Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাংলাফোনের অবৈধ ট্রান্সমিশন সেবা চিঠিতেই দায় সারছে বিটিআরসি

প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন : এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অবৈধ ট্রান্সমিশন ব্যবসা পরিচালনা করছে বাংলাফোন লিমিটেড। গত বছরের ২২ এপ্রিল লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো সেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।
দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ট্রান্সমিশন সেবা প্রদান করলেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। বারবার লাইসেন্সিং নীতিমালা ভঙ্গ এবং অবৈধ সেবা প্রদানের পর কেবল চিঠি দিয়েই সতর্ক করা হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে। অবৈধ ট্রান্সমিশন সেবা প্রদান করায় বাংলাফোনের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরিবর্তে সেবা গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে বিটিআরসি। ফেব্রুয়ারির পর সর্বশেষ গত সোমবারই চিঠি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে অবৈধ এনটিটিএন (ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক) সেবা প্রদান থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। একই সাথে অবৈধভাবে ট্রান্সমিশন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধেও টেলিযোগাযোগ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। বিটিআরসির লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের পরিচালক এম এ তালেব স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাফোন লিমিটেডের অনুকূলে ইস্যুকৃত পারমিটের মেয়াদ গত বছর ২২ এপ্রিল উত্তীর্ণ হওয়ায় পরবর্তীতে পারমিটের মেয়াদ বৃদ্ধি/নবায়ন করা হয়নি। তাছাড়া বাংলাফোনের কোনো এনটিটিএন লাইসেন্স নেই। এনটিটিএন লাইসেন্স সংশ্লিষ্ট গাইডলাইনের বিধান অনুযায়ী অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন এবং এ সংক্রান্ত সেবা শুধু কমিশন হতে এনটিটিএন লাইসেন্সপ্রাপ্ত অপারেটররা প্রদান করতে পারে। কমিশন হতে ইতোমধ্যে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল), বাংলাদেশ রেলওয়ে, ফাইবার অ্যাট হোম এবং সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেডকে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে বাংলাফোন লিমিটেড হতে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন সেবা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সেবা গ্রহণ করছে। বিটিআরসির ওই চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, বাংলাফোন লিমিটেড হতে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে এনটিটিএন সংশ্লিষ্ট লাইসেন্স/গাইডলাইনের শর্ত অনুযায়ী কমিশন হতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানসমূহের নিকট থেকে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন এবং সংশ্লিষ্ট সেবা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় অবৈধভাবে এনটিটিএন সেবা প্রদানকারী এবং উক্ত প্রতিষ্ঠান হতে সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের বিরুদ্ধে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিটিআরসির লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো: রাইসুল ইসলাম স্বাক্ষরিত অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন মোবাইল ফোন অপারেটরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস এক্সেস (বিডব্লিউএ), এনটিটিএন অপারেটর, ইন্টারন্যাশনাল টেরিসটোরিয়াল ক্যাবল (আইটিসি), ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) ও ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ (এনআইএক্স) অপারেটরদের চেয়ারম্যান/প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের পৃথকভাবে চিঠি দিয়ে একই নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বিটিআরসির লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক নাফিসা মল্লিক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এবং গত বছরের জুন মাসে বিটিআরসির লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্স বিভাগের উপ-পরিচালক সাজেদা পারভীন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে একইভাবে বলা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাফোনের অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন ‘অনুমতি’ (পারমিট) নবায়ন করেনি বিটিআরসি। ফলে প্রতিষ্ঠানটি আর এ সেবা দিতে পারবে না। বাংলাফোন থেকে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন সেবা গ্রহণকারী সব প্রতিষ্ঠানকে কমিশনের লাইসেন্সধারী নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা নিতে ওই চিঠিতেও বলে বিটিআরসি। ওই সময়ের চিঠিতে আরো বলা হয়, সরকার অনুমোদিত এনটিটিএন গাইডলাইন ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার গাইডলাইনের সঙ্গে বাংলাফোনের পারমিটের শর্ত সাংঘর্ষিক। এই পারমিটের আওতায় সব ধরনের বাণিজ্যিক ও অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য ওই চিঠিতে বাংলাফোনকে নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এই পারমিটের আওতায় অর্জিত রাজস্বের সাড়ে পাঁচ শতাংশ অর্থ বিস্তারিত তথ্যসহ কমিশনে জমা দেয়ার জন্যও নির্দেশ দেয় বিটিআরসি।
টেলিযোগাযোগের অবকাঠামোগত কাজে শৃঙ্খলা আনতে সরকার ২০০৯ সালে দু’টি প্রতিষ্ঠানকে এনটিটিএন লাইসেন্স দেয়। নীতিমালা অনুসারে এই লাইসেন্স ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণ, উন্নয়ন বা পরিচালনা করতে পারবে না। লাইসেন্স পেতে প্রতি প্রতিষ্ঠানকে এককালীন তিন কোটি টাকা এবং প্রতি বছর নবায়নের জন্য ২৫ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। এসব শর্তে লাইসেন্স নেয় ফাইবার অ্যাট হোম ও সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেড নামের দু’টি প্রতিষ্ঠান। অথচ লাইসেন্স ছাড়াই কেবল বিটিআরসির ‘অনুমতি’ নিয়ে লাইসেন্স নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মতোই কার্যক্রম চালিয়ে যায় বাংলাফোন। বাংলাফোনের অনুকূলে ২০০৯ সালে ইস্যু করা অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন ‘অনুমতি’ ছয় দফায় নবায়ন করে বিটিআরসি। গত বছর ২২ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাফোনের এই সেবা দেয়ার সুযোগ ছিল। টেলিযোগাযোগ আইনের ৪০ ধারা অনুসারে কোনো প্রতিষ্ঠান টেলিযোগাযোগ কার্যক্রম শুরু বা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিটিআরসি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেবে। কিন্তু বিটিআরসি বাংলাফোনের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেয়নি। লাইসেন্স পাওয়া দুই প্রতিষ্ঠান বাংলাফোনের এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করাসহ প্রতিকার চেয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠিও দেয়। মন্ত্রণালয় চিঠিতে বিটিআরসির এ কাজ বিধিসম্মত হয়নি উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু তারপরও বাংলাফোনের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান এবং কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কমিশন। বরং প্রতিবারই প্রতিষ্ঠানটির অবৈধ অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন সেবা বন্ধের জন্য চিঠি দিয়েই দায় সারছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাফোনের অবৈধ ট্রান্সমিশন সেবা চিঠিতেই দায় সারছে বিটিআরসি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ