Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রশ্ন ঃ আমলের বিশুদ্ধতা কি জীবনকে পরিশুদ্ধ করবে?

মুফতি জাওয়াদ তাহের | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

উত্তর : মনের মাঝে বড় হওয়ার স্বপ্ন পোষে মানবকুল সবাই। নিজের জীবনকে আলোকিত করার বাসনা রয়েছে সব মানুষের হৃদয়ে। সকলেই চায় তার জীবনের সকল দু:খ দুর্দশা মুছে যাক। কিন্তু চাওয়া আর পাওয়া অনেকের ক্ষেত্রে অধরাই থেকে যায়। শত চেষ্টা করেও অনেকে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না। নিজের জীবনকে বদলে ফেলার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও সে বদলাতে পারে না। এর কারণ হচ্ছে আমরা শুধু বাহ্যিক উপায় উপকরণের পেছনেই ছুটি। প্রকৃত জিনিসকে উপলব্ধি করে খুব কম মানুষেই। যার ফলে তারা আর বাস্তবতার মুখ দেখে না। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করার পদ্ধতি বলে দিয়েছেন। যদি কেহ তার জীবনকে সুন্দর করতে চায় তাহলে সে যেন তার আমলকে সুন্দর করে।

আল্লাহ বলেন: ‘নিশ্চয় আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না; যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে। আর কোন সম্প্রদায়ের সম্পর্কে যদি আল্লাহ অশুভ কিছু ইচ্ছা করেন তাহলে তা রদ করবার কেউ নেই এবং তিনি ছাড়া তাদের কোন অভিভাবক নেই’।-সূরা র‘দ:১১

বান্দা যখন নিজেদের জীবন-যাপন অবাধ্যতা ও নাফরমানীতে পরিবর্তিত করে নেয়, তখন আল্লাহ তা›আলাও স্বীয় কর্মপন্থা পরিবর্তন করে দেন। এ পরিবর্তন হয় তারা নিজেরা করে, অথবা তাদের উপর যারা কর্তৃত্বশীল তারা করে, নতুবা তাদেরই মধ্যকার অন্যদের কারণে সেটা সংঘটিত হয়। যেমন উহুদের মাঠে তীরন্দাযদের স্থান পরিবর্তনের কারণে মুসলিমদের উপর বিপদ এসে পড়েছিল। মুসলমানদের পরাজয়ের বাহ্যিক কারণ মনে করা হয় তীরান্দাজ বাহিনী নিজেদের স্থান ত্যাগ করা। অথচ তাদের বলা হয়েছিলো কোনো অবস্থাতেই ওই স্থান ত্যাগ করা যাবে না।

ইসলামী শরী’আতে এরকম আরও বহু উদাহরণ রয়েছে। তবে এর মানে এ নয় যে, তিনি কারও কোন গুনাহ ব্যতীত তাদের উপর বিপর্যয় দেন না। বরং কখন কখনও অপরের গুনাহের কারণে বিপর্যয় নেমে আসে। যেমন রাসুল সা: সাল্লামকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, আমাদের মধ্যে নেককাররা থাকা অবস্থায় কি আমাদের ধ্বংস করা হবে? তিনি বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, যখন অন্যায় অপরাধ ও পঙ্কিলতা বৃদ্ধি পায়’ -তিরমিজি: ২১৮৫

যে জাতিকে আল্লাহ তা›আলা কোন নেয়ামত দান করেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি তা তাদের কাছ থেকে ফিরিয়ে নেন না, যে পর্যন্ত না তারা নিজেরাই নিজেদের অবস্থা ও কার্যকলাপকে পরিবর্তিত করে আল্লাহ তা›আলার আযাবকে আমন্ত্রণ জানায়।

অন্যত্রে আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘আরো (আমার কাছে ওহী করা হয়েছে এই) যে, তারা যদি সত্য-সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত থাকত, তাহলে আমি তাদেরকে প্রচুর পানি পান করাতাম’।-সূরা জি¦ন:১৭

হযরত ইউনুস আ: এর জাতি যাদের উপর আল্লাহর আজাব অবধারিত হয়ে গেছে, তা সত্তেও যখন তারা তাওবা করেছে তখন আল্লাহ তাদের থেকে আজাব উঠিয়ে নিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে: তারা যখন ঈমান আনে তখন আমি তুলে নেই তাদের উপর থেকে অপমানজনক আযাব-পার্থিব জীবনে এবং তাদের কে কল্যাণ পৌছাই এক নিধারিত সময় পর্যন্ত।-সূরা ইউনুস:৯৮

একজন চরিত্রবান মু›মিন সৎ ও ধর্মভীরু জীবন যাপনে, আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যে, দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত ও অল্পে তুষ্ট হওয়াতে যে পরম সুখ-স্বাদ অনুভব করে, তা কোন কাফের ও পাপী ব্যক্তি পৃথিবীর সকল সুখ ভোগ করলেও সে সুখ-স্বাদ পায় না। বরং সে এক ধরনের মানসিক অশান্তি ভোগ করে। মহান আল্লাহ বলেন, যে আমার স্মরণে বিমুখ হবে, তার জীবন হবে সংকুচিত। -সূরা তহা:১২৪)

অন্যত্রে বলেন: যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমাণদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত।-সূরা নাহল:৯৭

বান্দার সৃষ্টির উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ বলেন: যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়।-সূরা মুলুক-২

সূরা রোমের ৪৪নং আয়াতে আল্লাহ বলেন: যে অবিশ্বাস করে, অবিশ্বাসের জন্য সে-ই দায়ী। আর যারা সৎকাজ করে, তারা নিজেদেরই জন্য সুখশয্যা রচনা করে।

মহান আল্লাহ তাআলা প্রতিটি মুমিনের সুখ-দুঃখের উত্তম সঙ্গী। নির্জনে-নিভৃতে বান্দা যখন মালিকের কাছে প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাআলা তখন মহানুভবতায় বান্দার সমস্যা দূর করে দেন। তাই বুদ্ধিমান সে যে তার আমলের মাধ্যমে নিজের ভবিষ্যতকে সুন্দর করে।
উত্তর দিচ্ছেন : মুফতি জাওয়াদ তাহের



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আমল

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ