরানা পল্টন্থ কার্যালয়ে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

ডিএসসিসির কর্মসূচি: ভোর সাড়ে ৬টায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে এবং সকাল সাড়ে ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন। বিকাল ৩টায় নগর ভবনের মেয়র হানিফ অডিটরিয়ামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

ডিএনসিসির কমসূচি: বেলা ১১টায় গুলশান ২ নম্বরে নগর ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন। বেলা সাড়ে ১১টায় বনানী বিদ্যা নিকেতনে মুজিব কর্নার উদ্বোধন।

সকাল সাড়ে ৬টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। দিবসটি পালন উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।



 

Show all comments
  • নুরজাহান ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:২১ এএম says : 0
    মহান স্বাধীনতা যুদে্ধের বীরদের প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা
    Total Reply(0) Reply
  • পিন্টু ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৪৭ এএম says : 0
    ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বৃথা যেতে পারে না...
    Total Reply(0) Reply
  • Shamima Shilpy ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৪৮ এএম says : 0
    মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
    Total Reply(0) Reply
  • Liakat Hossain ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৫৪ এএম says : 0
    মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে৷ কত বিপ্লবি বন্ধুর রক্তে রাঙা, বন্দীশালার ওই শিকল ভাঙা তাঁরা কি ফিরিবে আজ সুপ্রভাতে যত তরুণ অরুণ গেছে অস্তাচলে৷ সবাইকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
    Total Reply(0) Reply
  • সাঈদ আহম্মেদ ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৫৫ এএম says : 0
    মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর সেনানীদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি, তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। তাদের রেখে যাওয়া বাংলাদেশ বীরদর্পে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Azizur Rahman ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৫৫ এএম says : 0
    যাদের পরম আত্নত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতা, তাদের সকলের প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধা।
    Total Reply(0) Reply
  • Anayet Sumon ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৫৫ এএম says : 0
    গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি যাদের জীবনের বিনিময়ে আমাদেরকে এই বাংলাদেশ l তোমাদের এই ঋণ কখনো শোধ হবে না l
    Total Reply(0) Reply
  • Golam Farid ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৫৬ এএম says : 0
    মহান বিজয় দিবসে সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
    Total Reply(0) Reply
  • যোদ্ধা ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:১০ এএম says : 0
    ইনকিলাবের সাংবাদিকদের জন্য আজ বড় দু:খের দিন,তাদের.....আজ যে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছিল।
    Total Reply(0) Reply
  • Sayed, Freedom Fighter ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:০২ পিএম says : 0
    This VICTORY was brought by the Freedom Fighters but that is not pronounced by so many corners. Why? Most of them are from those Collaborators family.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আজ মহান বিজয় দিবস

১৬ ডিসেম্বর, ২০২০
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ