Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মক্কায় মূর্তি এলো কখন

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

হযরত মোহাম্মাদ (সা.) শ্রেষ্ঠ ও শেষ নবী। আর ৫০০ বছর আগে ইমিডিয়েট নবী ছিলেন হযরত ঈসা (আ.)। হযরত ঈসা থেকে মধ্যবর্তী ৫০০ বছর তাওহীদের দাওয়াত দুর্বল হয়ে যায়। ঈসা (আ.)-এর উর্ধ্বগমনের পরপরই তার বিশিষ্ট হাওয়ারীগণ মারা গেলে ইহুদিরা ধর্মটিকে সম্পূর্ণ পাল্টে দেয়। ১০০ বছর পর জন পল নামক এক ইয়াহুদি নিজের মনমতো নতুন খৃষ্টধর্ম তৈরি করে।

বার্নাবাসের বাইবেল লুকিয়ে ফেলে নিজের মনের মাধুরি মিশিয়ে বাইবেল রচনা করে। যাতে মূল ইঞ্জিল বা আসমানী কিতাবের কিছু অংশই থেকে থাকবে। বাকি সব মানুষের রচনা। এসময় আরবরা বিশেষ করে হেজাজের লোকজন ছিল দীনে হানিফের ওপর। অর্থাৎ হযরত ইবরাহীমের তাওহীদি ধর্মের ওপর। কিছু লোক অবশ্য প্রকৃত খৃষ্ট ধর্মের সন্ধানও পেয়েছিল।

এরইমধ্যে মিশর, সিরিয়া ও প্রাচীন ইরাকী পৌত্তলিক মুশরিক স¤প্রদায়ের দেখাদেখি মুর্তিপূজা করতে এক দু’জন আরব উৎসাহী হয়। তখন সর্বপ্রথম জাজিরাতুল আরবে মূর্তি প্রবেশ করায় ইয়াহুদী আমর ইবনে লুহাই। এর আগে আরব উপদ্বীপের লোকেরা মূর্তি কি জিনিস, তা জানতো না। এরা তাওহীদি সমাজে বা দীনে হানিফে বিশ্বাসী মক্কাবাসীর সামনে শিরকের প্রস্তাব দিতে সাহস পায়নি। তখন আসে এই ভাস্কর্য পদ্ধতি।
নবী বিহীন ৫০০ বছরের অবসরে কোনো এক ফাঁকে তায়েফের লোকেরা একজন আল্লাহওয়ালার মহৎ ব্যক্তির মৃত্যুর পর স্মৃতি শ্রদ্ধা ও ভক্তির জন্য ভাস্কর্যের নামে তার মূর্তি তৈরি করে। লোকটির নাম ছিল লা’ত। যার ভাবার্থ হচ্ছে, আল্লাহওয়ালা।

কালক্রমে একদল লোক এটিকে পবিত্র মক্কায় নিয়ে আসে। মক্কাবাসীরা আরেক মহৎ ব্যক্তির মূর্তি নির্মাণ করে তার নাম মানাত। আরেক বংশের লোক নিজেদের বিশিষ্ট ব্যক্তি উজ্জা’র ভাস্কর্য নির্মাণ করে। আরেক গোত্র নির্মাণ করে হোবল। এই হলো লা’ত, মানাত, হোবল ও উজ্জা’র গল্প। আমর ইবনে লুহাই এর আনা মডেল মূর্তিটির ধারণা থেকেই এসবের নির্মাণ। এসব ছিল শিল্প সৌকর্যহীন বড় বড় পাথরের অসুন্দর মূর্তি। এরপর ধীরে ধীরে নানা প্রজন্ম শৈল্পিক সৌকর্যমন্ডিত সুদর্শন মূর্তি এনে আরবে স্থাপন করে। আরবে আনুষ্ঠানিক মূর্তিপূজার বিকাশ করেছে তারাই।

এরপর নতুন প্রজন্ম শ্রদ্ধার বদলে লা’ত মানাত হোবল উজ্জা’র ইবাদত শুরু করে। সময়ে সময়ে আল্লাহর ঘরেও ঢুকতে থাকে মূর্তি। একে একে ৩৬০ ছোট বড় মূর্তিতে ভরে যায় কাবাঘর ও আশপাশের এলাকা। পূজা শুরু হয় কৌশলে। দীনে হানিফের নামে শুরু হয় পৌত্তলিকতা মিশ্রিত নতুন ধর্ম। ইবরাহীমী ঐতিহ্য টিকে থাকে হজ্জের নামে।

আরবের মুশরিকরা নারী পুরুষ মিলিত আকারে উলঙ্গ হয়ে পবিত্র কাবা তাওয়াফ করতো। স্বয়ং আবু জাহেল এ ধরণের হজ্জ করেছিল ২৫ বার। দিনে দিনে মূর্তির প্রতি ভালোবাসা তাদের এতো বেড়ে গিয়েছিল যে, কিছু লোক নবী করিম (সা.)-এর হাতে ইসলাম গ্রহণের পরও আগের চেতনা ছাড়তে সময় লেগেছে। তারা তাওহীদে বিশ্বাসী হয়ে এক আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণার সময়ও কোনো কোনো মুনাফিক বগলের নিচে ছোট ছোট মূর্তি রাখত। যে জন্য তাকবীর বলার সময় তারা হাত ভালো করে উপরে তুলতো না। এরপর যখন অবশ্যই কাঁধ বা কানের লতি বরাবর হাত তোলার নিয়ম করে দেয়া হলো, তখন বগলের নিচের মূর্তি মাটিতে পরে গেল।

নবী করিম (সা.) একদিনে মূর্তি উচ্ছেদ করতে পারেননি। ইসলাম প্রচারের একুশ বছরই তিনি এসব মূর্তির বর্তমানেই নিজের দাওয়াত, তালিম ও তাজকিয়ার কাজ করে গেছেন। আল্লাহর পথে মানুষকে ডাকা, কোরআন সুন্নাহর শিক্ষা প্রচার ও মানুষের আত্মশুদ্ধি ছিল তার কর্মপন্থা। সবশেষে প্রায় ৮০টি যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। ২৭টি যুদ্ধে নিজে সশরীরে অংশগ্রহণ করেন। সাহাবীরা হতাহত হন। নবী (সা.) নিজে আহত হন।
ওফাতের দুই বছর আগে তিনি মক্কা বিজয় করেন। নিজ হাতে সব মূর্তি ভেঙে দেন। আর বলেন এই নগরীতে আর কখনো মূর্তি আসবে না। এই পবিত্র গৃহে আর কোনোদিন ভাস্কর্য বসবে না। এই হুকুম প্রতিটি মুসলিম সমাজের জন্য। যেখানে আল্লাহ তাওহীদ, একত্ববাদ, ঈমান, ইসলাম দিয়েছেন সেখানে কোনোভাবেই যেন মূর্তি, ভাস্কর্য ও প্রতিমার অনুপ্রবেশ না ঘটে। এটাই মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা।



 

Show all comments
  • Md Majed ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৪৯ এএম says : 0
    কাবা শরীফ প্রথম থেকেই তাওহীদ ও ইমানের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। আল্লাহ্ তা‘য়ালা ইবরাহীমকে আ. সেখানে তাওয়াফকারী, অবস্থানকারী, রুক ও সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যেমন ইবরাহীম আ. নিজেই বলেছেন: “হে আমার প্রতিপালক! তুমি এই শহরকে নিরাপদ নগর বানিয়ে দাও, আমাকে ও আমার বংশধরদের মূর্তিপূজা থেকে দূরে রাখ।” সূরা ইব্রাহীম, আয়াতঃ ৩৫।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Majed ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৫০ এএম says : 0
    রসূল সা. হিজরতের আট বছর পর মক্কা বিজয়ের দিন মূর্তি ভেঙ্গে বিনাশ করে দেন। তিনি নিজ হাতে এক বিশেষ লাঠি নিয়ে মূর্তিগুলো ভাঙ্গতেছিলেন আর মুখে ধ্বনি দিচ্ছিলেন আর বলেন: “সত্যের বিজয় এসেছে বাতিলের পরাজয় আর বাতিল তো পরাজিত হবারই।” (সূরা ইসরা, আয়াত: ৮১)
    Total Reply(0) Reply
  • তোফাজ্জল হোসেন ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৫০ এএম says : 0
    হযরত আলীকে রা. নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, কাবা শরীফের উপরে উঠে সমস্ত মূর্তি ফেলে দিতে। তিনি কাবা শরীফের উপর ও ভেতরের কোনো মূর্তিকে ছেড়ে কথা বলেননি।
    Total Reply(0) Reply
  • তোফাজ্জল হোসেন ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৫২ এএম says : 0
    বুখারী শরীফে ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত আছে যে, “সে সময় শাম দেশে তথা সিরিয়াতে কয়েকজন সৎ লোক ছিলেন। তাঁরা দিনে রোযা পালন করে রাতে তাহাজ্জদ নামায আদায় করতেন। তাঁরা ছিলেন পাঁচজন- ওয়াদ্দ, সুওয়া‘আ, ইয়াগূস, ইয়া‘উক এবং নাসর। যা সূরা নূহের ২৩ নং আয়াতে বর্ণিত আছে। “এবং বলেছিলঃ পরিত্যাগ করো না তোমরা কখনও তোমাদের উপাস্যগুলোকে এবং ওয়াদ, সুওয়া‘আ, ইয়াগুস, ইয়াউক ও নাসরকের পরিত্যাগ করো না।” তাঁরা সবাই ছিলেন সৎ ও ভাল মানুষ। আল্লাহর ইবাদতের জন্য সব মানুষ তাদেরকে ভালবাসতেন। এক মাসের মধ্যে তাঁদের ৫ জনের মৃত্যুতে মানুষেরা দুঃখিত ও মর্মাহত হয়। সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। এরপর একজন শয়তান মানুষররূপে সেই লোকদের কাছে এসে বলে যে, আমিতো ঐ লোকদের রূহ তৈরি করতে পারবে না, যেভাবে তারা হাঁটতো ও কথা বলতে পারত। তবে তোমাদের জন্য তাদের আকৃতি বানিয়ে দিতে পারব। এরপর সে হুবহু তাদের আকৃতিতে পাঁচটা মূর্তি তৈরি করে। এরপর বলে এদের আকৃতি আমাদেরকে আল্লাহর ইবাদতে উদ্বদ্ধ ও উৎসাহিত করবে। এভাবে একটি প্রজন্মের বিলিপ্ত হলে দ্বিতীয় প্রজন্মের আগমন ঘটলে তারা তাঁদের পূজা শুরু না করে শুধু বলত, হে সৎ লোকেরা! আমাদের জন্য ভাল কাজগুলো করে দাও। এরপর প্রায় ৩০০ বছর পর ৩য় প্রজন্মের আগমন ঘটলে তাদের মনে প্রশ্ন জাগে কোন তাদের পূর্বপুরুষেরা এসব প্রতিমা তৈরি করেছিল? তাদের কাছে সেই রহস্য গোপন ছিল। এরপর শয়তান আবার তাদের এদের কাছে মানুষরূপে এসে বলে, তাদের প্রতিমায় আমাদের প্রভু হাজির হয়েছে। ফলে তারা এসব প্রতিমার পুজা করা শুরু করে। যা যথাক্রমে সূরা শু‘য়ারার ৭৪ নং আয়াত, আম্বিয়ার ৫৩ নং আয়াত ও যুখরাফের ২৩ নং আয়াতে বর্ণিত আছে।
    Total Reply(0) Reply
  • দর্শন ই ইসলাম ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৫৪ এএম says : 0
    আমর বিন লুহাই আল-খুযায়ী’ বানূ বকর পরিবারের সাহায্যে নেতা নির্বাচিত হন। তারা মক্কা শরীফের সব দায়িত্বভার গ্রহণ করে। নেতা হিসেবে সে শাম দেশে ভ্রমনে যায়। সেখানে যাওয়ার পর দেখে যে, তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে পাথরের প্রতিমাসহ বিভিন্ন মূর্তির ইবাদত করতে থাকে। তার কাছে এটা ভাল মনে হল আর ভাবলো এটাই সত্য। কেননা, সেখানে অনেক নবী ও আসমানী কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল। সে তাদের বলল: তোমরা এগুলো কিসের ইবাদত করিতেছ? তারা বলল: এগুলো মূর্তি যার আমরা ইবাদত করি। তাদের কাছে বৃষ্টি চাইলে বৃষ্টি দেয়, সাহায্য চাইলে আমাদেরকে সাহায্য করে। এরপর সে বলে, আমাকে যদি তোমরা একটি মূর্তি দাও তাহলে আমি তা আরব দেশে নিয়ে যাবো তারাও তোমাদের মত এর ইবাদত করবে। তারা তাকে একটি মূর্তি দেয়। সে তা নিয়ে মক্কায় ফিরে আসে। এবং সে মানুষকে তার ইবাদত করতে ও তাকে সম্মান করতে আহ্বান করে। এরপর হেযাযবাসী মক্কার লোকদের অনুসরণ করে মূর্তির পূজা শুরু করে। ওয়াদ্দ মূর্তির উপাসনা করে বানু কালব গোত্র, সুওয়া‘আ মূর্তির ইবাদত করে বানু হুযাইল, ইয়াগূস মূর্তির ইবাদত করে বানু গুতাইফ গোত্র, ইয়া‘উক মূর্তির ইবাদত করে হামাদান গোত্র এবং নাসর মূর্তির ইবাদত করে কুলা‘ গোত্র। (তাফসীরে তবারী)। সকল মূর্তির সেরা হুবলের ইবাদত করত কুরাইশ বংশ। এমনকি প্রত্যেক গোত্রের জন্য একটি করে মূর্তি থাকে। এভাবে আরব উপদ্বীপে মূর্তির সয়লাপ ঘটে।
    Total Reply(0) Reply
  • জামান ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৫৬ এএম says : 0
    ভালো লাগছে খুব বেশি
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Zaman ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৪৬ এএম says : 0
    Allahu Akbar
    Total Reply(0) Reply
  • parvez ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ৬:৪৯ এএম says : 0
    কিছু লোক নবী করিম (সা.)-এর হাতে ইসলাম গ্রহণের পরও আগের চেতনা ছাড়তে সময় লেগেছে। তারা তাওহীদে বিশ্বাসী হয়ে এক আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণার সময়ও কোনো কোনো মুনাফিক বগলের নিচে ছোট ছোট মূর্তি রাখত। যে জন্য তাকবীর বলার সময় তারা হাত ভালো করে উপরে তুলতো না।....... ডাহা মিথ্যা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন