Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অনলাইনকেন্দ্রিক জুয়া-অপরাধ বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

সাইবার ক্রাইমের ধরনের কোনো শেষ নেই। জুয়া একটি ধরন। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে জানানো হয়েছে, দেশে অনলাইন জুয়ার আসর রমরমা রূপ ধারণ করেছে। বিভিন্ন অ্যাপ খুলে চালানো হচ্ছে জুয়া। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও বেকার যুবকেরা প্রধানত এই জুয়ায় আসক্ত। তাদের সংখ্যা বাড়ছে। দেশি- বিদেশি বিভিন্ন লিগ খেলা ও মোবাইল গেমকে ঘিরে বাজি ধরার নামে চলে এই জুয়া। আয়োজকের ভূমিকায় থাকে ওয়েবসাইট। এরকম বহু ওয়েবসাইট রয়েছে। ওয়েবসাইটে একাউন্ট খুলে তারপর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিয়ে জুয়ায় অংশ নিতে হয়। অনলাইন জুয়াড়িরা বিকাশ, রকেট ও নগদসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা দিয়ে থাকে। অনলাইনে জুয়ার অপরাধে ইতোমধ্যে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। সম্প্রতি অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট একটি চক্রের কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে, যার সদস্যরা তাদের সাইটে অ্যাকাউন্ট খোলা ও টাকা জমা দেয়ার জন্য ফেসবুক ও ইউটিউবে বিজ্ঞাপন পর্যন্ত দিত। অ্যান্টি টেরোরিজম ইউটের তরফে বলা হয়েছে, চক্রের মোবাইল ব্যাংকিংয়ে কয়েক কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য রয়েছে। আইন-শৃংখলা বাহিনীর বরাতে খবরে অনলাইন জুয়া তীরখেলা সম্পর্কে বলা হয়েছে, এটি ভারতের শিলিং থেকে প্রথমে সিলেটে এবং পরে নেত্রকোনা হয়ে ঢাকায় আসে। ‘তীর টুডে ডটকম’-এর মাধ্যমে এ জুয়া সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে এর মধ্যেই হাজার হাজার মানুষ নিঃস্বে পরিণত হয়েছে। পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের মতে, ৭০ থেকে ৮০ গুণ লাভের লোভ দেখিয়ে ১ থেকে ৯৯ পর্যন্ত জুয়ার সংখ্যা বিক্রী করা হয়। একজন একাধিক সংখ্যা কিনতে পারে। দিনে দু’বার ড্র হয়। এতে একজন বিজয়ী হলেও অন্যরা নি:স্ব হয়ে পথে বসে যায়। দিনমজুর, শ্রমিক, শিক্ষার্থী, ছোট ব্যবসায়ী ইত্যাদিকে টার্গেট করে সাজানো হয় এই জুয়া। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা যায় সীমান্তে। সেখানে থেকে হুন্ডির মাধ্যমে যায় ভারতে। শুধু ভারতভিক্তিক নয়, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশভিত্তিক জুয়ারও চক্র আছে, যারা এখানে সক্রিয়। এছাড়াও রয়েছে অনলাইন লুডু, কেরামসহ শতাধিক গেম। এসবে কিশোর-কিশোরীরাই বেশি আসক্ত।

অনলাইন জুয়ার এই কারবারে একদিকে কিশোর-কিশোরী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, বেকার যুবক ও নিম্ন আয়ের মানুষ জড়িত হয়ে পড়ছে, নিজেদের ভবিষ্যতকে অনিশ্চিত করে ফেলছে অন্যদিকে জুয়ার অর্থ যোগাতে গিয়ে বিভিন্ন রকমের অপরাধেও সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে জুয়ার সুবাদে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা, কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের অধিক সংখ্যায় জুয়াসক্ত হয়ে পড়া দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যারা আগামীতে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে হাল ধরবে তারা যদি মদ-মাদক, জুয়াসহ অনৈতিক কাজে নিজেদের অভ্যস্ত করে ফেলে তবে তাদের নিজেদের ভবিষ্যত তো ধ্বংস হবেই, একই সঙ্গে দেশের ভবিষ্যতও নষ্ট ও বিপন্ন হয়ে যাবে। করোনাকারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খেলাধুলা ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কার্যত ঘরবন্দী হয়ে আছে। এ অবস্থা তাদের অনলাইনমুখী করেছে। কাজ না থাকায় তারা অনলাইনে জুয়া, খেলা ইত্যাদিতে আসক্ত হয়ে পড়েছে ক্রমশ। এই নিষ্ফলা সময়ে, মহামারিকালে বেকার ও তরুণদের অনেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কর্ম নেই, চাকরিবাকরি নেই, উপরন্তু অভিভাবকদের ওপর নির্ভরশীলতা তাদের অতীষ্ট করে তুলেছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক বিভাজন, ক্ষমতাসীনদের অনৈতিক আচরণ প্রভৃতিও তাদের মর্মপীড়ার কারণ। এ প্রসঙ্গে আরেকটি কথাও বলতে হবে যে, লোভ-লালসাও এজন্য বিশেষভাবে দায়ী। এরকম পরিস্থিতিতে যে কারো বিপথগামী হয়ে পড়া অসম্ভব নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নৈতিক মানের চরম অবনতি এবং মূল্যবোধের অবিশ্বাস্য ধস নেমেছে সমাজের প্রতিটি স্তরে। যুবক-তরুণরাও তার বাইরে নয়। পবিত্র কোরআনে মদ, জুয়া, মূর্তি ও ভাগ্য পরীক্ষার তীরকে ঘৃণ্য বা নিকৃষ্ট বস্তু বলে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে: এসব শয়তানের কাজ। তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো। পবিত্র কোরআনের এই বাণী ও শিক্ষা যদি সমাজে অনসৃত হতো, সমাজ কখনোই এত অবনত হতে পারতো না। মদ-মাদক ও জুয়ার সয়লাব সৃষ্টি হতো না।

অনলাইনে নানা প্রকার অপরাধ, প্রতারণা, গুজবরটনা ও চরিত্রহননের উৎসব দেখা দিয়েছে। এর ভালো দিক অবশ্যই আছে। তার সুবিধা মানুষ লাভ করছে। ভালো দিক যেমন বলে শেষ করা যাবে না তেমনি খারাপ দিকও রয়েছে বহু। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরির সুযোগ, ছোটখাটো কাজ করে ভালো উপার্জন ইত্যাদির টোপ দিয়ে প্রতারণা করা রীতিমত সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। প্রযুক্তির প্রতিনিয়ত উন্নয়ন ঘটছে। সাইবার ওর্য়াল্ডেও সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিফলন ঘটছে। বিভিন্ন প্লাটফর্ম ও অ্যাপ তৈরি হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রতারণনার ধরন ও কৌশল বদল হচ্ছে। প্রতারকচক্র এতটাই সেয়ানা যে, এই সব প্লাটফর্ম ও অ্যাপ কাজে লাগিয়ে মানুষজনকে ফতুর বানাচ্ছে। ক’দিন আগে একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত এক রিপোটে বলা হয়েছে, সাইবার অপরাধীচক্র বিভিন্ন ভুয়া গ্রুপ পেইজ খুলে তরুণ-তরুণীদের চাকরি দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব অপরাধ ও প্রতারনার কারণে অনেকেই গ্রেফতার হচ্ছে। কিন্তু তাতে এসব বন্ধ হচ্ছে না। অপরাধী ও প্রতারক চক্রের যেমন রয়েছে প্রযুক্তিগত জ্ঞান তেমনি রয়েছে অপরাধ ও প্রতারণার নতুন নতুন আইডিয়া। ফলে তাদের সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত করা যাচ্ছে না। তাদের রুখতে হলে উচ্চপ্রযুক্তিজ্ঞানসমৃদ্ধ দক্ষ-অভিজ্ঞ লোকবল দরকার। বিশেষ করে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে এই লোকবল গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা সব ধরনের সাইবার অপরাধ, প্রতারণা, জুয়া ইত্যাদি দ্রুত এবং সহজে প্রতিরোধ করতে পারে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অনলাইন


আরও
আরও পড়ুন