Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

৬০ টাকা কেজির রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়

প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : কার্তিক মাস আসার আগেই রসুনের বাজারে কালো হাতের থাবা পড়েছে। ৬০ টাকা কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি দরে। বিগত একপক্ষকালে কেজিপ্রতি রসুনের মূল্য বেড়েছে ১২০ টাকা। অর্থাৎ রসুনের বাজার মূল্য ৩ গুণ বেড়ে গেছে। গত বছর একই সময়ে ৫০ টাকা কেজির রসুনের দাম বেড়ে বিক্রি হয়েছিল প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে। এরপর উৎপাদন মৌসুম পর্যন্ত রসুনের দাম আর হ্রাস পায়নি। উৎপাদন মৌসুমের ব্যাপক ফলনের কারণে ২০১৬ সালের বিগত ৮ মাস রসুনের মূল্য স্থিতিশীল ছিল। শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। দেশী রসুনের পর্যাপ্ত আমদানির কারণে চলতি বছর বিদেশী রসুন আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বড় আকৃতির বিদেশী রসুনের দাম বেড়ে ২০০ টাকার ওপরে চলে যায়। কিন্তু এরপরও দেশী রসুনের দাম বাড়েনি। গত একপক্ষকালাধিক আগে হঠাৎ করে দেশী রসুনের দাম বাড়তে শুরু করে। বর্তমানে এক কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি এবং বিদেশী রসুন বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি দরে।
বাজারে দেশী রসুনের ব্যাপক আমদানি থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ এই অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি সম্পর্কে খুচরা বিক্রেতারা জানান, কি কারণে দাম বেড়েছে তা তারা বলতে পারেন না। আড়তদাররা রসুনের মূল্য বৃদ্ধি করে দিয়েছে। বাড়তি মূল্যে তারা কিনে আনছে এবং বাড়তি মূল্যে বিক্রি করছে। তবে সচেতন সৎ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতিবছরই কার্তিক মাস এলে সিন্ডিকেট রসুন, পিঁয়াজ, আদাসহ বিভিন্ন গরম মসলার দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। গত বছরের ধারাবাহিকতায় এবছরও তারা ভাদ্র মাস থেকে রসুনের বাজারে হাত দিয়েছে। বাজারে রসুনের পর্যাপ্ত আমদানি থাকা সত্ত্বেও তারা চাটাইতে বিক্রি করছে চড়া দামে। বাধ্য হয়েই চাটাইয়ে খুচরা বিক্রেতারা ঊর্ধ্ব মূল্যে রসুন বিক্রি করছে।
বেসরকারি হিসাব মতে, নরসিংদীসহ দেশে কমবেশি ১০ লাখ টন রসুনের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ৭ লাখ টন রসুন ব্যবহৃত হয় পারিবারিক রান্নাবান্নায়। বাকি ৩ লাখ মেট্রিক টন রসুন ব্যবহৃত হয় ওষুধ, আচারসহ বিবিধ ক্ষেত্রে। কিন্তু দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ২ থেকে ৩ লাখ টন। রসুনের ঘাটতি পূরণ করা হয় চীন, মিয়ানমার, ভারত, ভুটান ও পাকিস্তান থেকে। গত বছর নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রসুনের ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। যার কারণে বাজারে এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণ দেশী রসুন রয়েছে। উৎপাদন মৌসুম থেকে শুরু করে চলতি বছরের আগস্ট মাসের প্রথম দিক পর্যন্ত দেশী রসুন বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। পক্ষান্তরে চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত বড় আকারের রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি দরে। আমদানিকৃত রসুনের মূল্য বেশি থাকায় সাধারণ ক্রেতারা দেশী রসুনই ব্যবহার করছে বেশি।
গত এক পক্ষকালে রসুনের কেজিপ্রতি মূল্য বেড়েছে ১২০ টাকা। শহরে খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি ১৮০ টাকা দরে এবং গ্রামাঞ্চলে ২০০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি করছে রসুন। চাষিরা জানিয়েছেন, উৎপাদন মৌসুমে রসুনের দাম ৪০ টাকা কেজিতে নেমে এসেছিল।
এরপর উৎপাদন মৌসুম শেষ হবার পর দাম আস্তে আস্তে বেড়ে ৬০ টাকায় গিয়ে স্থিতাবস্থায় থাকে। চাষিদের হিসাব অনুযায়ী কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত দেশী রসুনের চাহিদা পূরণের কথা। কিন্তু হঠাৎ করে রসুনের মূল্য বৃদ্ধি প্রমাণ করে মসলা সিন্ডিকেটের কারসাজিতেই রসুনের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা বাজার থেকে রসুন কিনে গোপন মজুদাগারে জমা করছে। ঈদের সময় তারা এ রসুন ঊর্ধ্ব মূল্যে চাটাইয়ে দিয়ে মোটা অংকের টাকা মনোপলি ব্যবসা করবে। এখন থেকেই মসলা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে রসুনের মূল্য আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাবার আশঙ্কা করছেন সচেতন ক্রেতাসাধারণ।





 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ৬০ টাকা কেজির রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ