Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির ভার্চুয়াল সভা

| প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপটে ভারত ও বাংলাদেশের দুই প্রধানমন্ত্রী আজ ভার্চুয়াল বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিল্লী থেকে নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। উল্লেখ্য, চলতি বছরের মার্চ মাসে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের কথা থাকলেও করোনাকালীন লকডাউনের কারণে তা সম্ভব হয়নি। বছরের শেষে এসেও করোনা ভাইরাস সতর্কতার কারণে এটি ভার্চুয়াল বৈঠকের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, প্রত্যাশিত ও ভারত সরকারের প্রতিশ্রুত তিস্তার পানিচুক্তি ও অভিন্ন নদীর পানি বন্টন নিয়ে কোনো চুক্তি না হলেও মূলত ভারতের আগ্রহে অন্তত চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হতে পারে বলে গতকাল ইংরেজি দৈনিক নিউ এজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ১১টার সময় এ ভার্চুয়াল সভা শুরুর কথা রয়েছে। বলা বাহুল্য, বিগত এক দশকে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হয়েছে, যার বেশিরভাগই হয়েছে ভারতের অনুকুলে এবং তাদের প্রয়োজনে। এসব চুক্তির অনেক আগে থেকেই তিস্তার পানিবন্টন চুক্তির মত ইস্যুতে বাংলাদেশ বার বার ভারতের কাছে ধর্না দিয়েও শুধুমাত্র আশ্বাস ছাড়া কিছুই পায়নি। অন্যদিকে বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বের সবোর্চ্চ সুসম্পর্কের কথা বলে ভারত তার সব স্বার্থ আদায় করে নিয়েছে।

বিগত এক দশকে ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে যেসব বিষয় আদায় করে নিয়েছে বিগত ৭০ বছরেও তা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের নৌপথ, নৌ, সমুদ্র ও স্থল বন্দর, সড়কপথ এবং রেলপথ ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সাথে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্টের নামে করিডোর আদায় করে নিয়েছে। বিনিময়ে অভিন্ন নদ-নদীর ন্যায্য হিস্যা, বাণিজ্যিক অসমতা দূরীকরণ, শুল্কমুক্ত সুবিধা, সীমান্ত হত্যা বন্ধ থেকে শুরু করে কোনো কিছু পায়নি। আন্তর্জাতিক নদী আইন এবং কনভেনশন অনুসারে অভিন্ন নদীর পানিবন্টনের প্রশ্নে কোনো শর্ত চলেনা। এ ক্ষেত্রে কনভেনশন ও আইনগত বাধ্যবাধকতা বাংলাদেশের পক্ষে থাকলেও দশকের পর দশক ধরে যৌথ নদীর পানি বন্টনের প্রশ্নে ন্যায্য হিস্যা থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করছে ভারত। ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার বিনিময়ে বাংলাদেশ বিশাল অংকের রাজস্ব আয় করতে পারবে বলে বলা হলেও ভারতের চাপে নামমাত্র রাজস্ব নির্ধারণের মধ্য দিয়ে কার্যত বিনা শুল্কে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার ট্রানজিট ও বাণিজ্য সুবিধা নিচ্ছে ভারত। বাংলাদেশের সড়কের উপর দিয়ে তার মালামাল বহন করতে গিয়ে ভারি যানবাহনের কারণে সড়কের যে ক্ষতি হচ্ছে, তার মাশুলও বাংলাদেশকে দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে ভারত প্রায় এক দশক ধরে তিস্তার পানিচুক্তি নিয়ে টালবাহানা করে চলেছে। এমনকি নেপাল ও ভূটানের মত ল্যান্ডলক্ড প্রতিবেশির সাথে স্থলবাণিজ্য উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রেও ভারত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে। তবে ইতোমধ্যে, নেপালকে রেল ট্রানজিট সুবিধা দেয়া এবং ভুটানের সাথে বিনাশুল্কে বাণিজ্যিক সুবিধা বাংলাদেশ দিয়েছে। বাংলাদেশের এ ধরনের উদ্যোগ প্রশংসার দাবী রাখে। মুক্তবাজার অর্থনীতির ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে এ ধরনের পারস্পরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির উদ্যোগ সময়োপযোগী। এতে আঞ্চলিক সুযোগ-সুবিধা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও জোরদার হয়।

দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক শক্তি এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের ভূমিকা এখন নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। আমাদের সাথে তার যে একতরফা আচরণ তা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার এ সময়ে ভারসাম্যমূলক ও সমতাভিত্তিক অর্থনৈতিক সম্পর্কই পারস্পরিক স্বার্থে জরুরি। সময়ের প্রয়োজনেই চীনের সাথে বাংলাদেশের জোরালো অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক ও সমতাভিত্তিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। দেশটি এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদারে পরিণত হয়েছে। গত এক দশকে চীন বাংলাদেশে হাজার হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ ও উন্নয়ন সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়ালেও এ ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা বলতে তেমন কিছু নেই। পদ্মাসেতু বাস্তবায়নসহ বড় বড় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলো চীনের সহায়তায় দৃশ্যমান হয়ে উঠার পাশাপাশি প্রায় আটশ’ বাংলাদেশি পণ্যের উপর শুল্ক প্রত্যাহারের মাধ্যমে চীন বন্ধুত্বের অনন্য নিদর্শন স্থাপন করেছে। অন্যদিকে, ভারত পাটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের উপর এন্টিডাম্পিং ট্যাক্স আরোপ করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে। গত এক দশকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে ভারতের রাষ্ট্রীয় ঋণ (এলওসি) হিসেবে তিন দফায় মোট প্রায় সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প সহায়তার ঘোষণা দিলেও গত ১১ বছরে ঘোষিত ঋণচুক্তির টাকা ছাড় হয়েছে ১০ শতাংশেরও কম। এটা এক ধরনের প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়। এতে বুঝতে অসুবিধা হয় না, বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারতের ভূমিকা নেই বললেই চলে। আমরা আশা করব, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার বৈঠকে যেসব সমতাভিত্তিক চুক্তি হবে সেগুলোতে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করা হবে। শুধুমাত্র ভারতের আগ্রহের বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে, এটা কাম্য হতে পারে না। তিস্তার পানিচুক্তি, যৌথ নদী কমিশনের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিতকরণ, বাণিজ্য বৈষম্য দূরীকরণ, সীমান্ত হত্যা ও মাদক চোরাচালানের মত ইস্যুগুলোতে আমরা ভারতের সদিচ্ছার প্রতিফলন দেখতে চাই। নেপাল, ভূটানের মত প্রতিবেশিদের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং স্থলবাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে চুক্তি ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হওয়া জরুরী।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


আরও
আরও পড়ুন