Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাড়ি নির্মাণের ঋণ লাভের ক্ষেত্রে এখনো নানা বাধা

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় (২)

প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম




ইনকিলাব ডেস্ক
(গত সংখ্যার পর)
আগুনে পুড়ছে গাড়ি ও বাড়ি, লোকজন পাথর ও বোতল ছুঁড়ছে দাঙ্গা পুলিশের দিকে। এটা ছিল গত শনিবারের দৃশ্য। জো অ্যান আর সাবির কয়েক মাইল দূরে রাত কাটানোর সময় এ পরিস্থিতির সম্মুখীন হন।  ২৩ বছর বয়স্ক যে লোকটি এক কৃষ্ণাঙ্গ পুলিশ অফিসারের গুলিতে নিহত হন, তিনি গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে পালানোর সময় অস্ত্র ফেলে দেয়ার নির্দেশ অমান্য করেছিলেন বলে পুলিশ জানায়।
মিলওয়াউকির কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারগুলো বহু দশক ধরেই বৈরিতার শিকার। ১৯৫৫ সালে আবাসন পৃথকীকরণের সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেছিলেন জেডি কুইটম্যান হাইলার যখন তিনি ওয়াউওয়াটোসার পশ্চিম উপকন্ঠে একটি খোলা জমিতে তার বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। মিসিসিপির পল্লী এলাকার মানুষ এক পোস্ট অফিস কর্মচারী ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক হাইলার ছিলেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ যিনি সেখানে বাড়ি তৈরির চেষ্টা করেন। তার এ উদ্যোগ প্রশংসিত হয়নি। একদিন তিনি তার নির্মাণস্থলে ফিরে এসে দেখেন নির্মাণ কাঠামো ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। তিনি তা ঠিকও করেন। কিন্তু আবার ফিরে এসে দেখেন তা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
এ অবস্থায় একদিন সন্ধ্যায় তিনি কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে নির্মাণস্থলে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। তারা রাইফেল হাতে তৈরি ছিলেন হামলাকারীদের প্রতিহত করতে। কিন্তু দুষ্কৃতকারীরা ফিরে আসেনি। হাইলার বাড়ি নির্মাণ সমাপ্ত করেন।
সাবিরের পিতামহদের জন্য পরিস্থিতি সুবিধাজনক ছিল না। দক্ষিণের অভিবাসী তারা এমন এক সময় একটি বাড়ি কেনার চেষ্টায় ১০ বছর ব্যয় করেন যখন কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারগুলোর বাস নির্দিষ্ট কিছু ব্লকে সীমাবদ্ধ ছিল। শেষ পর্যন্ত পরিবারের এক মহিলা সদস্যের চেষ্টায় ১৯৫০-এর দশকের মধ্যভাগে নর্থ সেভেন্টিন্থ স্ট্রিট ও নর্থ অ্যাভিনিউর কোণে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণে সক্ষম হন।
তাদের অবস্থান ছিল শ্বেতাঙ্গদের মাঝখানে।
১৯৫০ সালে সেখানে যখন আদমশুমারি হয় তখন দু’জন কৃষ্ণাঙ্গ ও ৬ জন অন্য বলে তালিকাভুক্ত হন। বাকি সবই ছিলেন শ্বেতাঙ্গ।  ১৯৬০ সাল নাগাদ সেখানে ২৩৪৪ জন কৃষ্ণাঙ্গ পাওয়া যায় যারা ছিলেন স্থানীয় জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ।
কয়েক বছরের মধ্যেই মিলওয়াউকির অর্থনীতি পড়তে শুরু করে। শহরের হাজার হাজার নির্মাণ পেশার চাকরি বিলুপ্ত হয়। সম্পত্তির মূল্য হ্রাস পায়, আবাসন নীতিতে কালো লোকদের জন্য ঋণ লাভ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তারা শহরতলিতে চলে যায় যেখানে অনেক চাকরি সরিয়ে নেয়া হয়।  
কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ব্যাংক ঋণদান বন্ধের যে পন্থা গ্রহণ করা হয় তা শিকাগো, নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্য শহরেও কার্যকর হয়। তবে তার গুরুতর প্রভাব প্রমাণিত হয় বিশেষ করে মিলওয়াউকিতে। সে কারণে সেখানে কৃষ্ণাঙ্গ বিত্তশালীদের কোনো বসত গড়ে ওঠেনি।
কৃষ্ণাঙ্গ অধিবাসী ও নেতারা পাল্টা লড়াইয়ের চেষ্টা করেন। ১৯৬২ সালে ভেল ফিলিপস নামে পৌর পরিষদের এক নির্বাচিত মহিলা সদস্য একটি সুষ্ঠু আবাসন অধ্যাদেশের প্রস্তাব করেন। ১৯৬০-এর দশকে তার সহকর্মীরা ৪ বার সর্বসম্মতভাবে তার বিরুদ্ধে ভোট দেন।
আন্দোলনকারীরা ১৯৬৭ সালের গ্রীষ্মে রাস্তায় নেমে আসেন। উপর্যুপরি ২০০ দিন ধরে সুষ্ঠু আবাসন আইনের জন্য বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তারা মাঝে-মধ্যেই বর্ণবাদী গালাগালি, ডিম ও পাথর নিক্ষেপের শিকার হন।
কেন্দ্রীয় সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়ার প্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত কমন কাউন্সিল ১৯৬৮ সালে সুষ্ঠুু আবাসন আইন অনুমোদন করে।
ইতোমধ্যেই ভেদ রেখা টানা হয়ে গিয়েছিল এবং কৃষ্ণাঙ্গদের উন্নতির পথে নানা বাধা বহাল ছিল। জন গুর্ডার লেখা ‘মিলওয়াউকি ঃ সিটি অব নেবারহুডস’ বই অনুযায়ী বেসবল তারকা হ্যাংক অ্যারন ১৯৫০-এর দশকে ঐ এলাকায় বাস করতে গেলে তিনিও হয়রানি থেকে মুক্তি পাননি। রাফাস কিং এলাকার কৃষ্ণাঙ্গ জনসংখ্যা ১৯৬০ সালে ছিল ০.৪ শতাংশ, ১৯৮০-তে তা এসে দাঁড়ায় ৮৯ শতাংশ।
বর্ণবাদ ও আবাসনের এ ঐতিহাসিক পরিসংখ্যান আজো অন্তর্হিত হয়নি। ২০০৬ সালেও সিটি সরকারের এক রিপোর্টে দেখা যায় একই আয়ের শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে স্বচ্ছল ও কৃষ্ণাঙ্গ  মিলওয়াউকিবাসীদের ২.৭ গুণ কম গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান করা হয়। সূত্র : দি নিউ ইয়র্ক টাইমস। (অসমাপ্ত)  
 












 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাড়ি নির্মাণের ঋণ লাভের ক্ষেত্রে এখনো নানা বাধা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ