Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মামলা প্রত্যাহার না হলে কঠোর আন্দোলন

সংবাদ সম্মেলনে হেফাজত আমির আল্লামা শফীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে : মামলাকারীরা প্রত্যাখ্যাত আদর্শ বিচ্যুত দালালগোষ্ঠী

চট্টগ্রাম ব্যুরো ও হাটহাজারী সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

হেফাজতে ইসলামের আমির শায়খুল হাদীস আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী বলেছেন, আল্লামা শাহ আহমদ শফীর (রহ.) স্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি রাজনৈতিক চক্রান্ত এবং দেশের স্থিতিশীল অবস্থা বিনষ্ট করার দুরভিসন্ধি।

একটি চিহ্নিত দালালগোষ্ঠী আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে জিম্মি করে হাটহাজারী মাদরাসায় ব্যক্তিতন্ত্র কায়েম করে রেখেছিল। তারা ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিল করে তার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল। জনপ্রত্যাখ্যাত এবং ইসলামী নীতি ও আদর্শচ্যুত এই চক্রটি ষড়যন্ত্রমূলক এ মিথ্যা ভিত্তিহীন মামলা করেছে। তিনি অবিলম্বে এ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। তা না হলে শূরা কমিটির বৈঠক ডেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন হেফাজত আমির। গতকাল বুধবার হাটহাজারী মাদরাসায় আয়োজিত জনাকীর্ণ এক সংবাদ সম্মেলনে তার লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান হেফাজত নেতা ড. নুরুল আবসার আজাহারী।

হেফাজত আমির বলেন, আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর দীর্ঘ সময়ের মহাপরিচালক এবং দেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমির ছিলেন। তার ইন্তেকালে দেশবাসীর সাথে মাদরাসার সকল শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মকর্তাবৃন্দ গভীর শোকাহত।

মাদরাসার তৎকালীন শিক্ষাপরিচালক আল্লামা মুফতী নূর আহমদকে পাশ কাটিয়ে সহকারি শিক্ষা পরিচালক মাওলানা আনাস মাদানী দীর্ঘদিন থেকে ছাত্রদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছিলেন। তিনি একক সিদ্ধান্তে অনেক ছাত্র এবং শিক্ষককে মাদরাসা থেকে বহিষ্কার করেন। তার অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারি কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে আল্লামা আহমদ শফি (রহ.) ইন্তেকালের দু’দিন পূর্বে সর্বস্তরের ছাত্ররা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।

বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা তাদের সুনির্দিষ্ট দাবি দাওয়া তৎকালীন মুঈনে মুহতামিম আল্লামা শেখ আহমদের মাধ্যমে আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) নিকট পেশ করেন। তিনি শূরা আহ্বান করে মাওলানা আনাস মাদানীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেন এবং ছাত্রদের দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দেন। পরদিন ১৭ সেপ্টম্বর শূরার সিদ্ধান্তকে অমান্য করে আনাস মাদানী অনির্দিষ্ট কালের জন্য মাদরাসা বন্ধ করে দেয়ার পায়তারা করলে, পুনরায় ছাত্ররা ব্যাপক বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে।

তখন আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) পুনরায় শূরা আহ্বান করেন। ছেলে আনাস মাদানীর দীর্ঘদিনের স্বেচ্ছচারিতা, অনিয়ম, ছাত্র-শিক্ষকদের প্রতি জুলুম-নির্যাতনসহ নানা দুর্নীতি তার সামনে স্পষ্ট হলে, তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। যার ফলে তিনি আনাস মাদানীর উপর ক্ষুদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে মাদরাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করে শূরার নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। কিন্তু শূরা সদস্যগণ তা গ্রহণ না করে তাকে সদরে মুহতামিম হিসেবে মনোনীত করেন। ইতোমধ্যে তিনি অসুস্থতাবোধ করলে সিনিয়র উলামায়ে কেরামের উপস্থিতিতে তাকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।

জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, তার এ স্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে কুচক্রি মহল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নির্জলা মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। তার ইন্তেকালের তিন মাস পর তারা মৃত্যুকে অস্বাভাবিক আখ্যা দিয়ে একটি মিথ্যা মামলাও দায়ের করে। তারা দেশের আলেম সমাজ ও সচেতন তৌহিদী জনতার কাছে প্রত্যাখ্যাত। মামলায় তথাকথিত হত্যার যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো অতিরঞ্জন ও মিথ্যাচারে পরিপূর্ণ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বলেন, তাকে হত্যা করা হয়েছিল এমন কোনো মেডিকেল রিপোর্টও দালালগোষ্ঠী জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারেনি। দায়েরকৃত মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে এবং বিবরণে যাদেরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তারা কেউ এর সাথে সম্পৃক্ত নয়।

এ কুচক্রী মহল নিজেদের কর্মফলের পরিণতিস্বরূপ আল্লামা শফীর মৃত্যু নিয়ে নতুন ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে চক্রান্তে নেমেছে। মামলাটি সেই চক্রান্তেরই অংশ। আহমদ শফীর জীবদ্দশাতেও তাকে জিম্মি করে কায়েমী স্বার্থ হাসিল করতে দেখা গিয়েছিল। তারাই ওনাকে জিম্মি করে একের পর এক দুর্নীতি ও অনাচার চালিয়ে ওনার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলো। মাদরাসার শিক্ষক মন্ডলী, ছাত্রজনতা, উলামায়ে কেরাম এবং এলাকাবাসী এই মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপূর্ণ মামলা দ্বারা ফায়দা হাসিল করার সুযোগ তাদেরকে দেবে না, ইনশাআল্লাহ।
এ সময় হেফাজত নেতা আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, মোহাম্মদ ইয়াহইয়া, আল্লামা নোমান ফয়জী, তাজুল ইসলাম, আল্লামা মোহাম্মদ শোয়াইব, মুফতী কেফায়েতুল্লাহ, মুফতী জসিম উদ্দীন, লোকমান হাকিম, কবির আহমদ, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদি, আল্লামা দিদার কাসেমী, মাওলানা নাছির উদ্দীন মুনীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হেফাজতে ইসলাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ