Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কুষ্টিয়ায় উচ্চ ফলনশীল ধানবীজের সন্ধান

জিন ক্রসিংয়ে আরও অধিক ফলন হতে পারে

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, ৬:০৬ পিএম

কুষ্টিয়ায় উচ্চ ফলনশীল নতুন ধান বীজের সন্ধান পেয়েছেন এক কৃষক। কুমারখালী উপজেলার কাঁঠালডাঙ্গী গ্রামের সাদেক প্রামাণিকের ছেলে ওই কৃষকের নাম আব্দুর রাজ্জাক। তিনি এ উপজেলার এলঙ্গী গ্রামের গৃহস্থ নজরুল ইসলামের জমিতে স্থায়ী কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। দুই বছর পূর্বে তিনি বিরি-৫১ জাতের ধান খেতের মধ্যে দুইটি ভিন্ন জাতের ধান দেখতে পেয়ে সেটা আলাদা বীজ হিসেবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেন। ভিন্ন এই জাতটির শীষ দেখতে খেজুর ছড়ার মতো, তাই তিনি এর নাম রেখেছেন খেজুর ছড়া বা খেজুর ঝুটি। কুষ্টিয়া কৃষি বিভাগ বলছে, ব্যতিক্রমী এই বীজ প্রচলিত উচ্চ ফলনশীল জাতের সঙ্গে জিন ক্রসিংয়ে আরও অধিক ফলনের জাত উদ্ভাবন হতে পারে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট জানায়, সংগৃহীত এই বীজের জাত নির্ণয়সহ জিন সংযোজনে অধিক ফলনের সম্ভাবনা সৃষ্টিতে গবেষণা শুরু হয়েছে।

কৃষি শ্রমিক আব্দুর রাজ্জাক দুই বছর পূর্বে বিরি-৫১ জাতের ধান খেতের মধ্যে দুইটি ভিন্ন জাতের ধান দেখতে পেয়ে সেটা আলাদা বীজ হিসেবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেন। পরের বছর তিনি সেই বীজ থেকে চারা রোপণ এবং বীজের পরিমাণ কিছুটা বৃদ্ধি করেন। ৩য় বারের মতো এ বছরও তিনি আমন মৌসুমে ১৮ শতাংশ জমিতে ওই জাতের ধান চাষ করেন। ধান কাটার পর সেখান থেকে তিনি ১৫ মণের (৬০০ কেজি) কিছু বেশি ফলন পেয়েছেন। যা প্রচলিত উচ্চ ফলনশীল জাতের তুলনায় বিঘাপ্রতি ৪-৫ মণ বেশি বলে দাবি করেন আব্দুর রাজ্জাক। জাতটির শীষ খেজুর ছড়ার মতো দেখতে তাই তিনি এর নাম রেখেছেন খেজুর ছড়া বা খেজুর ঝুটি। জমির মালিক গৃহস্থ নজরুল ইসলাম দাবি করেন, অন্যান্য উচ্চ ফলনশীল জাতের তুলনায় সংগৃহীত ও সংরক্ষিত খেজুর ছড়া বীজ থেকে একই খরচে বিঘাপ্রতি ৪-৫ মণের বেশি ধান পাওয়া সম্ভব। কৃষক ভাইয়েরা একই খরচে বিঘাপ্রতি অতিরিক্ত ৪-৫ মণ ধান বেশি পেলে তাদের উৎপাদন খরচ সাশ্রয় হবে। তিনি সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই জাতটির বিস্তার লাভে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার আবেদন জানান। এলাকার চাষী সোহেল রানা বলেন, আমরা আলাদা ধরনের এই জাতটির ফলন চাক্ষুস দেখেছি। আমি ও বেশ কয়েকজন কৃষক অধিক উচ্চ ফলনশীল নতুন জাতের বীজটি সংগ্রহ করেছি রোপণের উদ্দেশ্যে। আসন্ন বোরো মৌসুমে এই জাতটি রোপণ করে দেখি কি ফল পাওয়া যায়। তিনি দাবি করেন জাতটি বছরের দুইটি মৌসুমেই লাগানো যাচ্ছে। কুমারখালী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ দেবাশীষ কুমার দাস বলেন, জাতটির মূল পার্থক্য হলো; সাধারণত অন্যান্য উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের শীষে প্রতি বোটায় যেখানে একটি করে ধান হয়। সেখানে সংগৃহীত নতুন এই জাতটির শীষে প্রতি একটি বোটার সঙ্গে ৩-৫টি করে ধান হতে দেখা গেছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জাতটির নমুনা বীজ সংগ্রহ করে ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শ্যামল কুমার বিশ্বাস বলেন, সংগৃহীত এই বীজের সঙ্গে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের যে সকল উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান রয়েছে সেগুলোর জিন সংযোজন করা সম্ভব হলে দেশে উচ্চ ফলনশীল ধান উৎপাদনে আরও একটি মাইল ফলক সৃষ্টি হবে বলে মনে করি। বীজটি ইতোমধ্যে গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। এর জাত নির্ণয় ও নতুন সংযোজনসহ উদ্ভাবিত বীজটি হতে পারে অধিক উচ্চ ফলনের সারা জাগানো একটি জাত। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, জাতটি ইতোমধ্যে গবেষণার জন্য ঢাকায় পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছি।

আমাদের বীজ ব্যাংকে বিদ্যমান ও প্রচলিত উচ্চ ফলনশীল জাতের সঙ্গে জিন সংযোজন করে আরও বেশি ফলন করা যায় কিনা তা দেখা হবে। কাক্সিক্ষত ফলাফল পেলে অবশ্যই এই জাতটি আরও একটি উচ্চ ফলনের দ্বার খুলে দেবে।



 

Show all comments
  • Abu Abdullah ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, ৬:৪০ পিএম says : 0
    MA SHAA ALLAH
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাফল্য


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ